Published : 28 Apr 2025, 08:56 PM
দেড় সেশনের বেশি ব্যাটিং করে ততক্ষণে বড় ইনিংসের পথে নিক ওয়েলচ। বাংলাদেশের বোলিং সামলাতে খুব সমস্যা হচ্ছিল না তার। তবে সাগরিকার তীব্র গরমে বিদ্রোহ করে বসল শরীর। কয়েকবার শুশ্রূষা নিলেন জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যান। তবে চা বিরতির পর আর পারলেন না। এক বল খেলেই ছেড়ে গেলেন মাঠ।
স্টাম্প মাইকে তখন জাকের আলিকে বলতে শোনা যায়, 'এই সুযোগে ৩-৪ উইকেট নিয়ে নিই…।' উইকেটরক্ষকের সেই চাওয়া পূরণ করতে সময় নেননি বাংলাদেশের বোলাররা। তাইজুল ইসলাম, নাঈম হাসানদের ঘূর্ণিতে বেকায়দায় পড়ে যায় জিম্বাবুয়ে। দিনের খেলা শেষে তাই ওয়েলচের পেশির টানকেই টার্নিং পয়েন্ট বলেন সফরকারীদের ব্যাটিং কোচ ডিওন ইব্রাহিম।
চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দিনটি স্পষ্টত ছিল দুই ভাগে বিভক্ত। টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে দিনের প্রথম দুই সেশনে স্বাগতিকদের তেমন সুযোগই দেয়নি জিম্বাবুয়ে। প্রথম সেশনে তবু দুই ওপেনারকে ফিরিয়ে আনন্দের উপলক্ষ পায় বাংলাদেশ। মধ্যাহ্ন বিরতির পর উইকেটও পড়তে দেননি ওয়েলচ ও উইলিয়ামস।
অবিচ্ছিন্ন জুটিতে ৮৯ রান যোগ করে চা বিরতিতে যান দুই ব্যাটসম্যান। আউট না হলেও তীব্র গরমের কারণে বেশ কয়েকবার বাহু ও হ্যামস্ট্রিংয়ে টান অনুভব করেন ওয়েলচ। পরে বিরতি থেকে ফিরেও এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাননি। প্রথম বল মোকাবিলা করেই তিনি বুঝে যান, খেলা চালিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। তাই ৫৪ রানে অপরাজিত থেকে মাঠ ছেড়ে যান।
ওয়েলচের বিদায়ে ছেদ পড়ে উইলিয়ামসের সঙ্গে তার ২৩০ বলে ৯০ রানের জুটির। এরপর আবার জুটি গড়ার দিকে মন দেন উইলিয়ামস ও ক্রেইগ আরভাইন। কিন্তু দুই প্রান্ত থেকে দুই অফ স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ ও নাঈম হাসানের সামনে একদম সুবিধা করতে পারেননি জিম্বাবুয়ের দুই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।
চা বিরতির পর ওয়েলচ ছেড়ে যান মাঠ। বাংলাদেশের আঁটসাঁট বোলিংয়ে প্রথম ৯ ওভারে মাত্র ৪ রান করতে পারে জিম্বাবুয়ে। রানের চাকা থমকে যাওয়ায় যেন নিজেদের ওপর চাপ নিয়ে নেন উইলিয়ামস ও আরভাইন। নাঈমের বলে বাউন্ডারি মারেন আরভাইন। মিরাজের বল সীমানার ওপারে পাঠিয়ে খোলস ভাঙার আভাস দেন উইলিয়ামস। কিন্তু দুজনের কেউই টিকতে পারেননি।
