নাঈম শেখের বিধ্বংসী সেঞ্চুরিতে মোহামেডানকে হারাল আবাহনী

ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের আরেক ম্যাচে ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে হ্যাটট্রিকসহ ৫ উইকেট নিয়েছেন আলাউদ্দিন বাবু।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 March 2023, 01:54 PM
Updated : 22 March 2023, 01:54 PM

কামরুল ইসলামের প্রথম দুই ডেলিভারি এক্সট্রা কাভার দিয়ে চার মারলেন মোহাম্মদ নাঈম শেখ। তৃতীয় বলটি স্লটে পেয়ে ডিপ মিডউইকেট দিয়ে আছড়ে ফেললেন গ্যালারিতে। ৮৭ থেকে তিন বলেই কাঙ্ক্ষিত সেঞ্চুরিতে পৌঁছে বাঁধনহারা উদযাপনে মেতে উঠলেন তিনি। তার বিস্ফোরক ইনিংসে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবকে উড়িয়ে দিল আবাহনী লিমিটেড।

মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে বুধবার ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচে মোহামেডানকে ৬ উইকেটে হারায় আবাহনী। নাঈম শেখের ঝড়ে প্রতিপক্ষের ২৩৫ রান তারা পেরিয়ে যায় ৯৩ বল বাকি থাকতে।

ইনিংস শুরু করতে নেমে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়ার সময় নাঈম শেখের নামের পাশে জ্বলজ্বল করছিল ১১০ রান। ৪ ছক্কা ও ১১ চারে সাজানো ৮৬ বলের ইনিংসে ম্যাচ সেরা তিনি। জাতীয় দল থেকে বাদ পড়া আফিফ হোসেন করেন ৩ ছক্কা ও ৪টি চারে ৪৯ রান।

দুই ওপেনার ইমরুল কায়েস ও মাহিদুল ইসলামের ফিফটিতে ভালো শুরু পাওয়া মোহামেডানকে বেশিদূর যেতে দেননি সাইফ উদ্দিন। ৪৫ রানে ৪ উইকেট নেন তিনি।

ইমরুল ও মাহিদুলের ১৩৭ রানের উদ্বোধনী জুটিতে শক্ত ভিত পায় টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা মোহামেডান। ২ ছক্কা ও ৫ চারে ৬৮ রান করেন ইমরুল। মাহিদুলের ব্যাট থেকে আসে ২ ছক্কা ও ৭ চারে ৭০।

এরপর দলটির আর কেউ সেভাবে ক্রিজে দাঁড়াতে পারেনি। সৌম্য সরকার, মাহমুদউল্লাহ, শুভাগত হোম যেতে পারেননি দুই অঙ্কে।

দলটি দুইশ পার করে মূলত ভারতের অনুষ্টুপ মজুমদার ও আরিফুল ইসলামের ব্যাটে। অনুষ্টুপ ২ চারে করেন ৩০ রান, আরিফুল ২ চারে ৩৭ রান করে থাকেন অপরাজিত।

রান তাড়ায় এনামুল হককে দ্রুত হারিয়ে কিছুটা চাপে পড়া আবাহনীকে টানেন নাঈম শেখ। তাকে কিছুক্ষণ সঙ্গ দেন মাহমুদুল হাসান জয় (৩ চারে ২৪)। ইন্দ্রজিৎ বাবা যেতে পারেননি দুই অঙ্কে।

আফিফকে নিয়ে ৯২ রানের জুটিতে দলকে জয়ের দিকে এগিয়ে নেন নাঈম শেখ। পরে মোসাদ্দেক হোসেনের সঙ্গে ৫৮ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে বাকি কাজ সারেন তিনি।

৮০ বলে নাঈম শেখ স্পর্শ করেন ক্যারিয়ারের সপ্তম লিস্ট ‘এ’ সেঞ্চুরি। এবারের প্রিমিয়ার লিগে বেশ ভালো ফর্মে আছেন তিনি। আগের দুই ম্যাচ করেছিলেন ৮৫ ও ৪৩ রান।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব: ৫০ ওভারে ২৩৫/৮ (ইমরুল ৬৮, মাহিদুল ৭০, সৌম্য ১, মাহমুদউল্লাহ ৩, অনুষ্টুপ ৩০, আরিফুল ৩৭*, শুভাগত ০, সাইফুল ৫, কামরুল ৬, এনামুল জুনি. ৮*; সাইফ ১০-১-৪৫-৪, তানজিম ১০-১-৫৪-২, তানভির ১০-০-৩৯-২, মোসাদ্দেক ৯-০-৩৭-০, রকিবুল ১০-০-৪৪-০, আফিফ ১-০-১১-০)

