ভারত-নিউ জিল্যান্ড সিরিজ
পুনে টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষে ৩০১ রানে এগিয়ে নিউ জিল্যান্ড, ১২ বছর পর দেশের মাঠে সিরিজ হারার শঙ্কায় ভারত।
Published : 25 Oct 2024, 05:34 PM
স্পিন সহায়ক উইকেটের সুবিধা দারুণভাবে কাজে লাগালেন মিচেল স্যান্টনার। ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে প্রায় একাই ভারতের ব্যাটিং গুঁড়িয়ে দিলেন তিনি। পরে ব্যাট হাতে আলো ছড়ান টম ল্যাথাম। শেষ পর্যন্ত অধিনায়ক সেঞ্চুরি করতে না পারার আক্ষেপ নিয়ে ফিরলেও, বড় লিডের পথে ছুটছে নিউ জিল্যান্ড।
পুনে টেস্টে শুক্রবার ভারতের প্রথম ইনিংস স্রেফ ১৫৬ রানে গুটিয়ে দিয়েছে কিউইরা। পরে ব্যাটিংয়ে নেমে ৫ উইকেটে ১৯৮ রান নিয়ে দ্বিতীয় দিন শেষ করেছে তারা।
প্রথম ইনিংসে ১০৩ রানের লিড পাওয়া নিউ জিল্যান্ড এখন এগিয়ে ৩০১ রানে।
বেঙ্গালুরুতে সিরিজের প্রথম টেস্টটি ৮ উইকেটে জিতে তিন ম্যাচের সিরিজে এগিয়ে আছে কিউইরা। ১২ বছর পর ঘরের মাঠে টেস্ট সিরিজ হারের শঙ্কায় পড়েছে ভারত। সবশেষ, ২০১২ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে চার টেস্টের সিরিজ ২-১ ব্যবধানে হেরেছিল তারা।
টেস্টে এর আগে কখনও ইনিংসে ৪ উইকেট না পাওয়া স্যান্টনার এবার দেখান চমক। বাঁহাতি স্পিনে একাই ভারতের সাত ব্যাটসম্যানকে ফেরান তিনি ৫৩ রান খরচায়। প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ারে ৬৩ ম্যাচে আগে স্রেফ একবারই পাঁচ শিকার ধরতে পেরেছিলেন, ৫১ রান দিয়ে।
ভারতের মাঠে নিউ জিল্যান্ডের কোনো বোলারের দ্বিতীয় সেরা বোলিং পারফরম্যান্স এটি। তিন বছর আগে মুম্বাইয়ে ১১৯ রানে ১০ উইকেট নিয়েছিলেন আরেক বাঁহাতি স্পিনার এজাজ প্যাটেল।
প্রথম ইনিংসে ১৫ রান করা ল্যাথাম এবার মেলে ধরেন নিজেকে। সেঞ্চুরির দারুণ সম্ভাবনা জাগিয়ে ফেরেন ১৪ রান দূরে থাকতে। তার ৮৬ রানের ইনিংসটি গড়া ১০ চারে।
প্রথম ইনিংসে সাত উইকেট নিয়ে চমকে দেওয়া ওয়াশিংটন সুন্দার দ্বিতীয় ইনিংসেও দুর্দান্ত বোলিং করছেন, প্রতিপক্ষের পতন হওয়া পাঁচ উইকেটের চারটিই নিয়েছেন তিনি। টেস্টে প্রথম ও প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বার ম্যাচে ১০ উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়েছেন এই অলরাউন্ডার।
