৩৩ বলে ৮২ রানের ইনিংসে ঢাকা ক্যাপিটালসকে লড়াইয়ের পুঁজি এনে দেন সাব্বির রহমান, সম্মিলিত ব্যাটিং পারফরম্যান্সে ম্যাচ জিতে নেয় চিটাগং কিংস।
Published : 09 Jan 2025, 10:56 PM
ধুঁকতে থাকা ঢাকা ক্যাপিটালসকে আশার আলো দেখালেন সাব্বির রহমান। একের পর এক ছক্কায় এনে দিলেন লড়াইয়ের পুঁজি। কিন্তু শিশিরের কারণে প্রথম ইনিংসেই বোলারদের কাজ ছিল কঠিন। দ্বিতীয় ইনিংসে তো শিশির আরও বেশি! সংশয়ই তাই সত্যি হলো। উসমান খানের ফিফটির পর শামীম হোসেনের ঝড়ো ফিনিশিংয়ে জিতল চিটাগং কিংস।
হারের বৃত্তে ঘুরপাক খেতে থাকা ঢাকা এবার পেল পঞ্চম পরাজয়ের স্বাদ। ৭ উইকেটে হারিয়ে তিন ম্যাচে দ্বিতীয় জয় পেল চিটাগং।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার সাব্বিরের ৩৩ বলে ৮২ রানের ইনিংসে ১৭৭ রান করে ঢাকা। রান তাড়ায় উসমানের ৩৩ বলে ৫৫ কিছুটা চাপে পড়ে যায় চিটাগং। তবে ১৪ বলে ৩০ রানের ইনিংস খেলে সব শঙ্কা উড়িয়ে দেন শামীম।
ঢাকার একাদশে নেই লিটন
পরপর তিন ম্যাচে দুই অঙ্ক ছুঁতে ব্যর্থ হওয়া লিটন কুমার দাসকে একাদশ থেকে বাদ দেয় ঢাকা। সব মিলিয়ে একাদশে তারা পরিবর্তন করে ৪টি।
ফের ব্যর্থ জেসন রয়
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই ড্রেসিং রুমে ফেরেন জেসন রয়। দ্বিতীয় ওভারে আলিস আল ইসলামের বলে দারুণ স্টাম্পিং করেন মোহাম্মদ মিঠুন। ৩ বলে ১ রান করতে পারেন ইংলিশ ওপেনার। আগের ম্যাচে ১২ বলে ১৮ রান করেছিলেন তিনি।
তানজিদের লড়াই, মন্থর এসকিনাজি-শাহাদাত
তৃতীয় ওভারে শরিফুল ইসলামের বলে ম্যাচের প্রথম ছক্কা মারেন তানজিদ হাসান। পরের ওভারে সৈয়দ খালেদ আহমেদের বলে তিনি মারেন বাউন্ডারি। পঞ্চম ওভারে আলিসের বলেও চার মারেন বাঁহাতি ওপেনার।
পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে আরাফাত সানির বলে চার-ছক্কা মারেন তিনি। কিন্তু একদমই ছন্দ পাননি এসকিনাজি। অষ্টম ওভারে তাকে বোল্ড করেন খালেদ। ৫ রান করতে ১৫ বল খেলেন স্কটিশ ব্যাটসম্যান।
চার নম্বরে নেমে শাহাদাত হোসেনও কিছু করতে পারেননি। খালেদের পরের ওভারে ফেরার আগে ১০ বলে ৯ রান করেন তিনি।
হঠাৎ পিছিয়ে পড়া
ক্রিজে গিয়ে শুরুতে কিছুটা সময় নেন সাব্বির রহমান। তানজিদও তখন খোলসবন্দী হয়ে পড়েন। নবম ওভার থেকে চতুর্দশ ওভার পর্যন্ত টানা ২৯ বলে হয়নি বাউন্ডারি। রান রেটও তখন নেমে যায় ছয়ের নিচে।
চতুর্দশ ওভারে শরিফুলের বলে বাউন্ডারি মেরে পঞ্চাশ পূর্ণ করেন তানজিদ ৪২ বলে। একই ওভারে নিজের প্রথম ছক্কা মারেন সাব্বির। ১৪ ওভারে ঢাকার সংগ্রহ দাঁড়ায় ৩ উইকেটে ৮৮ রান।
