মাঝের ওভারগুলোয় উইকেট শিকারের জন্য লেগ স্পিনার রিশাদ ও আরেক নতুন মুখ বাঁহাতি স্পিনার রাকিবুল হাসানের ওপর ভরসা রাখছেন নির্বাচকরা।
Published : 01 Dec 2023, 02:23 PM
ঘরোয়া ক্রিকেটে অভিজ্ঞতা নেই খুব একটা। বলে নেই কারুকাজ বা বাড়তি কিছু। তেমন সমৃদ্ধ নয় স্কিলও। তার পরও স্রেফ লেগ স্পিনার বলেই বাংলাদেশের ওয়ানডে দলে নেওয়া হয়েছে রিশাদ হোসেনকে। জাতীয় নির্বাচক হাবিবুল বাশার জানালেন, একজন লেগ স্পিনার গড়ে তোলার মরিয়ার চেষ্টারই অংশ এটি।
রিশাদকে বেশ ক বছর ধরেই নিজেদের রাডারে রেখেছেন নির্বাচকরা। বয়সভিত্তিক দলগুলি থেকে শুরু করে আরও বিভিন্ন দলে তাকে খেলানো হয়েছে। ঘরোয়া ক্রিকেটেও খেলছেন। বাংলাদেশের হয়ে এর মধ্যে তিনটি টি-টোয়েন্টি তিনি খেলে ফেলেছেন।
মূলত টি-টোয়েন্টিতেই এতদিন তাকে ভাবা হয়েছে বেশি। এবার নিউ জিল্যান্ড সফরের ওয়ানডে দলেও তাকে জায়গা দেওয়া হয়েছে। এই সংস্করণেই তার অভিজ্ঞতা সবচেয়ে কম। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ১৮ ম্যাচ খেলেছেন তিনি, ২০ ওভারের ক্রিকেটে খেলেছেন ১৭ ম্যাচ। কিন্তু ৫০ ওভারের ক্রিকেটে স্বীকৃত ম্যাচ খেলেছেন এখনও পর্যন্ত মোটে ৩টি।
ঘরোয়া ক্রিকেটে পারফরম্যান্স তার কোনোটিতেই খুব উজ্জ্বল নয়। তবে পারফরম্যান্সে তাকাচ্ছেন না নির্বাচকরা ও টিম ম্যানেজমেন্টও। সিলেটে বাংলাদেশ-নিউ জিল্যান্ড টেস্টের ফাঁকে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে হাবিবুল বাশার বললেন, লেগ স্পিনে আপাতত রিশাদই তাদের সম্বল।
“ওইভাবে দেখলে ওকে খুব ইম্প্রেসিভ মনে হবে না। তবে আমাদের লেগ স্পিনার যতজন আছে, রিশাদই নিয়মিত খেলে সাধারণত। ওকে আমরা যতটা নেটে দেখছি বা ম্যাচ যেগুলো খেলেছে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বাইরে। আমাদের মনে হয়েছে রিশাদকে নিয়ে আমরা চেষ্টা করতে পারি। এই মুহূর্তে সে-ই একমাত্র লেগ স্পিনার আমাদের আছে, যে কিছুটা সার্ভিস দিতে পারবে বলে আমরা মনে করি।”
ঘরোয়া ক্রিকেটে বা জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন দলে রিশাদ এখনও পর্যন্ত যতটুকু খেলেছে, তার পারফরম্যান্সের চেয়ে পরিচয়ই মূলত প্রাধান্য পেয়েছে। কবজির মোচড়ে তিনি বল করেন বটে। তবে তার বোলিংয়ে ধার তেমন নেই। অনেক টার্ন কিংবা বৈচিত্রও খুব বেশি নেই। বাড়তি কোনো কিছু কিংবা ‘এক্স ফ্যাক্টর’ চোখে পড়েনি কখনোই।
হাবিবুল জানালেন, স্রেফ লেগ স্পিনার বলেই এই ২১ বছর বয়সী ক্রিকেটারকে নিয়ে চেষ্টা করা হচ্ছে।
“লেট’স ট্রাই… আমরা আসলে চেষ্টা করতে চাচ্ছি। হ্যাঁ, লেগ স্পিনার বলেই… যেহেতু আমরা একজন লেগ স্পিনার গড়ে তুলতে চাচ্ছি, যেটা আমাদের দুর্ভাবনার জায়গা… এই মুহূর্তে আমাদের যতজন লেগ স্পিনার আছে, তাদের মধ্যে রিশাদই ভালো। এজন্যই চেষ্টা করতে চাচ্ছি।”
