নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়েছে অস্ট্রেলিয়া।
Published : 28 Oct 2023, 03:29 PM
খুনে ব্যাটিংয়ে উড়ন্ত শুরু করলেন দুই ওপেনার। মাঝে কিছুটা খেই হারালেও অস্ট্রেলিয়ার পরের ব্যাটসম্যানরা ফের চালালেন তাণ্ডব। শেষ দিকে নিউ জিল্যান্ড দ্রুত লেজ মুড়িয়ে দেওয়ার পরও রান-পাহাড় গড়ল পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।
ধারামশালায় শনিবার দিনের প্রথম ম্যাচে আগে ব্যাট করে ৩৮৮ রানের সংগ্রহ দাঁড় করেছে অস্ট্রেলিয়া। শেষ দিকে স্রেফ ১ রানের মধ্যে ৪ উইকেট হারিয়ে ইনিংসের ৪ বল বাকি থাকতেই অল আউট হয়ে গেছে তারা।
ওয়ানডেতে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে এটিই অস্ট্রেলিয়ার সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ। ক্যানবেরায় ২০১৬ সালে তারা করেছিল ৩৭৮ রান। বিশ্বকাপে কিউইদের বিপক্ষে যে কোনো দলেরই সর্বোচ্চ এটি। ২০০৭ সালে অস্ট্রেলিয়াই করেছিল ৩৪৮ রান।
বিশ্বকাপে কখনও ৩০০ বা তার বেশি রান তাড়া করে জেতেনি নিউ জিল্যান্ড। এই সংস্করণে তাদের সর্বোচ্চ রান তাড়ার রেকর্ড ভারতের বিপক্ষে ২০২০ সালে ৩৪৮ রান। তাই জয় পেতে নতুন ইতিহাসই গড়তে হবে গত দুই বিশ্বকাপের রানার্স-আপদের।
অস্ট্রেলিয়াকে রান পাহাড়ে তোলার বড় কারিগর ডেভিড ওয়ার্নার, ট্র্যাভিস হেড। উদ্বোধনী জুটিতে দুজন যোগ করেন ১৭৫ রান। হাতের চোট কাটিয়ে ফিরে বিশ্বকাপে নিজের প্রথম ম্যাচেই ১০৯ রানের ইনিংস খেলেন হেড। দারুণ ছন্দে থাকা ওয়ার্নার করেন ৮১ রান।
মাঝে ইনিংসের গতি কিছুটা কমে গেলেও শেষ দিকে গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, জশ ইংলিস, প্যাট কামিন্সদের ঝড়ো ফিনিশিংয়ে চারশর কাছাকাছি যায় অস্ট্রেলিয়া।
তাদের কাজ সহজ করে নিউ জিল্যান্ডের এলোমেলো ফিল্ডিং। পুরো ইনিংসে অন্তত পাঁচটি ক্যাচ ছাড়ে টম ল্যাথামের নেতৃত্বে খেলতে নামা দলটি।
ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানরা মেরেছে মোট ২০টি ছক্কা। বিশ্বকাপে এক ইনিংসে এর চেয়ে বেশি ছক্কার নজির রয়েছে শুধু ইংল্যান্ডের। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ঘরের মাঠে ২০১৯ সালের আসরে তারা মেরেছিল ২৫ ছক্কা।
এছাড়া ওয়ানডেতে এক ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার সর্বোচ্চ ছক্কার রেকর্ড এটি। আগের রেকর্ড বেঙ্গালোরে ২০১৩ সালে ভারতের বিপক্ষে ১৯ ছক্কা।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরু থেকেই বোলারদের ওপর স্টিম রোলার চালাতে থাকেন হেড, ওয়ার্নার। পঞ্চম ওভারে পূর্ণ হয় পঞ্চাশ, নবম ওভারে তারা ছুঁয়ে ফেলে দলীয় শতক। পাওয়ার প্লেতে আসে ১১৮ রান।
স্রেফ ২৫ বলে ফিফটি স্পর্শ করেন হেড। বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে এর চেয়ে কম বলে ফিফটি আছে শুধু ম্যাক্সওয়েলের, ২১ বলে। এছাড়া গত আসরে অ্যালেক্স কেয়ারিও করেন ২৫ বলে ফিফটি।
২০তম ওভারে ওয়ার্নারের বিদায়ে ভাঙে ১১৫ বল স্থায়ী ১৭৫ রানের শুরুর জুটি। সে সময় রান রেট ছিল ৯.১৩।
ওয়ানডেতে অন্তত ১০০ বল খেলা উদ্বোধনী জুটির মধ্যে এটাই সেরা রান রেট। আগের সেরা ইংল্যান্ডের জনি বেয়ারস্টো ও জেসন রয়ের ৯.০৮। ২০১৯ সালে ব্রিস্টলে পাকিস্তানের বিপক্ষে তারা ১০৫ বলে তুলেছিলেন ১৫৯ রান।
গ্লেন ফিলিপসকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে আউট হওয়া ওয়ার্নার ৫ চার ও ৬ ছক্কায় খেলেন ৬৫ বলে ৮১ রানের ইনিংস। চলতি আসরে এটি তার টানা তৃতীয় পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংস। আগের দুই ম্যাচে তিনি খেলেন ১৬৩ ও ১০৪ রানের ইনিংস।
ওয়ার্নারের বিদায়ের পর ৫৯ বলে সেঞ্চুরি করেন হেড। ওয়ানডেতে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে এর চেয়ে কম বলে শতক আছে শুধু ম্যাক্সওয়েল (দুটি, ৪০ ও ৫১ বলে) ও জেমস ফকনারের (৫৭ বলে)।
বিশ্বকাপে নিজের প্রথম ম্যাচে সেঞ্চুরি করা পঞ্চম অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান হেড। ফিলিপসের বলে বোল্ড হয়ে ড্রেসিং রুমে ফেরার আগে ৬৭ বলে ১০ চার ও ৭ ছক্কায় ১০৯ রান করেন বাঁহাতি ওপেনার।
মিচেল মার্শ, স্টিভেন স্মিথ, মার্নাস লাবুশেনরা হতাশ করলে কিছুটা কমে আসে রানের গতি। আগের ম্যাচে স্রেফ ৪০ বলে সেঞ্চুরি ছোঁয়া ম্যাক্সওয়েল ফের হাওয়া দেন রানের পালে। ৫ চার ও ২ ছক্কায় ২৪ বলে তিনি করেন ৪১ রান।
তবু শঙ্কায় পড়ে যায় অস্ট্রেলিয়ার সাড়ে তিনশ করার আশা। সেখান থেকে ইংলিস, কামিন্স স্রেফ ২২ বলে যোগ করেন ৬২ রান। ৪ চার ও ১ ছক্কায় ২৮ বলে ৩৮ রান করেন ইংলিস। অধিনায়ক কামিন্স খেলেন ২ চার ও ৪ ছক্কায় ১৪ বলে ৩৭ রানের ইনিংস।
অস্ট্রেলিয়ার ছক্কার রেকর্ড গড়া ইনিংসে বোলারদের মধ্যে সমীহ আদায় করতে পারেন শুধু ফিলিপস। ক্যারিয়ারে প্রথমবার ১০ ওভার বোলিং করে স্রেফ ৩৭ রানে ৩ উইকেট নেন অনিয়মিত এই অফ স্পিনার।
পুরো ম্যাচে বেধড়ক মার হজম করা ট্রেন্ট বোল্ট নিজের শেষ ওভারে ধরেন ৩ শিকার। দশ ওভারে তার খরচ ৭৭ রান।