এনসিএল টি-টোয়েন্টি
সাব্বির হোসেনের ঝড়ের জবাবে ছয় ছক্কা তাণ্ডবে দারুণ ইনিংস খেলে দলকে জেতালেন আকবর আলি।
Published : 15 Dec 2024, 02:30 PM
লক্ষ্যটা ছিল কঠিন। তবে দুইশ ছুঁইছুঁই সেই লক্ষ্য ছোঁয়ার সাহসটা দলে বয়ে আনলেন তানবীর হায়দার। পরে বোলারদের নিয়ে একরকম ছেলেখেলা করলেন আকবর আলি। টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে আগের ৫০ ম্যাচে যার কোনো ফিফটিই ছিল না, তিনিই বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে উপহার দিলেন ম্যাচ জেতানো ফিফটি। দুই ওভার বাকি রেখেই টানা চতুর্থ জয় পেয়ে গেল রংপুর বিভাগ।
এনসিএল টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টের চতুর্থ রাউন্ডে টানা চার জয় পেয়েছে ঢাকা মেট্রোও। মোহাম্মদ নাঈম শেখের ফিফটির পাশাপাশি অলরাউন্ড নৈপুণ্যে দলের জয়ে অবদান রেখেছেন আনিসুল ইসলাম।
সাব্বিরের জবাবে আকবর
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে রাজশাহী বিভাগকে ৭ উইকেটে হারায় রংপুর বিভাগ। ১৯০ রানের লক্ষ্য ১২ বল বাকি থাকতে ছুঁয়ে ফেলে আকবর আলির দল।
চার ম্যাচের সবকটি জিতে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে রংপুর। সমান ম্যাচে এক জয়ে চার নম্বরে রাজশাহী।
মাত্র ২৯ বলে ৬৮ রান করে সামনে থেকে দলকে নেতৃত্ব দেন আকবর। ৫১ ম্যাচের ক্যারিয়ারের প্রথম পঞ্চাশছোঁয়া ইনিংসে ৪ চারের সঙ্গে ৬টি ছক্কা মারেন তিনি। অনুমেয়ভাবেই ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতেন রংপুর অধিনায়ক।
রংপুরের জয়ে বড় অবদান তানবীরেরও। এমনিতে মিডল অর্ডার হলেও এই টুর্নামেন্টে ওপেনিংয়ে খেলা অলরাউন্ডার ৮ চার ও ২ ছক্কায় ৪৫ বলে করেন ৭১ রান।
আকবরের সঙ্গে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে তার ৪৪ বলে ১০৩ রানের জুটিই গড়ে দেয় ম্যাচের ভাগ্য।
রান তাড়ায় প্রথম ওভারেই তাইজুলের বলে দুই ছক্কা মারেন চৌধুরি মোহাম্মদ রিজওয়ান। তবে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি তিনি। একটি ছক্কা মেরেই থামেন তিন নম্বরে নামা আব্দুল্লাহ আল মামুন।
এরপর রাজশাহীর বোলারদের আর সুযোগ দেননি আকবর ও তানবীর। তাইজুলের ওপর দিয়ে যায় বড় ঝড়। তার বলে ছক্কা মেরেই রানের খাতা খোলেন আকবর। ১৩তম ওভারে তাইজুলের বলে আরও তিনটি ছক্কা মারেন রংপুর অধিনায়ক।
নিহাদউজ্জামানের ওভারে তিনি মারেন তিনটি চার। শফিকুল ইসলামের বলে ছক্কা ও চার মেরে মাত্র ১৯ বলে প্রথম পঞ্চাশ করেন আকবর।
অন্যপ্রান্তে ফরহাদ রেজার বলে দুই চারের মাঝে ছক্কায় ওড়ান তানবীর। আসাদুজ্জামানের ওভারে মারেন দুটি চার। অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান পঞ্চাশ করতে খেলেন ৩৩ বল। দলকে জয়ের কাছে নিয়ে ফেরেন তিনি।
পরে আরিফুল হককে নিয়ে বাকি কাজ শেষ করেন আকবর।
৪ ওভারে ৯টি ছক্কা হজম করে ৬২ রান দেন তাইজুল।
ম্যাচের প্রথম ভাগে রাজশাহীকে দুইশ ছুঁইছুঁই পুঁজি এনে দেওয়ার কারিগর সাব্বির হোসেন। তিন নম্বরে নেমে ৭ চার ও ২ ছক্কায় ৫২ বলে ৭৩ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন তিনি। এছাড়া ছয় নম্বরে নেমে ৩টি করে চার-ছক্কায় ১৬ বলে ৩৮ রানের ক্যামিও খেলেন গোলাম কিবরিয়া।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
রাজশাহী: ২০ ওভারে ১৮৯/৮ (শান্ত ৬, হাবিবুর ৩০, সাব্বির ৭৩*, প্রিতম ১৬, বিশাল ১০, কিবরিয়া ৩৮, ফরহাদ ০, নিহাদউজ্জামান ৪, তাইজুল ০, শফিকুল ০*; মুকিদুল ৪-০-৩৬-১, রবিউল ৩-০-৩২-০, আরিফ ৪-০-৩৫-১, আলাউদ্দিন ৪-০-২৫-৩, এনামুল ১-০-২০-০, রিজওয়ান ৪-০-৪১-৩)