আবাহনী লিমিটেড: ৩৪.৩ ওভারে ২৩৬/৪ (এনামুল ১৭, নাঈম শেখ ১১০*, মাহমুদুল ২৪, ইন্দ্রজিৎ ৯, আফিফ ৪৯, মোসাদ্দেক ২৫*; শুভাগত ৪-০-২৮-০, এনামুল জুনি. ৭-০-২৬-১, রুয়েল ৩-০-২৮-১, মাহমুদউল্লাহ ৮-০-৩৯-১, কামরুল ৪-০-৪৩-০, সাইফুল ৫-০-৩৮-০, সৌম্য ২-০-২৩-১, অনুষ্টুপ ১-০-১০-০, ইমরুল ০.৩-০-১-০)

ফল: আবাহনী লিমিটেড ৬ উইকেটে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: নাঈম শেখ

হ্যাটট্রিকসহ আলাউদ্দিন বাবুর ৫ উইকেট

ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে বোলিংয়ে এসে পরপর তিন বলে উইকেট তুলে নিয়ে আলাউদ্দিন বাবু উপহার দিলেন এবারের প্রিমিয়ার লিগে প্রথম হ্যাটট্রিক। পরে আরও দুই শিকার ধরে পূর্ণ করলেন পাঁচ উইকেট। তার ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সকে হারায় রূপগঞ্জ টাইগার্স।

বিকেএসপির চার নম্বরে মাঠে রূপগঞ্জের জয় ১১ রানে। টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নামা দলটি ২৫১ রানের পুঁজি নিয়ে গাজী গ্রুপকে থামিয়ে দেয় ২৪০ রানে।

স্রেফ ৩৫ রান দিয়ে ৫ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতেন আলাউদ্দিন। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে তার আগের সেরা ছিল ২৭ রানে ৪ উইকেট।

রূপগঞ্জকে আড়াইশ ছাড়ানো সংগ্রহ এনে দেওয়ার পথে পাঁচটি করে ছক্কা-চারে ৬৮ রান করেন ওপেনার ইমরানুজ্জামান। ৪ নম্বরে নেমে ২ ছক্কা ও ৫ চারে ৭৮ রান করেন অধিনায়ক নাঈম ইসলাম।

শেষ দিকে ৫ চারে ৪৩ রান করেন সানজামুল ইসলাম। দুর্দান্ত বোলিং করা আলাউদ্দিন ব্যাট হাতেও রাখেন অবদান। ১ ছক্কা ও ২ চারে করেন ১৯ বলে ২৬ রান।

আলাউদ্দিনের ছোবলে শুরুতেই চাপে পড়ে যায় গাজী গ্রুপ। নিজের দ্বিতীয় বলে হাবিবুর রহমানকে ফিরিয়ে তিনি শুরু করেন শিকার। পরের দুই বলে অমিত মজুমদারকে কট বিহাইন্ড করার পর রবি তেজাকে বোল্ড করে ভাসেন হ্যাটট্রিকের আনন্দে।

দ্রুত আরও তিন ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে গাজী গ্রুপের স্কোর দাঁড়ায় ৬ উইকেটে ৪১ রান। ভীষণ বিপদে পড়া দলকে জয়ের আশা দেখান আকবর আলি ও এনামুল হক। দুইজনে গড়েন ১৪২ রানের জুটি।

জমে ওঠা লড়াইয়ে ২ ছক্কা ও ৭ চারে ৮৮ রান করা আকবরকে ফিরিয়ে ওই জুটি ভাঙেন সানজামুল। সেই সঙ্গে হাত থেকে ছুটতে বসা ম্যাচে ফেরে তারা। শেষ দুই ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে পাঁচ উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি প্রতিপক্ষের ইনিংস গুটিয়ে দেন আলাউদ্দিন।

৩ ছক্কা ও ২ চারে ৮২ রান করে অপরাজিত থাকেন এনামুল।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

রূপগঞ্জ টাইগার্স: ৫০ ওভারে ২৫১/৮ (ইমতিয়াজ ৪, ইমরানুজ্জামান ৬৮, মুমিনুল ৫, নাঈম ইসলাম ৭৮, আমানদিপ ১, শামীম ১, সালমান ১, সানজামুল ৪৩, আলাউদ্দিন ২৬*, নাঈম হাসান ৬*; সুমন ১০-১-৬৩-২, রবি ৪-০-৩৫-০, হুসনা হাবিব ১০-০-৪৭-২, অনিক ১০-০-৫২-১, এনামুল ১০-৩-২৩-২, মাহমুদুল ৬-১-২৯-০)

গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স: ৪৮.৪ ওভারে ২৪০ (মারুফ ১০, হাবিবুর ০, অমিত ০, রবি ০, মাহমুদুল ১১, মেহেরব ১২, আকবর ৮৮, এনামুল ৮২*, অনিক ১৪, সুমন ৬, হুসনা হাবিব ২; মুকিদুল ৯-০-৪৪-১, আলাউদ্দিন ৯.৪-১-৩৫-৫, নাঈম ১০-০-৫৫-২, সালমান ৪-০-২৫-০, সানজামুল ১০-১-৪০-১, মুমিনুল ৬-০-৩৫-১)

ফল: রূপগঞ্জ টাইগার্স ১১ রানে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: আলাউদ্দিন বাবু

মার্শালের সেঞ্চুরি, ইলিয়াসের ৫ উইকেট

চার নম্বরে নেমে চমৎকার এক সেঞ্চুরি উপহার দেন মার্শাল আইয়ুব। সঙ্গে সাদমান ইসলামের ফিফটিতে আড়াইশ ছাড়ানো পুঁজি গড়ে অগ্রনী ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব। পরে ইলিয়াস সানির ছোবলে দেড়শও করতে পারেনি ঢাকা লেপার্ডস।

বিকেএসপির তিন নম্বর মাঠে নবাগত দুই দলের লড়াইয়ে ১২১ রানের বড় জয় পেয়েছে অগ্রণী ব্যাংক। ২৫৮ রানের পুঁজি নিয়ে প্রতিপক্ষে তারা গুটিয়ে দিয়েছে স্রেফ ১৩৭ রানে।

২ ছক্কা ও ৩ চারে ঠিক ১০০ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জিতে নেন মার্শাল। ৫ চারে ৭৩ রান আসে সাদমানের ব্যাট থেকে।

ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে ৩৪ রান ৫ উইকেট নেন বাঁহাতি স্পিনার ইলিয়াস। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে এই প্রথম পাঁচ উইকেট পেলেন তিনি।

টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ৪৪ রানে ২ উইকেট হারানো অগ্রণী ব্যাংককে কক্ষপথে রাখেন সাদমান ও মার্শাল। দুজনে গড়েন ১০১ রানের জুটি।

সাদমান আগেভাগে বিদায় নিলেও সেঞ্চুরি পূর্ণ করে শেষ ওভারে ফেরেন মার্শাল। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে এটি তার চতুর্থ শতক।

জবাব দিতে নেমে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারায় লেপার্ডস। তাদের হয়ে সর্বোচ্চ ৩১ রান করেন মইন খান।

ইলিয়াসের পাঁচ শিকার ছিলেন সাব্বির হোসেন, জুনায়েদ সিদ্দিক, রকিবুল হাসান, মইন ও সালাউদ্দিন শাকিল।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

অগ্রণী ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব: ৫০ ওভারে ২৫৮/৭ (আজমির ৪, সাদমান ৭৩, ফাহিম ১৭, মার্শাল ১০০, আজিম ২৮, আবু হায়দার ৬, জাহিদ ১৪, শরিফুল্লাহ ২*, ইলিয়াস ১*; শাকিল ১০-০-৪৫-৩, সোহেল ১০-০-৫০-২, চতুরাঙ্গা ১০-০-৪৯-২, সোহরাওয়ার্দী ৯-০-৫৭-০, মইন ৯-০-৩৭-০, ইমরান ২-০-১৬-০)

ঢাকা লেপার্ডস: ৩৬.৩ ওভারে ১৩৭ (সাব্বির ২১, পিনাক ১৭, জেম ৪, জুনায়েদ ৭, রকিবুল ১৭, সোহরাওয়ার্দী ৭, মইন ৩১, চতুরাঙ্গা ১৪, ইমরান ৯*, শাকিল ০, সোহেল ০; আবু হায়দার ৫-০-৩৮-১, শরিফুল্লাহ ৬-১-১৯-১, সানি ৮.৩-১-২৫-২, ইলিয়াস ১০-১-৩৪-৫, এনামুল ৫-০-১৫-০, জাহিদ ২-০-২-০)

ফল: অগ্রণী ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব ১২১ রানে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: মার্শাল আইয়ুব