Published : 20 Jan 2025, 06:54 PM
ক্রিজে দাঁড়িয়ে দাভিদ মালানের দিকে হতাশ ভঙ্গিতে তাকালেন তামিম ইকবাল। পরমুহূর্তেই ঘুরে হাঁটা ধরলেন ড্রেসিং রুমের পথে। কয়েক মুহূর্ত পর টিভির পর্দায় দেখা গেল, কারও সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় করছেন মালান। ব্যস! তামিমের অভিব্যক্তি ও মালানের প্রতিক্রিয়া এক সুতোয় গেঁথে শুরু হলো আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। অথচ ফরচুন বরিশালের ইংলিশ ব্যাটসম্যান বললেন, তামিমের সঙ্গে তার কিছুই হয়নি।
জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে রোববার চিটাগং কিংসের বিপক্ষে মালানের অপরাজিত ফিফটিতে ৬ উইকেটের সহজ জয় পায় বরিশাল। ১২২ রান তাড়ায় চতুর্থ ওভারে মালানের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হয়ে যান তামিম। ঘটনার পর থেকেই তা সামাজিক মাধ্যম ও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে আলোচনার কেন্দ্রে।
চলতি বিপিএলে এর আগে রংপুর রাইডার্সের অ্যালেক্স হেলসের সঙ্গে এক দফায় বচসা হয় তামিমের। পরে ঢাকা ক্যাপিটালসের সাব্বির রহমানকে উদ্দেশ্য করে বরিশাল অধিনায়কের কিছু বিতর্কিত কথা ধরা পড়ে স্টাম্প মাইকে। সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার খোরাক জোগায় এটিও।
এবার মালানের সঙ্গে ঘটনায় বলাবলি হতে থাকে, সতীর্থের সঙ্গেও ঝামেলা পাকিয়েছেন তামিম। তবে সোমবার টিম হোটেলে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে এসব রসাল আলোচনা উড়িয়ে দেন মালান। ইংলিশ ব্যাটসম্যান জানান, তিনি ওভাবে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছিলেন চিটাগং কিংসের একজনের দিকে।
“প্রথমত, রান আউট হয়ে গেলে হতাশ হওয়াই স্বাভাবিক। রান আউটের ওই ঘটনার পর প্রতিপক্ষের একজনের মনে হলো, আমার সামনে এসে গোটা দুই কথা শুনিয়ে দেওয়া উচিত! আমিও তাকে শুনিয়ে দিলাম, তার মন্তব্য শুনে আমার কী মনে হয়েছে।”
“তবে মনে হচ্ছে, সামাজিক মাধ্যম বা সংবাদমাধ্যম সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে যে, আমি তামিমের দিকে তেড়ে যাচ্ছিলাম। এটা পুরোপুরি অসত্য। আমি নিশ্চিত, তাদের (চিটাগং কিংস)পুরো দলকেই জিজ্ঞেস করতে পারেন যে কী হয়েছিল। কারণ আমি তাদের দলীয় বৃত্তের মধ্যেই ছিলাম তখন।”
প্রতিপক্ষের ওই ক্রিকেটার কে ছিলেন, তা নির্দিষ্ট করতে বলতে রাজি নন মালান।
“অন্য কারও ব্যাপারে বলতে এখানে আসিনি। মাঠে যা হয়েছে, মাঠে শেষ হয়ে গেছে। তাই প্রতিপক্ষের কোন ক্রিকেটার ছিল, সেটা বিষয় নয়। পুরোটা আমি ও ওই নির্দিষ্ট ক্রিকেটারের ব্যাপার। ম্যাচ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এটি শেষ হয়ে গেছে।”
সত্যটা না জেনেই সামাজিক মাধ্যম ও সংবাদমাধ্যমে নানান চটকদার খবরে বিস্ময় প্রকাশ করে ঘটনা আবার তুলে ধরেন তিনি।
“আমি ও তামিম পরস্পরকে একটি শব্দও বলিনি। আমি হাত তুলে তার কাছে দুঃখপ্রকাশ করেছি এবং তামিমও ঘুরে হাঁটা ধরেছে। এরপর আমার সঙ্গে অন্য এক ক্রিকেটারের লেগে যায়, যে নিজে আমার সঙ্গে লেগেছিল। এরপর এখন আমি আপনাদের সামনে দাঁড়িয়ে সংবাদ সম্মেলন করছি!”
