Published : 18 Jan 2025, 05:30 PM
ফরচুন বরিশালের নেটে তখন চলছে রিশাদ হোসেন আর দাভিদ মালানের লড়াই। এক পর্যায়ে হালকা ঝুলিয়ে দেওয়া ডেলিভারিতে বিভ্রান্ত ইংলিশ ব্যাটসম্যান বড় শটের চেষ্টায় টাইমিং করতে পারলেন না ঠিকঠাক। বল হাওয়ায় ভাসতেই রিশাদ সোল্লাসে বলে উঠলেন, 'মেইট, দ্যাটস আউট…!' মালানও তা মেনে নিলেন। সত্যিকারের ম্যাচের মতো নেট থেকেও বেরিয়ে গেলেন তখনই।
শুধু এই নেট সেশনেই নয়, এবারের বিপিএলে রিশাদের বোলিং ম্যাচে ও অনুশীলনে কাছ থেকেই দেখেছেন মালান। তার মতে, বাংলাদেশের তরুণ এই লেগ স্পিনার বিশ্বের সব লিগে খেলার সুযোগ দেওয়া উচিত।
এক বছরের বেশি সময় ধরে সাদা বলের ক্রিকেটে বাংলাদেশের জার্সিতে ধারাবাহিক পারফর্ম করছেন রিশাদ। গত বছরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে গড়েছেন দেশের হয়ে রেকর্ড। পারফরম্যান্স দিয়ে নজর কেড়েই তিনি দল বিদেশি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে। মালান মনে করেন, রিশাদের উন্নতির জন্য সম্ভাব্য সব লিগে খেলতে দেওয়া উচিত।
সব শেষ গত সপ্তাহে পাকিস্তান সুপার লিগের (পিএসএল) দশম আসরের প্লেয়ার্স ড্রাফটে দল পেয়েছেন রিশাদ। সিলভার ক্যাটেগরির ক্রিকেটার হিসেবে তাকে দলভুক্ত করেছে লাহোর কালান্দার্স।
এর আগে গত বছর কানাডার গ্লোবাল টি-টোয়েন্টি ও পরে অস্ট্রেলিয়ার বিগ ব্যাশ লিগেও ডাক পান তরুণ লেগ স্পিনার। কিন্তু ভিসা জটিলতায় কানাডা ও পরে আন্তর্জাতিক ব্যস্ততার সঙ্গে নানা বাস্তবতায় অস্ট্রেলিয়াতেও যাওয়া হয়নি তার।
তবে পিএসএলের সময় নেই কোনো ব্যস্ততা। ওই সময় ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ। সাদা পোশাকের ক্রিকেটে দেশের হয়ে এখনও যাত্রা শুরু হয়নি রিশাদের। তাই পাকিস্তানে খেলতে যাওয়ার অনাপত্তিপত্র পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি তার।
আপাতত বিপিএলে বরিশালের হয়ে খেলছেন রিশাদ। দলীয় সমন্বয়ের কারণে এখন পর্যন্ত ছয় ম্যাচের তিনটিতে একাদশে সুযোগ হয়নি তার। বাকি তিন ম্যাচে ওভারপ্রতি সাড়ে ৭ রানের কাছাকাছি খরচ করে নিয়েছেন ৪ উইকেট।
রিশাদকে যতটুকু দেখেছেন, দারুণ মনে ধরেছে মালানের। এই লেগ স্পিনারের আরও বিকশিত হওয়ার একটি পথ বাতলে দিলেন বরিশালের ইংলিশ ব্যাটসম্যান।
“রিশাদকে দুর্দান্ত মনে হয়। বাংলাদেশ এখন একজন লেগ স্পিনার পেয়েছে, এটি বেশ ভালো ব্যাপার। বিশ্বের সব ভালো ভালো দলে লেগ স্পিনার আছে। তাদেরকে খেলা খুব কঠিন। সাদা বলের ক্রিকেটে তারা ম্যাচ জেতাতে পারে।”
“সব চ্যালেঞ্জ মেনে নিয়েই (রিশাদকে) যত বেশি সম্ভব ম্যাচ খেলাতে হবে। যত বেশি টুর্নামেন্ট খেলবে, তত বেশি উন্নতি করবে। সম্ভাব্য সব লিগে তার খেলা উচিত। কারণ এটিই উন্নতি করার একমাত্র উপায়। সে দারুণ এক প্রতিভা। যথেষ্ট লম্বা, দুই দিকেই টার্ন করাতে পারে। অনেক স্কিল তার এবং ব্যাটিংও করতে পারে।”
বিপিএল খেলতে এসে প্রথম পাঁচ ম্যাচে বেঞ্চে বসেই কাটান মালান। চট্টগ্রাম পর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচে এবারের আসরে প্রথম সুযোগ পান বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। তিন নম্বরে নেমে ৪৯ রানের অপরাজিত ইনিংসে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন তিনি।
বাংলাদেশ ক্রিকেটে মালানের সম্পৃক্ততা অনেক দিনের। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিতি পাওয়ার আগেই ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ ও বিপিএলে খেলেছেন তিনি। ২০১৩ সালে প্রাইম দোলেশ্বরের হয়ে ঢাকা লিগে খেলতে এসে ৬৭.৬৬ গড়ে তিনি করেন ৪০৬ রান।
পরের বছরও একই দলের হয়ে ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটে খেলেন মালান। ২০১৬-১৭ মৌসুমের বিপিএলে তাকে প্রথম দলে ভেড়ায় বরিশাল বুলস। খুলনা টাইগার্স, কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে তিনি খেলেন আরও তিন আসরে।
বাংলাদেশের ক্রিকেটের প্রতি কৃতজ্ঞতার প্রকাশ তার বরাবরই আছে। এবার বললেন সেই ঋণের কথা।
“ক্রিকেটীয় দৃষ্টিকোণ থেকে (বাংলাদেশে ফেরা) আমার জন্য খুব ভালো। অনেক বছর আগে আমি (ঢাকা) প্রিমিয়ার লিগ খেলেছি, মনে হয় প্রায় ১১-১২ বছর আগে। সবসময় এখানে আসার সুযোগ নিই আমি। ভিন্ন ও কঠিন কন্ডিশনে নিজের খেলার উন্নতিতে এটি অনেক সাহায্য করেছে।”
“এসব লিগে খেলে এই অগ্রগতিতে সাহায্য করায় আমি সবসময় বিপিএল, ডিপিএল ও বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রতি কৃতজ্ঞ। নয়তো আমি আজকের জায়গায় থাকতে পারতাম না। বাংলাদেশে আসা আমার জন্য সবসময় আনন্দের।”