সাব্বিরের শেষের ঝড়
শরিফুলকে মারা ছক্কায় যেন ছন্দ পেয়ে যান প্রথম ৯ বলে ৪ রান করা সাব্বির। আরাফাত সানির বল চারের পর দুটি ছক্কায় ওড়ান তিনি। ওভারের শেষ বলে ডিপ মিড উইকেট দিয়ে মারেন আরেকটি ছক্কা।
ষোড়শ ওভারে স্পেল শেষ করতে আসা আলিসের বলে লং অফ ও লং অন দিয়ে দুটি ছক্কা মারেন সাব্বির। পরের ওভারের প্রথম বলে এক রান নিয়ে মাত্র ২২ বলে পঞ্চাশে পৌঁছে যান তিনি। বিপিএলে তার সবশেষ ফিফটি ছিল ২০২০ সালের জানুয়ারিতে।
মোহাম্মদ ওয়াসিমের বলে বড় শটের খোঁজে মিড অফে ধরা পড়েন তানজিদ, ৪৭ বলে ৫৪ রান। তার বিদায়ে ভাঙে ৩৫ বলে ৬৩ রানের জুটি। যেখানে তানজিদের অবদান ১৩ বলে ১১ রান।
ওই ওভারের চতুর্থ বল ছক্কায় ওড়ান সাব্বির। পরের বলে এক্সট্রা কভার দিয়ে মারেন দৃষ্টিনন্দন এক ছক্কা। ওভারের শেষ বল চমৎকার পুল শটে বাউন্ডারিতে পাঠান তিনি।
পরের ওভারে থিসারা পেরেরাকে থামান খালেদ। এক বল পর সাব্বিরও ফিরতে পারতেন। কিন্তু মিড অফে সহজ ক্যাচ ছেড়ে দেন শরিফুল। সাব্বিরে রান তখন ৬৬। পরে শরিফুলের বলেই ছক্কা-চার মেরে চিটাগংয়ের হতাশা বাড়ান তিনি।
সব মিলিয়ে শেষ ৭ ওভারে ১০৩ রান করে ঢাকা। যেখানে সাব্বিরের একার অবদান ২৪ বলে ৭৮ রান।
৩৩ বলের ইনিংসে ৩ চারের সঙ্গে ৯টি ছক্কা মারেন সাব্বির। বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে বিপিএলে এক ইনিংসে এর চেয়ে বেশি ছক্কা রয়েছে শুধু তামিম ইকবালের (১১টি)।
চমৎকার খালেদ, খরুচে শরিফুল
শুরুতে নতুন বলে, পরে ডেথ ওভারে দারুণ বোলিং করেন সৈয়দ খালেদ আহমেদ। সাব্বিরের তাণ্ডব সামলে ৪ ওভারে মাত্র ২১ রানে ৩ উইকেট নেন তিনি।
এছাড়া আলিস আল ইসলাম ২৫ রানে নেন ১ উইকেট। খরুচে ছিলেন শরিফুল ইসলাম, ৪ ওভারে ৩৯ রান। আরাফাত সানি আর মোহাম্মদ ওয়াসিম দেন চল্লিশের বেশি রান।
উদ্বোধনী জুটিতে ভালো শুরু
রান তাড়ায় ইতিবাচক শুরু করেন উসমান খান ও পারভেজ হোসেন। পাওয়ার প্লেতে ৫৫ রান করে চিটাগং।
তবে দুইজনের ব্যাটিং ছিল দুইরকম। পারভেজ পারেননি টি-টোয়েন্টির দাবি মেটাতে। আরেকপ্রান্তে চার-ছক্কায় দ্রুত রান বাড়ান উসমান।
সপ্তম ওভারে আক্রমণে এসে জুটি ভাঙেন শাফি। প্রথম বলেই কট বিহাইন্ড হন ১৬ বলে ১৭ রান করা পারভেজ।
ক্লার্কের সঙ্গে উসমানের জুটি
পারভেজের বিদায়ের পর গ্রাহাম ক্লার্ককে নিয়ে আরেকটি পঞ্চাশছোঁয়া জুটি গড়েন উসমান। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে দুজন মিলে যোগ করেন ৩০ বলে ৫১ রান।
