জাতীয় ক্রিকেট লিগ
জাতীয় ক্রিকেট লিগে রংপুরের বিপক্ষে ৬ উইকেট নিয়েছেন রাজশাহীর সাব্বির হোসেন।
Published : 09 Nov 2024, 07:54 PM
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সেঞ্চুরি করতে যেন ভুলেই গিয়েছিলেন আরিফুল হক। অবশেষে অবসান হলো তার দীর্ঘ অপেক্ষার। ৬ বছর পর সাদা পোশাকে তিন অঙ্কের উষ্ণ ছোঁয়া পেলেন তিনি। দারুণ ব্যাটিংয়ে শতক করে অপরাজিত অমিত হাসান। স্রেফ ১ রানের জন্য কাঙ্ক্ষিত সেঞ্চুরি পেলেন না তার সতীর্থ পিনাক ঘোষ।
জাতীয় ক্রিকেট লিগের চতুর্থ রাউন্ডের প্রথম দিনে শনিবার আলাদা দুই ম্যাচে শতক করেছেন আরিফুল ও অমিত। রাজশাহীর বিপক্ষে রংপুরের ব্যাটিং বিপর্যয়ে ২ ছক্কা ও ১৩ চারে ১০৩ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন আরিফুল।
তার একার লড়াইয়ে প্রথম ইনিংসে ১৮৯ রান করেছে রংপুর। পরে ব্যাটিংয়ে নেমে ১ উইকেট হারিয়ে ৩৯ রান নিয়ে দিন শেষ করেছে রাজশাহী।
লাল বলের ক্রিকেটে আরিফুলের সবশেষ সেঞ্চুরিও ছিল জাতীয় লিগে; ২০১৮ আসরে খেলা ক্যারিয়ার সেরা ২৩১ রানের ইনিংস। এরপর ৫৯ ইনিংসে সেঞ্চুরিহীন থাকার পর অবশেষে পেলেন অনির্বচনীয় স্বাদ। মাঝের এই সময়ে অবশ্য তিনবার খুব কাছে গিয়েও পারেননি শতক ছুঁতে। দুইবার আউট হয়েছেন ৯৮ রানে, আর একবার ৯৭ রানে।
রাজশাহীর ঘরের মাঠ শহিদ কামরুজ্জামান স্টেডিয়ামে রংপুরের ব্যাটিং একাই গুঁড়িয়ে দেন সাব্বির হোসেন। তার মূল কাজ ব্যাটিং হলেও এদিন তিনি নিজেকে মেলে ধরেন বোলার হিসেবে। মিডিয়াম পেসে ৬ শিকার ধরেন তিনি ৪৭ রান দিয়ে। প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ারে এই প্রথম পাঁচ উইকেটের স্বাদ পেলেন তিনি।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা রংপুরের ইনিংসে আরিফুল ছাড়া আর কেউ ৩০ রানও করতে পারেননি। শুরুতে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে দলটি। ৩৮ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ভীষণ বিপদে পড়া রংপুরকে উদ্ধার করেন আরিফুল।
তাকে কিছুক্ষণ সঙ্গ দেওয়া অভিজ্ঞ নাঈম ইসলাম ৮৩ বলে ২৮ রান করে ফেরেন। দুইজনের জুটিতে আসে ৫৯ রান। পরে শেষ দিকের ব্যাটসম্যানদের নিয়ে দলকে টানেন আরিফুল। ৭২ বলে ফিফটি করা ব্যাটসম্যান প্রথম শ্রেণির নবম সেঞ্চুরি স্পর্শ করেন ১৫৯ বলে।
আবদুল্লাহ আল মামুনকে দিয়ে শিকার ধরা শুরু করা সাব্বির একে একে ফিরিয়ে দেন আকবর আলি, তানবির হায়দার, নাঈম ইসলাম, নবীন ইসলাম, রবিউল হোসেনকে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
