নাসুম আহমেদের শেষের বীরত্বে রোমাঞ্চকর জয়ে শিরোপার ফয়সালা শেষ ম্যাচে নিতে পারল মোহামেডান, যেখানে লড়াই হবে আবাহনীর সঙ্গে।
Published : 26 Apr 2025, 05:45 PM
রোমাঞ্চের ভেলায় চড়ে শেষ ওভারে গড়াল ম্যাচ। ৬ বলে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের প্রয়োজন ছিল ১২ রান। প্রথম বল ডট খেলে সাইফ উদ্দিন দ্বিতীয় ডেলিভারিতে নিলেন সিঙ্গেল। স্ট্রাইকে গিয়েই চার মেরে আশা জোরাল করলেন নাসুম আহমেদ। পরেরটিতে হলো না রান। আবারও জাগে শঙ্কা। শেষ ২ বলে ৭ রানের সমীকরণে এবার ছক্কা মেরে দিলেন নাসুম। আর পরের বলে মিড-অনে ঠেলে জয়সূচক রান পূর্ণ করে দুই হাত দুইদিকে মেলে যেন উড়াল দিতে চাইলেন তিনি।
বাউন্ডারি লাইনের বাইরে থেকে মোহামেডানের সবাই এক ছুটে জড়ো হলেন নাসুমের পাশে। জয়ের নায়ককে ঘিরে চলল উল্লাস। দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে ম্যাচটি জিতিয়ে মোহামেডানের ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা জয়ের আশা যে বাঁচিয়ে রাখলেন তিনি।
শের-ই-বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শনিবার উত্তেজনায় ঠাসা সুপার লিগের ম্যাচে গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সকে ৪ উইকেটে হারায় মোহামেডান। প্রতিপক্ষের ২৩৬ রান ম্যাচের শেষ বলে পার করে তারা।
মোহামেডান ম্যাচটি হারলেই চ্যাম্পিয়ন হয়ে যেত আবাহনী। এখন প্রতিযোগিতার শিরোপা নির্ধারণ হবে দুই দলের মুখোমুখি লড়াইয়ে, আগামী মঙ্গলবার শেষ রাউন্ডে।
লিগে ১৫ ম্যাচে মোট ২৬ পয়েন্ট আবাহনীর। সমান ম্যাচে ২৪ পয়েন্ট মোহামেডানের। শেষ রাউন্ডে জয়ী দলই করবে শিরোপা উল্লাস।
রান তাড়ায় ৪৭তম ওভারের দ্বিতীয় বলে অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ বিদায় নিলে মোহামেডান শিবিরে জেঁকে বসে শঙ্কা। তখন ২২ বলে ৩৩ রান দরকার ছিল দলটির। নাসুম ও সাইফ মিলে ১০ বলে নিতে পারেন ১০ রান।
১২ বলে ২৩ রানের প্রয়োজনে ৪৯তম ওভারে সাইফ চার মারার পর নাসুমের ছক্কায় শেষ ওভারের সমীকরণটা আরেকটু সহজ হয়। এরপর নাসুমের ব্যাটে সেই ঝলক।
২ ছক্কা ও ১ চারে ১৩ বলে অপরাজিত ২১ রান করেন নাসুম। ম্যাচ সেরার পুরস্কার অবশ্য ওঠে সাইফের হাতে। ২ চারে গুরুত্বপূর্ণ ৩০ রান করার আগে ৪২ রানে ৩ উইকেট নেন তিনি।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টের দলে ডাক পাওয়ায় এই ম্যাচে ছন্দে থাকা এনামুল হককে পায়নি গাজী গ্রুপ। অধিনায়কের অনুপস্থিতিতে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা দলকে ভালো শুরু এনে দেন মুনিম শাহরিয়ার।
সাদিকুর রহমান ১ ছক্কা ও ৩ চারে ২৬ রান করে বিদায় নেন। তবে দারুণ ব্যাটিংয়ে দলকে টানেন মুনিম। ৬৫ বলে ফিফটি করা ওপেনার ২ ছক্কা ও ১০ চারে খেলেন ৮২ বলে ৮০ রানের ইনিংস।
তাহজিবুল ইসলাম ও শেখ পারভেজ ভালো শুরু পেলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি। ত্রিশ পার করে বিদায় নেন দুইজনই। এরপর আর কেউ তেমন কিছু করতে না পারায় আড়াইশও হয়নি দলটির রান।
সাইফের মতো ৩ উইকেট নেন মুস্তাফিজুর রহমানও, ৪৬ রান খরচায়। দুটি প্রাপ্তি নাবিল সামাদের।