“আমার ও তামিমের মধ্যে কোনো সমস্যাই ছিল না। দুজন একটি শব্দও বলিনি এবং রাগও হইনি।”
ব্যাপারটি ভুলভাবে উপস্থাপনের জন্য তিনি দায় দেন সংবাদমাধ্যমকে।
“মিডিয়া গল্প বানাতে পছন্দ করে এবং আমার মনে হয়, তামিম সম্পৃক্ত থাকা মানেই বাড়তি আকর্ষণ। লোকে তাকে দোষ দিয়ে মজা পায়।”
“বাংলাদেশে সে অনেক বড় এক নাম এবং দেশের একজন নায়ক। তাকে নিয়ে যে কোনো কিছুই তাই খবরের শিরোনাম হয় এবং এটাই সংবাদপত্র ও সংবাদমাধ্যম চায়। তারা চায় ক্লিক, শিরোনাম, চায় লোকে যেন খবরটি পড়ে, স্ক্যান্ডাল তৈরি করতে চায়। আবারও বলছি, আমি স্রেফ যেটা করেছি, তা হলে তামিমের দিকে হাত উঁচিয়ে ধরা। আর কোনো কথা হয়নি।”
এর আগে সামাজিক মাধ্যমে তামিমও জানান, মালানের সঙ্গে মাঠে কিছুই হয়নি তার।
“অনেকেই আমাকে জিজ্ঞেস করছেন, মাঠে দাভিদ মালানের সঙ্গে কিছু হয়েছিল কিনা। এটা নিয়ে নাকি অনেক আলোচনা হচ্ছে। অথচ আমার সঙ্গে মালানের কিছুই হয়নি। মালান তো ওভাবে জবাব দিচ্ছিল প্রতিপক্ষের একজনকে!”
তামিমও ওই সময়ের পুরো ঘটনা তুলে ধরেন।
“মাঠে দুই ব্যাটসম্যানের ভুল বোঝাবুঝি হতেই পারে। তাৎক্ষণিকভাবে হতাশা প্রকাশ করাও স্বাভাবিক। আমি রান আউট হওয়ার পরই মালান হাতের ইশারায় ‘সরি’ বলেছে। আমি সেদিকে তাকিয়ে মাঠের বাইরে চলে যাই। তার সঙ্গে কোনো কথাই হয়নি।”
“কাছেই থাকা প্রতিপক্ষের একজন ফিল্ডার তখন মালানকে একটা কথা বলেছে, যা তার ভালো লাগেনি। মালান সেই ফিল্ডারকেই জবাব দিচ্ছিল, তার দিকেই এগিয়ে যাচ্ছিল। অথচ সেটাকেই অনেকে বানিয়ে ফেলেছে, আমার সঙ্গে নাকি মালানের ঝামেলা হয়েছে!
টিভিতে দুই-একটি দৃশ্য দেখে যে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছে যাওয়া নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন তামিম।
“এরকম অনেক সময়ই অনেকে টিভিতে দু-একটি দৃশ্য দেখে নানা রকম ধারণা করে ফেলেন। গত কয়েক দিনে আমাকে নিয়েও এরকম হয়েছে। কিন্তু কোনো ঘটনা তো হুট করে হয় না। এটার পেছনেও অনেক ঘটনা থাকে।”
“মাঠে এরকম অনেক কিছুই হয়, যা টিভিতে পুরোপুরি ফুটে ওঠে না এবং সেটা উচিতও নয়। কিন্তু টিভিতে দু-একটি দৃশ্য দেখেই চূড়ান্ত ধারণা নেওয়া উচিত নয়। যাদের নিয়ে ঘটনা, যারা মাঠে থাকেন, তারা সবকিছু জানেন। আজকের (রোববার) উদাহরণ দিয়েই আবার বলছি, টিভিতে এক-দুই ঝলক দেখেই সিদ্ধান্তে পৌঁছে যাওয়া উচিত নয়।”