টেস্ট সিরিজের আগে প্রস্তুতি ম্যাচে দারুণ বালিং পারফরম্যান্সে নিজেদের তৈরি করে নিলেন বাংলাদেশের বোলাররা।
Published : 19 Nov 2024, 09:14 AM
স্লিপ থেকে সিলি মিড অফ পর্যন্ত তিন ফিল্ডার দাঁড়ালেন ব্যাটসম্যানকে ঘিরে। পরে লেগ স্লিপেও একজনকে দাঁড় করালেন অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ। ব্যাটসম্যানকে চেপে ধরার এই আয়োজন হাসান মুরাদের হ্যাটট্রিকের জন্য। তবে কোনো ফিল্ডারকে প্রয়োজন হলো না বাঁহাতি এই স্পিনারের। তার দারুণ একটি ডেলিভারি পিচ করে উইথ দা আর্ম ভেতরে ঢুকে ছোবল দিল ব্যাটসম্যানের প্যাডে। জোরাল আবেদনে একটু ভেবে আঙুল তুলে দিলেন আম্পায়ার। হ্যাটট্রিক!
আগের দুই উইকেট নিয়ে সেভাবে উদযাপনই করেননি মুরাদ ও বাংলাদেশ দলের কেউ। তবে প্রস্তুতি ম্যাচ হলেও হ্যাটট্রিক তো ভিন্ন ব্যাপার! এবার তাই মুরাদকে মধ্যমণি করে উদযাপন হলো খানিকটা। স্বীকৃত কোনো ম্যাচ নয় বলে এই হ্যাটট্রিক অবশ্য থাকবে না রেকর্ড বইয়ে।
হ্যাটট্রিকের রেশ থাকতে থাকতেই ফুটবল নিয়ে মাঠে নেমে পড়লেন বাইরে থাকা লিটন কুমার দাস, জাকের আলিরা। যেটির মানে, ম্যাচের সমাপ্তি ওখানেই।
শুধু মুরাদ নয়, বৃষ্টিবিঘ্নিত দিনে যতটুকু খেলা হলো, তাতে প্রস্তুতি খারাপ হলো না তাসকিন আহমেদ, হাসান মাহমুদ ও অন্য বোলারদের।
অ্যান্টিগায় দুই দিনের প্রস্তুতি ম্যাচের দ্বিতীয় দিনে সোমবার প্রথম দুই সেশন খেলাই হয়নি বৃষ্টির কারণে। পরে ২৫.৪ ওভার খেলা হয়। ওয়েস্ট ইন্ডিজ নির্বাচিত একাদশ ৯ উইকেটে ৮৭ রান তোলার পর ড্র হয় ম্যাচ।
১.৪ ওভার বোলিং করে ১ রানে ৩ উইকেট নেন মুরাদ। তাসকিন ও হাসানের শিকার দুটি করে উইকেট, শরিফুল ইসলাম ও মিরাজের একটি করে।
আগের দিন শেষ বিকেলে শূন্য রানে আউট হয়েছিলেন ক্যারিবিয়ানদের এই ম্যাচের অধিনায়ক ও তাদের টেস্ট অধিনায়ক ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট। ১ উইকেটে ৫ রান নিয়ে তারা শুরু করে দ্বিতীয় দিন।
বৃষ্টি শেষে খেলা শুরুর পর বাংলাদেশকে খুব একটা অপেক্ষা করতে হয়নি প্রথম উইকেটের জন্য। তাসকিনের ফুল লেংথ বল দ্বিতীয় স্লিপে মিরাজের হাতে তুলে দেন জশুয়া ডর্ন।
আগের দিন দারুণ ডেলিভারিতে ব্র্যাথওয়েটকে আউট করা হাসান আরেকটি উইকেট নিতেও খুব দেরি করেননি। পাঁচ স্লিপ নিয়ে তিনি বোলিং করছিলেন জর্ডান জনসনের জন্য। ভেতরে ঢোকা দুর্দান্ত ডেলিভারিতে বোল্ড করে দেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যানকে।
তাসকিনের দ্বিতীয় শিকার কিমানি মেলিয়াস। ২৩ রান করা ওপেনার তাসকিনের শর্ট ডেলিভারিতে আলতো পুল শটে বল তুলে দেন শর্ট মিড উইকেটে শরিফুলের হাতে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের টেস্ট স্কোয়াডে থাকা টেভিন ইমলাখও ভালো কিছু করতে পারেননি। শরিফুলের ভেতরে ঢোকা ডেলিভারি না খেলে ছেড়ে দিয়ে ৬ রানে এলবিডব্লিউ হন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান।
টেস্ট স্কোয়াডে থাকা জাস্টিন গ্রিভস ও তরুণ ড্যানিয়েল বেকফোর্ড এরপর একটু লড়াইয়ের চেষ্টা করেন। বাংলাদেশের পেস সামাল দিয়ে ৪২ রানের জুটি গড়েন তারা।
বল হাতে নিয়ে প্রথম ডেলিভারিতেই এই জুটি ভাঙেন মেহেদী হাসান মিরাজ। যদিও এখানে কৃতিত্ব বেশি ফিল্ডারের। মিরাজের প্রথম বলটিই স্লগ করে তুলে মারেন ২০ রানে থাকা গ্রিভস। মিড উইকেট সীমানা থেকে অনেকটা দৌড়ে দুর্দান্ত ডাইভিং ক্যাচ নেন মাহমুদুল হাসান জয়।
পরের ওভারেই মুরাদের হ্যাটট্রিক। ওভারের দ্বিতীয় বলে এলবিডব্লিউ হন ১৯ রানে থাকা বাঁহাতি বেকফোর্ড। পরের বলটি তো কিছুই বুঝতে পারেননি নেভিন বিদেইজি। বল টার্ন করে বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের ব্যাট-প্যাডের ফাঁক গলে আঘাত করে স্টাম্পে।
পরের বলে শেইম হোল্ডারকে এলবিডব্লিউ করে হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন মুরাদ। এরপরই ম্যাচ শেষের ইশারা করেন বাংলাদেশ কোচ ফিল সিমন্স।
আগের দিন ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের টপ অর্ডার খুব ভালো করতে পারেননি। মুমিনুল হক আউট হন ৩১ রান করে। পরে লিটন কুমার দাস (৩১), জাকের আলি (৪৮) ও মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন (৪১) কিছু রানের দেখা পান। তিন ব্যাটসম্যানই স্বেচ্ছাবসরে যান অন্যদের সুযোগ দিতে।
প্রস্তুতি ম্যাচ শেষে এবার মূল লড়াইয়ের অপেক্ষা। দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথমটি অ্যান্টিগায় শুরু শুক্রবার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৭৩.২ ওভারে ২৫৩/৭ (ডিক্লে.)
ক্রিকেট ওয়েস্ট ইন্ডিজ নির্বাচিত একাদশ: ২৭.৪ ওভারে ৮৭/৯ (ব্র্যাথওয়েট ০, মেলিয়াস ২৩, ডর্ন ৭, জনসন ৬, ইমলাখ ৬, গ্রিভস ২০, বেকফোর্ড ১৯, এডওয়ার্ড ০*, বিদেইজি ০, হোল্ডার ০; হাসান ৬-১-১৫-২, নাহিদ ৭-০-২৮-০, ৫-১-২১-২, শরিফুল ৩-০-১২-১, তাইজুল ৪-১-৪-০, মুরাদ ১.৪-০-১-৩, মিরাজ ১-১-০-১)।