রান তাড়ায় ৪০ রানে ২ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় মোহামেডান। আগের দিনের নানা ঘটনায় নিষেধাজ্ঞার শাস্তি এক বছরের জন্য স্থগিত হওয়ায় ম্যাচটি খেলার সুযোগ পান অধিনায়ক তাওহিদ হৃদয়। শূন্য রানে অল্পের জন্য তিনি বেঁচে যান রান আউট হওয়া থেকে। ৪ রানে ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যান একবার।
দুই দফায় জীবন পাওয়া হৃদয়কে নিয়ে দলকে টানেন রনি তালুকদার। তাদের ৭৫ রানের জুটি ভাঙে ৭ চারে ৫৫ রান করা রনির বিদায়ে। কয়েক ওভার পর বিদায় নেন হৃদয়ও (৩ চারে ৩৭)। ক্যাচ দিয়ে শূন্য রানে বেঁচে যাওয়া আরিফুল ইসলাম ১ রানে কাটা পড়েন রান আউট হয়ে।
এক প্রান্ত ধরে রেখে ১ ছক্কা ও ৫ চারে ৬২ বলে ৪৯ রান করেন মাহমুদউল্লাহ। এরপর নাসুম ও সাইফের ৩৩ রানের অবিচ্ছিন্ন সেই জুটি, আর মোহামেডানের জয়।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স: ৪৯.৪ ওভারে ২৩৬ (মুনিম ৮০, সাদিকুর ২৬, শামসুর ৮, ওয়াসি ২২, সালমান ১৩, তাহজিবুল ৩২, পারভেজ ৩৩, শামিম ১২, আব্দুল গাফফার ০, আবু হাসিম ১, সোহেল ২*; এবাদত ৯-০-৪৭-০, মুস্তাফিজ ১০-২-৪৬-৩, সাইফ ৯.৪-০-৪২-৩, নাসুম ৮-০-২২-০, নাবিল ৯-০-৫৩-২, মাহমুদউল্লাহ ৪-০-২১-১)
মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব: ৫০ ওভারে ৩২৭/৬ (রনি ৫৫, আনিসুল ২, তৌফিক ১৪, হৃদয় ৩৭, মাহমুদউল্লাহ ৪৯, আরিফুল ১, সাইফ ৩০*, নাসুম ২১*; আবু হাসিম ১০-১-৩১-০, সোহেল ৬-০-৩১-১, শামিম ৯-০-২৯-২, আব্দুল গাফফার ৭-০-৪০-০, ওয়াসি ৮-০-৪৫-২, পারভেজ ১০-০-৪৯-০)
ফল: মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব ৬ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: সাইফ উদ্দিন
আবাহনীর দাপুটে জয়
বিকেএসপির ৪ নম্বর মাঠে লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জকে পাত্তাই দেয়নি আবাহনী। মোসাদ্দেক হোসেনের চমৎকার বোলিংয়ের পর পারভেজ হোসেন ও জিশান আলমের ফিফটিতে ৭ উইকেটের জয় তুলে নেয় তারা।
টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ২২৫ রান করে রূপগঞ্জ। তাদের সেই রান ৭৫ বল বাকি থাকতে পেরিয়ে যায় যায় আবাহনী।
প্রতিপক্ষকে অল্পতে আটকে জয়ের ভিত গড়ে দেওয়া মোসাদ্দেক ৪১ রানে নেন ৪ উইকেট। সমান রান খরচায় রকিবুল ধরেন ৩ শিকার।
রান তাড়ায় ১ ছক্কা ও ৮ চারে ৭৩ রান করেন পারভেজ। চারটি করে ছক্কা-চারে ৬৩ রান রান আসে জিশানের ব্যাট থেকে।
২২ রানে ২ উইকেট হারিয়ে শুরুতে চাপে পড়ে যায় রূপগঞ্জ। তানজিদ হাসানকে এলবিডব্লিউ করা মোসাদ্দেক দুই অঙ্কে যেতে দেননি আগের দিনের সেঞ্চুরিয়ান সৌম্য সরকারকে।
ভালো শুরু পাওয়া সাইফ হাসান ২ ছক্কা ও ৩ চারে ২৮ রান করে ফেরেন। পরের ওভারেই আফিফ হোসেনের স্টাম্প ভেঙে দেন মোসাদ্দেক। জমে ওঠা আকবর আলি ও মেহেদি মারুফের ৫০ রানের জুটিতেও ফাটল ধরান মোসাদ্দেক, ২ ছক্কা ও ৩ চারে ৩৫ রান করা আকবরকে বোল্ড করে।
অনেকটা সময় উইকেটে কাটিয়ে ৮৮ বলে ৪৮ রান করেন মারুফ। এরপর রূপগঞ্জের রান বাড়ে চৌধুরি মোহাম্মদ রিজওয়ান ও শরিফুলের ইসলামের ব্যাটে। ৪টি ছক্কা ও ১ চারে ৪৭ বলে ৪০ রান করেন রিজওয়ান। সমান বাউন্ডারিতে ২৩ বলে ৩৪ রান করে অপরাজিত থাকেন শরিফুল।
রান তাড়ায় শাহরিয়ার কমলের ব্যাটে আগ্রাসী শুরু পায় আবাহনী। তিনটি করে ছক্কা-চারে ২০ বলে ৩২ রান করেন আগের ম্যাচে দুই রানের জন্য সেঞ্চুরি না পাওয়া ওপেনার। তার বিদায়ে ভাঙে ৪৪ রানের উদ্বোধনী জুটি।