রংপুর: ১৮ ওভারে ১৯৪/৩ (রিজওয়ান ২৫, তানবীর ৭১, মামুন ৬, আকবর ৬৮*, আরিফুল ১৫*; তাইজুল ৪-০-৬২-১, শফিকুল ৩-০-২৮-০, নিহাদউজ্জামান ৪-০-৩১-০, আসাদুজ্জামান ৪-০-৩৭-১, ফরহাদ ২-০-২০-১, কিবরিয়া ১-০-১০-০)
ফল: রংপুর ৭ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: আকবর আলি
নাঈমের ফিফটি, আনিসুলের ৪ উইকেট
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের আউটার মাঠে ঢাকা বিভাগকে ১৯ রানে হারিয়েছে ঢাকা মেট্রো। ১৯১ রানের লক্ষ্যে ৮ উইকেটে ১৭১ রান করেছে ঢাকা।
চার ম্যাচে পূর্ণ ৮ পয়েন্ট নিয়ে নেট রান রেটের হিসেবে দুই নম্বরে মেট্রো। ২ পয়েন্ট পাওয়া ঢাকার অবস্থান ষষ্ঠ।
ব্যাট হাতে ১৩ বলে ২৩ রানের ইনিংসের পর বোলিংয়ে ৪ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতেন মেট্রোর অলরাউন্ডার আনিসুল ইসলাম।
টস হেরে আগের ম্যাচগুলোর মতোই ভালো শুরু করেন নাঈম শেখ ও ইমরানউজ্জামান। পাওয়ার প্লেতে পঞ্চাশ রানের জুটি গড়েন মেট্রোর দুই ওপেনার। ষষ্ঠ ওভারে ফেরা ইমরানউজ্জামান ১৫ বলে করেন ২০ রান।
তিন নম্বরে নেমে ঝড় তোলার আভাস দেন আনিসুল। তবে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। ৩ চার ও ১ ছক্কার ইনিংস খেলে রান আউট হন তিনি।
তৃতীয় উইকেটে শামসুর রহমানের সঙ্গে ৩৩ বলে ৬২ রানের জুটি গড়েন নাঈম। ৩৬ বলে ফিফটি করেন মেট্রো অধিনায়ক। এরপর গতি হারায় তার ইনিংস।
অন্য প্রান্তে শামসুর ছিলেন দারুণ ছন্দে। ৪ চার ও ২ ছক্কায় মাত্র ২২ বলে ৪৩ রানের ইনিংস খেলেন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। শেষ ওভারে ফেরার আগে ৮ চার ও ১ ছক্কায় ৫৪ বলে ৬৯ রান করেন নাঈম।
রান তাড়ায় প্রথম ওভারে সাইফ হাসানের উইকেট হারায় ঢাকা। ক্রিজে গিয়ে প্রথম বলে ছক্কা মারেন আরিফুল ইসলাম। অন্য প্রান্তে রনি তালুকদারও শুরু করেন আগ্রাসী ব্যাটিং। দ্বিতীয় ওভারে আলিস আল ইসলামের বলে দুই চারের মাঝে মারেন ছক্কা।
এক ওভার পর আরাফাত সানির বলে চারের পর দুটি ছক্কা মারেন অভিজ্ঞ ওপেনার। পঞ্চম ওভারে পঞ্চাশ রান করে ফেলে ঢাকা। ৪ চারের সঙ্গে ৩টি ছক্কায় মাত্র ১৯ বলে ৩৯ রান করে ফেরেন রনি।
এরপর দলকে এগিয়ে নেন আরিফুল। ১১তম ওভারে একশ পূর্ণ করে ভালোভাবেই জয়ের পথে এগোচ্ছিল ঢাকা। ১২তম ওভারে আরিফুলকে ফিরিয়ে তাদের ধাক্কা দেন আনিসুল। আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি ঢাকা।
তাইবুর রহমান ১২ বলে ২১ রানের ইনিংসে চেষ্টা করলেও সফল হননি। চার নম্বরে নেমে ২৯ রান করতে ৩২ বল খেলে ফেলেন আরাফাত সানি জুনিয়র।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ঢাকা মেট্রো: ২০ ওভারে ১৯০/৭ (ইমরানউজ্জামান ২০, নাঈম ৬৯, আনিসুল ২৩, শামসুর ৪৩, আবু হায়দার ১৮, তাহজিবুল ৬, সাদমান ২, শহিদুল ০*, রকিবুল ২*; ইকবাল ৪-০-৩৫-১, এনামুল ২-০-২৩-০, শুভাগত ১-০-১৫-০, সুমন ৪-০-৪২-২, নাজমুল ৪-০-৩১-২, সাইফ ৩-০-২৫-০, তাইবুর ২-০-১৪-০)
ঢাকা: ২০ ওভারে ১৭১/৮ (সাইফ ১, রনি ৩৯, আরিফুল ৪২, আরাফাত সানি জুনিয়র ২৯, মাহিদুল ৮, শুভাগত ১৪, তাইবুর ২১, এনামুল ০, সুমন ১১*, ইকবাল ০*; রকিবুল ৪-০-২৮-১, আলিস ৪-০-৩১-১, আরাফাত সানি ২-০-২৩-০, আবু হায়দার ২-০-১২-১, শহিদুল ৪-০-৩৮-১, আনিসুল ৪-০-৩৮-৪)
ফল: ঢাকা মেট্রো ১৯ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: আনিসুল ইসলাম