রংপুর ১ম ইনিংস: ৬৩.৪ ওভারে ১৮৯ (মোসাদ্দেক ৭, রিজওয়ান ৯, মামুন ১, নাঈম ২৮, আকবল ১২, তানবির ০, আরিফুল ১০৩*, নবীন ০, রবিউল ১, সাকলাইন ১৬, আবু হাসিম ২; ওয়ালিদ ১৮-৬-৪৫-১, মোহর ১৫-৫-৪৪-১, সাব্বির ১৫-৪-৪৭-৬, কিবরিয়া ৬-০-১৯-০, সানজামুল ৪-০-১৩-১, ওয়াসি ৫.৪-২-১৪-১)
রাজশাহী ১ম ইনিংস: ১৬ ওভারে ৩৯/১ (হাবিবুর ১২*, মিজানুর ৫, সাব্বির ১৭*; সাকলাইন ৬-২-১৫-১, রবিউল ৬-৩-৩-০, মামুন ৩-০-১৩-০, হাসিম ১-০-৪-০)
অমিতের সেঞ্চুরি, পিনাকের আক্ষেপ
কক্সবাজারের একাডেমি মাঠে ব্যাট হাতে আলো ছড়ান অমিত। খুলনার বিপক্ষে তার অপরাজিত সেঞ্চুরিতে ৩ উইকেটে ২৪৪ রান নিয়ে প্রথম দিন শেষ সিলেট।
১ ছক্কা ও ৮ চারে ১০৯ রান করে দলকে টানছেন অমিত। আগের রাউন্ডে ফিফটি করা ব্যাটসম্যানের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে এটি অষ্টম সেঞ্চুরি।
অল্পের জন্য তিন অঙ্কের ঠিকানায় পা রাখতে পারেননি পিনাক। টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা সিলেটকে দারুণ শুরু এনে দেওয়া ওপেনার আউট হন ৯৯ রানে। তার ২১৮ বলের ইনিংস গড়া ১ ছক্কা ও ১২ চারে। চলতি জাতীয় লিগের প্রথম দুই রাউন্ডে দুটি ফিফটি করেছিলেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।
এই ম্যাচ দিয়ে দীর্ঘ প্রায় দেড় বছর পর স্বীকৃত ক্রিকেটে ফিরেছেন ইবাদত হোসেন। গত বছরে হাঁটুতে চোট পেয়েছিলেন সিলেটের এই পেসার। ফেরার ম্যাচে অবশ্য এখনও ব্যাটিং–বোলিং করার সুযোগ আসেনি তার।
সিলেটের পড়া ৩ উইকেটের সবকটি নিয়েছেন শেখ মেহেদী হাসান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
সিলেট ১ম ইনিংস: ৮৭.৪ ওভারে ২৪৪/৩ (পিনাক ৯৯, তৌফিক ৪, মুবিন ২১, অমিত ১০৯*, আসাদুল্লাহ ৮*; জিয়াউর ২-১-১-০, সালমান ৭.৪-০-৪৭-০, মেহেদি ৩৪-৬-৮২-৩, হালিম ১৩-১-৪০-০, টিপু ২৫-৪-৫১-০, আফিফ ৫-০-১৬-০, ইমরুল ১-০-৫-০)
তাসামুলের ফিফটি
ভালো শুরু পেয়েও ইনিংস বড় করতে পারলেন না বরিশালের দুই ওপেনার। পরে টপাটপ কয়েকটি উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া দলকে টানলেন তাসামুল হক। তার ফিফটি ও মইন খানের অপরাজিত ইনিংসে দুইশ ছাড়িয়েছে বরিশালের রান।
কক্সবাজারের শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে চট্টগ্রামের বিপক্ষে ৭ উইকেটে ২৩৬ রান নিয়ে প্রথম দিন শেষ করেছে বরিশাল।
টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে দলকে ভালো শুরু এনে দেন ইফতেখার হোসেন ও আব্দুল মজিদ। তাদের উদ্বোধনী জুটিতে আসে ৬২ রান। দুইজনেই ফিরে যান ফিফটির আগে। ৩ চারে ৩৭ রান করেন ইফতেখার। মজিদের ব্যাট থেকে আসে ৫ চারে ৩৯।
