সেরাদের মাঝে থাকার জন্য যা দরকার, বছরের প্রথম সাত মাসেই করে ফেলেন স্টুয়ার্ট ব্রড।
Published : 23 Jan 2024, 02:31 PM
মাস ছয়েক আগে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জয়ী অস্ট্রেলিয়ার বছরের শেষটাও হয়েছে দুর্দান্ত। দলটির ক্রিকেটাররা বছর জুড়েই অসাধারণ সব পারফরম্যান্স করেছে, তারই প্রতিফলন আইসিসির বর্ষসেরা টেস্ট দলে। একাদশের পাঁচ জনই অস্ট্রেলিয়ার!
আইসিসির ওয়েবসাইটে মঙ্গলবার প্রকাশিত বর্ষসেরা টেস্ট দলের আরেকটি বিশেষ উল্লেখযোগ্য দিক হলো স্টুয়ার্ট ব্রডের জায়গা পাওয়া। গত জুলাইয়ে সব ধরনের ক্রিকেট থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন তিনি। অবশ্য বছরের ওই সময়ের মধ্যে সেরাদের দলে জায়গা করে নেওয়ার মতো কাজ করে ফেলেন ব্রড।
ইনিংস শুরু করার দায়িত্বে প্রথম নামটি খু্বই প্রত্যাশিত, উসমান খাওয়াজা। অস্ট্রেলিয়ার এই ব্যাটসম্যানস বছর জুড়েই ছিলেন অসাধারণ ছন্দে।
সিডনিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ক্যারিয়ার সেরা ১৯৫ রানের ইনিংস দিয়ে বছর শুরু করেন খাওয়াজা। এরপর নেই কোনো থামাথামি, কেবলই ছুটে চলা। ভারতে বর্ডার-গাভাস্কার ট্রফিতে করেন সিরিজের সর্বোচ্চ ৩৩৩ রান।
গত জুনে চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে অবশ্য আলো ছড়াতে পারেননি খাওয়াজা। তবে তার দল ঠিকই বাজিমাত করে। এরপরই দ্রুতই আবার চেনা রূপে ফেরেন তিনি। একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে ২০২৩ সালে এই সংস্করণে এক হাজারের বেশি রান করেন ৩৭ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান; ১৩ ম্যাচে ৫২.৬০ গড়ে এক হাজার ২১০ রান, ৬টি করে ফিফটি ও সেঞ্চুরি।
বর্ষসেরা টেস্ট ক্রিকেটারের লড়াইয়েও আছেন খাওয়াজা।
আরেক ওপেনার হিসেবে দিমুথ কারুনারাত্নের জায়গা পাওয়ায় কেউ কেউ অবাক হতে পারেন। পুরো বছরে যে কেবল ছয়টি টেস্ট খেলেছেন তিনি। তবে ওই ম্যাচগুলোতেই দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে ছাপ রেখেছেন এই শ্রীলঙ্কান।
নিউ জিল্যান্ড সফরে দুই টেস্টে তিনটি ফিফটিতে ২০৭ রান করেন অধিনায়ক কারুনারাত্নে, যা ওই সফরে শ্রীলঙ্কার ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বোচ্চ। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ২-০ ব্যবধান সিরিজ জয়ে প্রতিটি ম্যাচেই সেঞ্চুরি করেন তিনি। সারা বছরে ৬০.৮ গড়ে করেন মোট ৬০৯ রান।
ব্যাটিং অর্ডারের তিন নম্বরে যথার্থভাবে আছেন কেন উইলিয়ামসন। সময়ের সেরাদের একজন নিউ জিল্যান্ডের এই ব্যাটসম্যানের গত বছরের শুরুটা ছিল একটু ফিকে। তবে, স্বরূপে ফিরতে একটু দেরি করেননি তিনি। বছরের দ্বিতীয় মাসে তৃতীয় ম্যাচেই ওয়েলিংটনে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ফলোঅনে পড়ার পর উইলিয়ামসনের ১৩২ রানের ইনিংসে ভর করে স্মরণীয় জয় পায় তার দল।