পরে আরেক ওপেনার পারভেজ সঙ্গে জিশানের ১১৩ রানের জুটিতে জয়ের পথ সহজ হয়ে যায় আবাহনীর। ৬৬ বলে ফিফটি করেন পারভেজ, জিশানের পঞ্চাশ আসে ৬১ বলে। চার ওভারের মধ্যে বিদায় নেন দুই থিতু ব্যাটসম্যান।
এরপর অবিচ্ছিন্ন ৪৭ রানের যুগলবন্দীতে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন মোহাম্মদ মিঠুন ও মেহরব হাসান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জ: ৫০ ওভারে ২২৫/৯ (সাইফ ২৮, তানজিদ ৪, সৌম্য ২, মারুফ ৪৮, আফিফ ১, আকবর ৩৫, রিজওয়ান ৪০, মেহেদি ১৬, শরিফুল ৩৪*, টিপু ২, স্বাধীন ১*; রিপন ৩-০-২৪-১, মোসাদ্দেক ১০-১-৪১-৪, মেহরব ১০-২-৩০-০, মাহফুজুর ১০-১-৪৫-১, রকিবুল ১০-১-৪১-৩, জিশান ৭-০-৪৩-০)
আবাহনী লিমিটেড: ৩৭.৩ ওভারে ২২৬/৩ (শাহরিয়ার ৩২, পারভেজ ৭৩, জিশান ৬৩, মেহরব ২৪*, মিঠুন ২৯*; শরিফুল ২-০-১২-০, মেহেদি ৭-০-৫০-১, টিপু ৮-০-৩৯-০, সাইফ ৭-০-৬৬-১, স্বাধীন ১০-০-৩৬-১, সৌম্য ২-০-১২-০, রিজওয়ান ১.৩-০-১০-০)
ফল: আবাহনী ৭ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: মোসাদ্দেক হোসেন
ইমরানউজ্জামানের প্রথম সেঞ্চুরিতে অগ্রণী ব্যাংকের বড় জয়
বিকেএসপির তিন নম্বর মাঠে ব্যাট হাতে আলো ছড়ান ইমরানউজ্জামান। পেশাদার ক্যারিয়ারে প্রথম সেঞ্চুরি উপহার দেন তিনি। তার ইনিংসের সৌজন্যে বিশাল সংগ্রহ গড়ে গুলশান ক্রিকেট ক্লাবকে বড় ব্যবধানে হারায় অগ্রণী ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব।
সুপার লিগের ম্যাচটিতে অগ্রণী ব্যাংকের জয় ১৩৭ রানে। ৩৪০ রানের পুঁজি গড়ে প্রতিপক্ষকে তারা গুটিয়ে দেয় ২০৩ রানে।
দলটির জয়ের কারিগর ইমরান ২ ছক্কা ও ১৭ চারে ১০৮ বলে খেলেন ১২৩ রানের দুর্দান্ত ইনিংস। ৬০ রান করতে তাইবুর রহমান মারেন এক ছক্কা ও ৫টি চার। আর ৫ ছক্কা ও ২ চারে ২৯ বলে ৫৯ রানের খুনে ইনিংস খেলেন প্রিতম কুমার।
বিশাল রান তাড়ায় গুলশানের কয়েকজন ভালো শুরু পেলেও খেলতে পারেননি বড় ইনিংস। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারানো দলটির হয়ে সর্বোচ্চ ৫৯ রান করেন শাকিল হোসেন। ১ ছক্কা ও ৪টি চারে ৪৯ রান আসে নিহাদের ব্যাট থেকে।
অগ্রণী ব্যাংকের হয়ে চমৎকার বোলিংয়ে ক্যারিয়ারে প্রথমবার পাঁচ উইকেটের স্বাদ পান সাদিপ রয়। ৩৫ রান খরচায় ৫ শিকার ধরেন এই পেসার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
অগ্রণী ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব: ৫০ ওভারে ৩৪০/৭ (ইমরানউজ্জামান ১২৩, অমিত ৪২, ইমরুল ১৩, মার্শাল ৩, তাইবুর ৬০, শুভাগত ৮, প্রিতম ৫৯, রকিবুল ১৯*; রায়হান ৬-০-৫০-০, নিহাদ ১০-০-৬৮-২, অনিল ৩-০-২১-০, মইনুল ৭-০-৫৪-৩, রনি ৯-০-৭৬-০, শাহাদাত ১০-১-৪১-০, খালিদ ৫-০-২৬-২)
গুলশান ক্রিকেট ক্লাব: ৪৬.৫ ওভারে ২০৩ (আলিফ ৬, হাবিবুর ৩৯, খালিদ ১, সাকিব ১৫, শাকিল ৫৯, শাহাদাত ৩, নিহাদ ৪৯, মইনুল ১৮*, অনিল ০, রায়হান ০, রনি ০; রবিউল ৫-০-৩০-০, সন্দিপ ৯.৫-১-৩৫-৫, আরিফ ৯-০-৩৭-০, শুভাগত ১০-০-৪৬-২, তাইবুর ১০-০-২৯-২, জাহিদ ৩-০-১৯-০)
ফল: অগ্রণী ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব ১৩৭ রান জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: ইমরানউজ্জামান