অষ্টম ওভারে নাজমুলের পরপর দুই বল ছক্কায় উড়িয়ে মাত্র ২৫ বলে টানা দ্বিতীয় ফিফটি স্পর্শ করেন উসমান। এক ওভার পর পেরেরার বলে চারের পর ছক্কায় ওড়ান ক্লার্ক। পরের ওভারে শাফির বলে তার ব্যাট থেকে আসে দুটি চার।
দ্বাদশ ওভারে আক্রমণে ফিরে জুটি ভাঙেন মুস্তাফিজ। ডিপ পয়েন্ট সীমানায় উসমানের চমৎকার ক্যাচ নেন নাজমুল। ৭ চারের সঙ্গে ৩ ছক্ক্য ৩৩ বলে ৫৫ রান করেন উসমান।
মোসাদ্দেকের স্পিনে ঢাকার ফেরা
উসমানের বিদায়ের পর ক্লার্কও কিছুটা ঝিমিয়ে পড়েন। চার নম্বরে নেমে মোহাম্মদ মিঠুন অবশ্য চেষ্টা করেন রানের চাকা সচল রাখতে। কিন্তু তৃতীয় উইকেট জুটিতে রান সে অর্থে বাড়েনি। দুজন মিলে ৩৩ বলে যোগ করেন ৩৮ রান।
চতুর্দশ ওভারে পেরেরার প্রথম বলে ছক্কা মারেন মিঠুন, শেষ বলে আসে বাউন্ডারি। পরের ওভারে বোলিংয়ে এসে মাত্র ৪ রান খরচ করেন মোসাদ্দেক হোসেন। পরে শাফির বলে স্কয়ার লেগ দিয়ে ছক্কা মেরে রানের চাপ সরানোর চেষ্টা করেন কিংস অধিনায়ক।
মোসাদ্দেকের পরের ওভারে বড় শটের খোঁজে ফাইন লেগে ধরা পড়েন ক্লার্ক। ৪ চার ও ১ ছক্কায় ৩২ বলে তিনি করেন ৩৯ রান। ওই ওভারেও ৪ রান দেন মোসাদ্দেক।
শামীমের চমৎকার ফিনিশিং
২০ বলে ৩৪ রান বাকি থাকতে ক্রিজে যান শামীম। প্রথম তিন ওভারে মাত্র ১৩ রান দেওয়া মুস্তাফিজের বলে তিনি মারেন দুটি চার। ১৯তম ওভারে মোসাদ্দেকের বলে ছক্কার পর দুটি চার মেরে সমীকরণ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নামিয়ে আনেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।
পরে শেষ ওভারে মুকিদুলের বলে মিঠুনের ব্যাটের কানায় লাগা বাউন্ডারিতে ম্যাচ জিতে যায় চিটাগং।
৪ চার ও ১ ছক্কায় ১৪ বলে ৩০ রানে করেন শামীম। ২টি করে চার-ছক্কায় ২২ বলে ৩৩ রানে অপরাজিত থাকেন মিঠুন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ঢাকা ক্যাপিটালস: ২০ ওভারে ১৭৭/৫ (জেসন রয় ১, তানজিদ ৫৪, এসকিনাজি ৫, শাহাদাত ৯, সাব্বির ৮২*, পেরেরা ১, শাফি ১০*; শরিফুল ৪-০-৩৯-০, আলিস ৪-০-২৫-১, খালেদ ৪-০-২১-৩, সানি ৪-০-৪৫-০, ওয়াসিম ৪-০-৪২-১)
চিটাগং কিংস: ১৯.৩ ওভারে ১৮০/৩ (পারভেজ ১৭, উসমান ৫৫, ক্লার্ক ৩৯, মিঠুন ৩৩, শামীম ৩০*; মুকিদুল ৩.৩-০-৩৩-০, মুস্তাফিজ ৪-০-২৩-১, নাজমুল ৩-০-৩৮-০, শাফি ৪-০-৩০-১, পেরেরা ২-০-৩০-০, মোসাদ্দেক ৩-০-২৬-১)
ফল: চিটাগং কিংস ৭ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: সৈয়দ খালেদ আহমেদ