ভারত-নিউ জিল্যান্ড সিরিজ
প্রথম ইনিংসে ভরাডুবির পর ঘুরে দাঁড়ানোর অভিযানে অনেকটা পথ এগোলেও ফের কঠিন অবস্থায় পড়ে গেছে ভারত।
Published : 19 Oct 2024, 06:59 PM
উইলিয়াম ও'রোকের হালকা লাফিয়ে ওঠা ডেলিভারি স্কয়ার ড্রাইভের চেষ্টায় স্টাম্পে টেনে আনলেন রিশাভ পান্ত। নিস্তব্ধ হয়ে গেল চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের গ্যালারি। যেন লেখা হয়ে গেল ম্যাচের ভাগ্যও। ধসে পড়ল ভারতের ইনিংস। স্বাগতিকদের ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প ছাপিয়ে, জয়ের দারুণ সম্ভাবনায় এখন নিউ জিল্যান্ড।
বেঙ্গালুরু টেস্টের চতুর্থ দিন শেষে জয়ের সুবাস পেতে শুরু করেছে কিউইরা। ম্যাচের শেষ দিন সবকটি উইকেট হাতে রেখে জয়ের জন্য তাদের প্রয়োজন ১০৭ রান।
বৃষ্টির বাগড়া পেরিয়ে শনিবার ৪৬২ রানে অলআউট হয়েছে ভারত। প্রথম ইনিংসে নতুন বলে খাবি খাওয়া দলটি দ্বিতীয়বার ধসে পড়েছে দ্বিতীয় নতুন বলে। ৮০ ওভার পেরুনোর পর, বাকি ৭ উইকেট হারিয়ে আর মাত্র ৬২ রান করতে পেরেছে স্বাগতিকরা।
প্রথম ইনিংসে ৩৫৬ রানে পিছিয়ে থাকা ভারতকে লিড এনে দেওয়ার কারিগর সারফারাজ খান। ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিতে ১৫০ রান করেন তরুণ মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যান। তিন অঙ্কের আশা জাগিয়ে ৯৯ রানে আউট হন পান্ত।
নিউ জিল্যান্ডের থেকে ১২৫ রান দূরে থাকতে দিনের খেলা শুরু করেন সারফারাজ ও পান্ত। শুরু থেকেই ইতিবাচক ব্যাটিং করতে থাকেন দুজন। দিনের দ্বিতীয় ওভারে ও'রোকের বলে দুটি বাউন্ডারি মারেন সারফারাজ।
পরে ম্যাট হেনরির ওভারে দুইটি চার মেরে নব্বইয়ে পৌঁছে যান ২৬ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান। ৫৬তম ওভারে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউটের শঙ্কায় পড়েছিলেন পান্ত। তবে নিউ জিল্যান্ডের ফিল্ডিং ব্যর্থতায় সে দফায় ভাঙেনি জুটি।
পরের ওভারে টিম সাউদির বলে দারুণ ব্যাকফুট পাঞ্চে তিন অঙ্কে পৌঁছান সারফারাজ। চার ম্যাচের ক্যারিয়ারে ১১২ বলে প্রথম সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তিনি। আনন্দ-উচ্ছ্বাসে বাতাসে ব্যাট ঘুরিয়ে উদযাপন সারেন সারফারাজ।
সাউদির বলে ছক্কা মেরে হাত খোলেন পান্ত। এজাজ প্যাটেলের ওভারে দুই ছক্কার পর মারেন বাউন্ডারি। মধ্যাহ্ন বিরতির আগে গ্লেন ফিলিপ্সের বলে চার মেরে ৫৫ বলে ফিফটি করেন উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান।
দুপুরে নামে বৃষ্টি। প্রায় পৌনে দুই ঘণ্টা বন্ধ থাকে খেলা। পুনরায় শুরু হলে প্রথম ওভারেই রাচিন রাভিন্দ্রার বলে ছক্কা মারেন পান্ত। পরের ওভারে ও'রোকের বলে মারেন দুটি চার। নিউ জিল্যান্ড বিশাল লিড ছাপিয়ে এগিয়ে যায় ভারত।
৮০ ওভারে চারশ পূর্ণ হয় ভারতের। ৮৪তম ওভারে দেড়শ রানের ঠিকানায় পৌঁছে যান সারফারাজ।
এরপরই নিউ জিল্যান্ডের ঘুরে দাঁড়ানোর শুরু। সাউদির হালকা লাফানো ডেলিভারিতে ড্রাইভ খেলার চেষ্টায় কভারে ক্যাচ দেন সারফারাজ। ১৯৫ বলের ইনিংসে ১৮ চারের সঙ্গে ৩টি ছক্কা মারেন তিনি। ভাঙে ১৭৭ রানের জুটি।
তবু দমে যেতে চাননি পান্ত। সাউদির পরের ওভারে স্লগ সুইপ করে ছক্কায় ৯৭ রানে পৌঁছে যান বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। কিন্তু তাকে আর বেশি দূর যেতে দেননি ও'রোক। নতুন স্পেলে ফিরে ৯ চার ও ৫ ছক্কায় ৯৯ রান করা পান্তকে ফেরান তরুণ পেসার।
এ নিয়ে সপ্তমবার নব্বই ছুঁয়ে সেঞ্চুরির আগে আউট হলেন পান্ত। তার অভিষেকের পর থেকে আর কোনো ব্যাটসম্যান তিনবারের বেশি নব্বই ছুঁয়ে সেঞ্চুরির আগে আউট হননি। আর সব মিলিয়ে পান্তের চেয়ে বেশি নব্বইয়ে কাটা পড়া ব্যাটসম্যান মাত্র ৫ জন।
ও'রোকের পরের দুই ওভারে ফিরে যান লোকেশ রাহুল ও রাভিন্দ্রা জাদেজা। এই তিন ওভারে কোনো রান দেননি ২৩ বছর বয়সী পেসার।
এরপর দুই ওভারের মধ্যে ভারতের বাকি ৩ উইকেট নেন ম্যাট হেনরি। মাত্র ৫৪ রানে শেষ ৭ উইকেট হারিয়ে ফেলায় নিউ জিল্যান্ডকে বড় লক্ষ্য দিতে পারেনি স্বাগতিকরা।
দিনের শেষ দিকে ব্যাটিংয়ে নামে কিউইরা। তবে আলোকস্বল্পতায় প্রথম ওভার পুরো হওয়ার আগেই বন্ধ হয়ে যায় খেলা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত ১ম ইনিংস: ৪৬
নিউ জিল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৪০২
ভারত ২য় ইনিংস: ৯৯.৩ ওভারে ৪৬২ (আগের দিন ২৩১/৩) (সারফারাজ ১৫০, পান্ত ৯৯, রাহুল ১২, জাদেজা ৫, অশ্বিন ১৫, কুলদিপ ৬*, বুমরাহ ০, সিরাজ ০; সাউদি ১৫-২-৫৩-১, হেনরি ২৪.৩-৩-১০২-৩, ও'রোক ২১-৪-৯২-৩, এজাজ ১৮-৩-১০০-২, ফিলিপ্স ১৫-২-৬৯-১, রাভিন্দ্রা ৬-০-৩০-০)
নিউ জিল্যান্ড ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ১০৭) ০.৪ ওভারে ০/০ (ল্যাথাম ০*, কনওয়ে ০; বুমরাহ ০.৪-০-০-০)