১ উইকেটে ১৬ রান নিয়ে দিন শুরু করা ভারত শিবিরে পরপর দুই ওভারে আঘাত হানেন স্যান্টনার। শুভমান গিলকে এলবিডব্লিউ করার পর ফ্লাইটের ধাঁধায় ফেলে বোল্ড করে দেন ভিরাট কোহলিকে। আড়াআড়ি ব্যাটে খেলতে গিয়ে কার্যত ফুল টস বল ব্যাটেই লাগাতে পারেননি ভারতীয় ব্যাটিংয়ের সবচেয়ে বড় তারকা।
দুই বাঁহাতি ইয়াসাসভি জয়সওয়াল ও রিশাভ পান্তকে আউট করেন অফ স্পিনার গ্লেন ফিলিপস। এরপর বাকিটা স্যান্টনারের গল্প। এই স্পিনারের বলে একবার স্লিপে জীবন পেয়েও বড় ইনিংস খেলতে পারেননি সারফারাজ খান। স্যান্টনারকেই উইকেট দিয়ে আসেন তিনি।
রাভিচান্দ্রান অশ্বিনকে টিকতে দেননি স্যান্টনার। উইকেটে অনেকটা সময় কাটানো রাভিন্দ্রা জাদেজাকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে পূর্ণ করেন টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম পাঁচ উইকেট।
পরে আকাশ দিপ ও জাসপ্রিত বুমরাহকে ফিরিয়ে ভারতের ইনিংস গুটিয়ে দেন স্যান্টনার।
প্রতিপক্ষকে অল্পে গুটিয়ে দেওয়ার স্বস্তি নিয়ে ব্যাটিংয়ে নামা নিউ জিল্যান্ড দ্রুত হারায় ডেভন কনওয়েকে। প্রথম ইনিংসে সাত উইকেট নেওয়া ওয়াশিংটন সুন্দারের বলে এলবিডব্লিউ হন এই বাঁহাতি ওপেনার। ভালো শুরু পাওয়া উইল ইয়াংকে ইনিংস বড় করতে দেননি অশ্বিন। রাচিন রাভিন্দ্রাকে বোল্ড করার পর ড্যারিল মিচেলকে দ্রুত বিদায় করেন ওয়াশিংটন।
ততক্ষণে অবশ্য দুইশ পেরিয়ে গেছে নিউ জিল্যান্ডের লিড। এরপর টম ব্লান্ডেলকে নিয়ে ৬০ রানের জুটি গড়েন ল্যাথাম। মনে হচ্ছিল তার সেঞ্চুরি কেবল সময়ের ব্যাপার। কিন্তু তাকে এলবিডব্লিউ করে হতাশায় ডোবান ওয়াশিংটন।
দিনের বাকিটা সময় গ্লেন ফিলিপসকে নিয়ে কাটিয়ে দেন ব্লান্ডেল। ৩০ রানে অপরাজিত আছেন এই কিপার-ব্যাটসম্যান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
নিউ জিল্যান্ড ১ম ইনিংস: ২৫৯
ভারত ১ম ইনিংস: ৪৫.৩ ওভারে ১৫৬ (আগের দিন ১৬/১) (জয়সওয়াল ৩০, গিল ৩০, কোহলি ১, পান্ত ১৮, সারফারাজ ১১, জাদেজা ৩৮, অশ্বিন ৪, ওয়াশিংটন ১৮*, আকাশ ৬, বুমরাহ ০; সাউদি ৬-১-১৮-১, ও’রোক ৩-২-৫-০, এজাজ ১১-১-৫৪-০, স্যান্টনার ১৯.৩-১-৫৩-৭, ফিলিপস ৬-০-২৬-২)
নিউ জিল্যান্ড ২য় ইনিংস: ৫৩ ওভারে ১৯৮/৫ (ল্যাথাম ৮৬, কনওয়ে ১৭, ইয়াং ২৩, রাভিন্দ্রা ৯, মিচেল ১৮, ব্লান্ডেল ৩০*, ফিলিপস ৯*; অশ্বিন ১৭-১-৬৪-১, ওয়াশিংটন ১৯-০-৫৬-৪, জাদেজা ১১-১-৫০-০, বুমরাহ ৬-১-২৫-০)