রিশাদের মতো ওয়ানডে দলে প্রথমবার ডাক পেয়েছেন রাকিবুল ইসলাম। ২০২০ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য এই বাঁহাতি স্পিনারের ডাক পাওয়া অবশ্য খুব একটা বিস্ময়কর নয়। বয়সভিত্তিক ক্রিকেট থেকেই তাকে দারুণ সম্ভাবনাময় মনে করা হচ্ছে। এরপর তিনি পারফর্ম করেছেন ঘরোয়া ক্রিকেটে। ৪৪টি লিস্ট ‘এ’ ম্যাচে তার শিকার ৬৬ উইকেট। এছাড়া হাই পারফরম্যান্স স্কোয়াডে ছিলেন তিনি নিয়মিতই । খেলেছেন ইমার্জিং দল, ‘এ’ দলে।
২১ বছর বয়সী এই স্পিনারের কাছে দলের প্রত্যাশার ব্যাপারটিও পরিষ্কার করে দিলেন হাবিবুল।
“রাকিবুল বেশ কিছুদিন ধরেই ভালো করছে। গত ২-৩ বছর ধরেই। সে আমাদের হাই পারফরম্যান্সের ক্রিকেটার, ‘এ’ দলে ভালো খেলেছে। গত ইমার্জিং দলেও ভালো পারফরম্যান্স ছিল। আমরা একটু ভিন্ন ধরনের বোলার খুঁজছি। এখন যে ধরনের খেলা হয়, মাঝের ওভারগুলোয় উইকেট না নিলে রান আটকে রাখা কঠিন হয়। আমরা তাই এমন বোলার খুঁজছি, যে মাঝের ওভারগুলোয় উইকেট নিতে পারে। এই ধারণা থেকেই রাকিবুলকে নিয়ে চেষ্টা করছি আমরা।”
“আমাদের মনে হচ্ছে, রাকিবুল এই ধরনের বোলার যে উইকেট নিতে পারবে, সঙ্গে রানও আটকাতে পারবে। ব্যাটিংয়ের হাতও ভালো, খুব ভালো ফিল্ডার। এই বিবেচনায় ওকে দলে নেওয়া হয়েছে।”
মূলত রাকিবুলকে বেছে নেওয়াতেই ওয়ানডে দলে জায়গা হারিয়েছেন নাসুম আহমেদ। গত কিছুদিনে কখনও তাইজুল ইসলাম, কখনও নাসুম, দল নির্বাচনে এভাবেই এগিয়েছে নির্বাচকরা। এবার এই দুজন থেকে সামনে তাকিয়ে তারা বেছে নিয়েছেন রাকিবুলকে।
হাবিবুল জানালেন, উইকেট শিকারে অকার্যকারিতার কারণেই নাসুম বাদ পড়েছেন।
“নাসুম তো সাদা বলে নিয়মিত খেলছিল। তাকে আমরা দেখেছি অনেক। সে যে খুব খারাপ করেছে, তা বলব না। তবে ওর কাছ থেকে আমরা যেটা চাচ্ছিলাম, উইকেট শিকার করা, সেটা সাম্প্রতিক সময়ে পাচ্ছিলাম না।”
“হ্যাঁ, ওকে একটা ভূমিকা পালন করতে বলা হয়েছিল, আক্রমণ করার চেয়ে একটু রান বাঁচানো। তবে এরকম একজনকেও আমাদের দরকার, যে উইকেট নিতে পারে। এখন যে ফরম্যাট, মাঝখানে উইকেট নিতে না পারলে রান বাঁচানো কঠিন হয়। তিনশর বেশি রান হয়েই যায়। এজন্যই মনে হয়েছে, এমন একজনকে দেখে চেষ্টা করি, যে মাঝের ওভারগুলোয় উইকেট নিতে পারে।”
মাঝের ওভারগুলোয় উইকেট শিকারের ব্যর্থতা নিয়ে গত বিশ্বকাপের সময়ও আলোচনা হয়েছে অনেক। এখানেই এখন রাকিবুল ও রিশাদের ওপর ভরসা হাবিবুলদের।
“আমরা কিন্তু শেখ মেহেদিকেও নেইনি (ওয়ানডেতে)। কারণ নিউ জিল্যান্ডের কন্ডিশনে অর্থোডক্স স্পিনারদের পারফরম্যান্স আশাব্যঞ্জক নয়। সেজন্যই আমরা ভিন্ন কিছু চেষ্টা করছি। অবশ্যই লেগ স্পিনার নিয়ে অনেক কথা হয় আমাদের। আমরা আশা করছি যে, আমাদের যে চাহিদা, রিশাদ তা পূরণ করতে পারবে। মাঝের ওভারগুলোয় আমরা যদি উইকেট নিতে না পারি, বড় টুর্নামেন্ট খেলতে গেলে রান বাঁচানো খুব কঠিন হয়ে যায়।”