পরের মাসে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পরপর দুই ম্যাচেও তিন অঙ্ক ছুঁয়ে সেঞ্চুরির হ্যাটট্রিক করেন উইলিয়ামসন, এর মধ্যে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে করেছিলেন দ্বিশতক। সিরিজটি ২-০ ব্যবধানে জেতে নিউ জিল্যান্ড। এরপর চোটে দীর্ঘদিন বাইরে থাকার পর গত নভেম্বরে বাংলাদেশের বিপক্ষে নেমেও শতক করেন তিনি, ম্যাচটি যদিও হেরে যায় তারা।
২০২৩ সালে চার সেঞ্চুরিতে মোট ৬৯৫ রান করেন ৩৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার।
পরের নামটি ক্যারিয়ার জুড়ে দারুণ ধারাবাহিকতার সঙ্গে পারফর্ম করে যাওয়া জো রুট। এই নিয়ে চতুর্থবার বর্ষসেরা একাদশে জায়গা পেলেন তিনি। বছরের সেরা টেস্ট ক্রিকেটারের লড়াইয়েও আছেন এই ইংলিশ ব্যাটসম্যান।
বছরের শুরু থেকেই দারুণ ছন্দে ছিলেন তিনি। নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম চার ইনিংসেই খেলেন তিনটি পঞ্চাশ ছাড়ানো ইনিংস, এর পরের দুটি ছিল অপরাজিত ১৫৩ ও ৯৫। পরে বছরের মাঝামাঝি সময়ে অ্যাশেজে সময়টা খুব একটা ভালো কাটেনি ইংল্যান্ডের। দলটির যে কজন ওই সিরিজে আলো ছড়ান তাদের একজন ছিলেন রুট; প্রথম টেস্টে তিনি সেঞ্চুরি করলেও দল পারেনি জিততে। পরে শেষ দু্ই টেস্ট জিতে সিরিজ ড্র করে ইংল্যান্ড, ওই দুই ম্যাচে ৮৪ ও ৯১ রানের ইনিংস খেলেন তিনি।
বর্ষসেরা টেস্ট খেলোয়াড়ের জন্য মনোনয়ন পাওয়া আরেক জন হলেন ট্রাভিস হেড। খুব স্বাভা্বিকভাবে বর্ষসেরা টেস্ট দলেও আছেন তিনি। গত বছর এই অস্ট্রেলিয়ান ১২ ম্যাচে মোট ৯১৯ রান করেন। এই সময়ে তার চেয়ে বেশি রান করেছেন কেবল দুই জন।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অর্ধশতক দিয়ে বছর শুরুর পর ভারতের চ্যালেঞ্জিং কন্ডিশনে দারুণ পারফরম্যান্সে প্রশংসা কুড়ান হেড। অবশ্য তার সেরা পারফরম্যান্সের দেখা মেলে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে; ভারতের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে দলের কিছুটা কোণঠাসা অবস্থা থেকে মারমুখী ব্যাটিংয়ে ১৬৩ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। ম্যাচটি ২০৯ রানের বিশাল ব্যবধানে জেতে অস্ট্রেলিয়া। পরে অ্যাশেজেও দলের ট্রফি ধরে রাখায় রাখেন অবদান।
অস্ট্রেলিয়ার অন্য তিন জন হলো দুই পেসার প্যাট কামিন্স ও মিচেল স্টার্ক এবং উইকেটরক্ষক অ্যালেক্স কেয়ারি।
কামিন্সের জন্য ২০২৩ সাল ছিল অভাবনীয়, অবিশ্বাস্য। বলা যায়, এই সময়ে তিনি যেন হয়ে উঠেছিলেন ‘পরশপাথর’, যা ছুঁয়েছেন তাই সোনা হয়ে উঠেছে। আর তারই স্বীকৃতিস্বরূপ বর্ষসেরা পুরুষ ক্রিকেটার হওয়ার লড়াইয়ে থাকার পাশাপাশি বর্ষসেরা এই টেস্ট দলের অধিনায়কও হয়েছেন তিনি।
তার নেতৃত্বে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জয়ের পাশাপাশি প্রতিপক্ষের মাঠে গিয়ে অ্যাশেজ ট্রফিও ধরে রাখতে সক্ষম হয় অস্ট্রেলিযা। বল হাতেও বছর জুড়ে আলো ছড়িয়েছেন তিনি। ১১ ম্যাচে ৪২ উইকেট নিয়ে গত বছরের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারীও কামিন্স।