বিনা উইকেটে ৬২ রান থেকে ৬৬ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় বরিশাল। ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় থাকা দল কিছুক্ষণ পর আরও দুটি উইকেট হারায়। ১২০ রানে ৫ উইকেট হারানো দলকে টানেন তাসামুল। সোহাগ গাজীর সঙ্গে ৩৯ ও মইন খানের সঙ্গে ৭৭ রানের জুটি গড়েন তিনি।
৫ চারে ৫৩ রান করে বিদায় নেন তাসামুল। সমান বাউন্ডারিতে ৪৩ রান নিয়ে অপরাজিত আছেন মইন।
চট্টগ্রামের হয়ে তিনটি করে উইকেট নেন এনামুল হোক আশিক ও মোহাম্মদ আশরাফুল হাসান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বরিশাল ১ম ইনিংস: ৯১.১ ওভারে ২৩৬/৭ (ইফতেখার ৩৭, মজিদ ৩৯, জসিম ৪, ফজলে মাহমুদ ০, সালমান ১০, তাসামুল ৫৩, সোহাগ ২২, মইন ৪৩*; এনামুল ১২-৫-৩১-৩, সাজ্জাদ ১৯-২-৫৭-০, নাঈম ৩৫-১২-৬৫-০, আশরাফুল ২৩-৬-৫৪-৩, সাজ্জাদুল ২-১-১-০, শামীম ০.১-০-০-১)
সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়ে ফিরলেন শামসুর
সিলেট একাডেমি মাঠে দারুণ ব্যাটিংয়ে নিজেকে মেলে ধরলেন শামসুর রহমান। সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগালেন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিন অঙ্কের কাঙ্ক্ষিত ঠিকানায় পৌঁছাতে পারলেন না ঢাকা মেট্রোর ব্যাটসম্যান।
১ ছক্কা ও ৯ চারে ৮৬ রান করে ফেরেন শামসুর। তার ফিফটিতে ঢাকা বিভাগের বিপক্ষে ৬ উইকেটে ২৩৩ রান নিয়ে দিন শেষ করে ঢাকা মেট্রো।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা ঢাকা মেট্রোর হয়ে শুরুটা ভালো করেন নাঈম শেখ। কিন্তু বড় ইনিংস খেলতে পারেননি বাঁহাতি ওপেনার। ফেরেন ৪টি চারে ৩১ রান করে।
ভালো শুরু পান আইচ মোল্লাও। তিনিও ব্যর্থ ইনিংস বড় করতে। তিনে নেমে করেন ৫ চারে ৪২ রান। এরপর দলকে টানেন শামসুর। ১১০ বলে স্পর্শ করেন তিনি ফিফটি। আসরে এনিয়ে তৃতীয় ফিফটি করলেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান।
ঢাকা বিভাগের এনামুল হক নেন তিনটি উইকেট। দুটি শিকার ধরেন শুভাগত হোম চৌধুরি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ঢাকা মেট্রো ১ম ইনিংস: ৯০ ওভারে ২৩৩/৬ (নাঈম শেখ ৩১, মাহফিজুল ৬, আইচ ৪২, আইয়ুব ৫, শামসুর ৮৬, আমিনুল ১৯, তাহজিবুল ২৯*, আবু হায়দার ২*; সাকিল ১৫-৩-৩৮-১, রিপন ১৫-৩-৪৫-০, এনামুল ১৩-২-৪৬-৩, শুভাগত ১৮-৫-৪২-২, নাজমুল ২৪-৬-৪৪-০, তাইবুর ৪-৩-১-০, মোসাদ্দেক ১-০-৪-০)