পরপর দুই ওভারে দুজনকে ফিরিয়ে দেন নাঈম। দুটিই ছিল আলগা শট। অফ স্টাম্পের বাইরের বল কাট করতে গিয়ে কট বিহাইন্ড হন আরভাইন। লেগ স্টাম্পের বাইরের ডেলিভারি সুইপ করতে গিয়ে ক্যাচ দেন উইলিয়ামস।
এরপর পুরোটাই তাইজুলের গল্প। দ্রুত সময়ের আরও ৪ উইকেট নিয়ে নেন অভিজ্ঞ স্পিনার। প্রথম দুই সেশনে উড়তে থাকা জিম্বাবুয়ে দিন শেষ করে ৯ উইকেটে ২২৭ রানে। শেষের ৭ উইকেট তারা হারায় মাত্র ৪০ রানে।
দিনের খেলা শেষে সংবাদ সম্মেলনে ডিওন ইব্রাহিম বলেন, ওয়েলচের ক্র্যাম্প থেকেই তাদের পতনের শুরু।
“চা বিরতির ঠিক আগে হ্যামস্ট্রিং ও বাহুতে গুরুতর ক্র্যাম্পের শিকার হয় নিক (ওয়েলচ)। এটি ক্রমেই বেড়েছে। মাঠেও হয়তো শুশ্রূষা নিতে দেখেছেন। চা বিরতিতে ড্রেসিং রুমে আসার পর আরও চিকিৎসা দিয়েছি। দুর্ভাগ্যবশত চা বিরতির পর তার অবস্থা দ্রুত খারাপ হয়েছে। তাই সেরে ওঠার আশায় তাকে ফিরিয়ে আনতে হয়েছে।”
“তার বিদায়ের পর দুর্ভাগ্যবশত আমরা টানা কয়েকটি উইকেট খুইয়ে ফেলি। আমার মনে হয়, তখনই আমরা কঠোর পরিশ্রম করে গড়া মোমেন্টামটা হারিয়ে ফেলি। বিশেষ করে ওয়েলচের সঙ্গে উইলিয়ামসের জুটিটা। এরপর (ওয়েসলি) মাধেভেরে ও (টাফাডজোয়া) সিগা আবার সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছিল।”
জিম্বাবুয়ের ব্যাটিংয়ে ধস নামানো তাইজুলের ভাবনা অবশ্য কিছুটা ভিন্ন। তিনি বরং জুটি বেঁধে নিজেদের আঁটসাঁট বোলিংকে কৃতিত্ব দেন।
“ওটাও (ওয়েলচের পেশির টান) একটা টার্নিং পয়েন্ট হতে পারে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো, একটা সময় আমাদের প্রত্যেকটা বোলার অনেক আঁটসাঁট বোলিং করেছি। টানা কয়েকটা ওভার মেডেন হয়েছে। টেস্ট ম্যাচে এগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ। যখন জুটি বেঁধে বোলিং হয়, উইকেট পড়ার সুযোগ থাকে। হয়তো সেটাই হয়েছে।”
বড় স্কোর গড়ার সম্ভাবনা জাগিয়েও আড়াইশর আগে গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় জিম্বাবুয়ে। দিন শেষে তাই আরও কিছুটা আক্ষেপ করলেন তাদের ব্যাটিং কোচ।
“বাংলাদেশের বিপক্ষে তাদের মাঠে এমন শক্তিশালী স্পিন আক্রমণের বিপক্ষে খেললে পার স্কোর যাচাই করা কঠিন। অবশ্যই আমরা হতাশ। আরও ৪০-৫০ রান করতে পারলে ভালো হতো। তবু, প্রথম সেশন থেকে যেভাবে টার্ন পাওয়া গেছে, আমরা আশাবাদী।”
তবে স্বাগতিক ব্যাটিংকে চাপে ফেলার মতো সামর্থ্য নিজ দলের আছে মনে করেন ডিওন ইব্রাহিম।
“নির্দিষ্ট কারণেই আমরা বাড়তি স্পিনার নিয়েছি। আমার মতে, দুই দল প্রথম ইনিংসে ব্যাটিং করার আগ পর্যন্ত ম্যাচটি ভারসাম্যপূর্ণই থাকবে। বাংলাদেশের ব্যাটিংকে চাপে ফেলতে পারার ব্যাপারে আমরা আত্মবিশ্বাসী।”