২০২৩ অস্ট্রেলিয়ার জন্য সাফল্যময় হয়ে ওঠার পেছনে অনেক বড় অবদান স্টার্কেরও। এই সময়ে ৯ ম্যাচ খেলে ৩৮ উইকেট নেন তিনি। বর্ডার-গাভাস্কার ট্রফিতে তেমন ভালো কিছু করতে পারেননি বাঁহাতি এই পেসার, তবে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে আলো ছড়ান। ৪ উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি দ্বিতীয় ইনিংসে গুরুত্বপূর্ণ ৪১ রান করেছিলেন তিনি।
ক্যারিয়ারের শেষ বছরেও বল হাতে দারুণ কার্যকর ছিলেন স্টুয়ার্ট ব্রড। বছরের প্রথম সিরিজে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে দুই ম্যাচেই ইনিংসে চারটি করে উইকেট নেন তিনি, সিরিজে সতীর্থ জেমস অ্যান্ডারসনের সঙ্গে যৌথভাবে সর্বোচ্চ ১০টি উইকেট শিকার করেন। পরে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষেও ইনিংসে নেন ৫টি।
এরপর অ্যাশেজেও আলো ছড়ান তিনি। জুলাইয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওই সিরিজের পঞ্চম টেস্টের মাঝপথে হুট করে পেশাদার ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দেন ব্রড। তার এমন সিদ্ধান্ত চমক হয়ে এসেছিল অনেকের জন্যই। কারণ ওই সিরিজে বেশ ভালো বোলিং করছিলেন ব্রড। সিরিজের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২২ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি।
সেরা এই একাদশে ভারতের আছেন দুজন, অলরাউন্ডার রবীন্দ্র জাদেজা ও অভিজ্ঞ স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিন।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দিয়ে বছর শুরু করেন জাদেজা। নাগপুরে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ইনিংসে ৫ উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি অর্ধশতক করেন তিনি। পরের ম্যাচে ছিলেন আরও অসাধারণ; ম্যাচে শিকার করেন ১০ উইকেট, তার মধ্যে দ্বিতীয় ইনিংসে নিয়েছিলেন ৭টি। ট্রফি ধরে রাখে ভারত।
টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে সেই ফর্ম বয়ে নেন জাদেজা; ৪ উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি মূল্যবান ৪৮ রান করেন তিনি। যদিও ম্যাচ হেরে যায় তারা।
লাল বলের ক্রিকেটে বর্ষসেরা পুরুষ খেলোয়াড়ের লড়াইয়ে থাকা চার জনের আরেক জন হলেন অশ্বিন। বর্ডার-গাভাস্কার ট্রফিতে ভারতের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী তিনি; ৪ ম্যাচে নেন ২৫টি। সিরিজে সেরা খেলোয়াড়েরও পুরস্কারও জেতেন তিনি।
তারপরও টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের দলে জায়গা পাননি অশ্বিন। এরপর দলে ফিরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচে ১২ উইকেট (৫/৬০ ও ৭/৭১) নেন তিনি। পরের ম্যাচেও একটি পঞ্চাশ রানের ইনিংস খেলার পাশাপাশি তিনটি উইকেট নেন তিনি।
বর্ষসেরা টেস্ট দল:
প্যাট কামিন্স (অধিনায়ক, অস্ট্রেলিয়া), উসমান খাওয়াজা (অস্ট্রেলিয়া), দিমুথ কারুনারাত্নে (শ্রীলঙ্কা), কেন উইলিয়ামসন (নিউ জিল্যান্ড), জো রুট (ইংল্যান্ড), ট্রাভিস হেড (অস্ট্রেলিয়া), রবীন্দ্র জাদেজা (ভারত), অ্যালেক্স কেয়ারি (উইকেটররক্ষক, অস্ট্রেলিয়া), প্যাট কামিন্স (অস্ট্রেলিয়া), রবিচন্দ্রন অশ্বিন (ভারত), মিচেল স্টার্ক (অস্ট্রেলিয়া), স্টুয়ার্ট ব্রড (ইংল্যান্ড)