পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক মঈন খানের ছেলে আজম খান প্রথম শতরানের দেখা পেলেন বিপিএল খেলতে এসে।
Published : 10 Jan 2023, 10:34 AM
‘আপনার বাবা তো অভিষেকেই সেঞ্চুরি করেছিলেন, ৯৩তম ম্যাচে এসে আপনি অবশেষে শতরানের দেখা পেলেন…’, সংবাদ সম্মেলনে এই প্রশ্ন হতেই হাসলেন আজম খান। তার বাবা পাকিস্তানের সাবেক-কিপার ব্যাটসম্যান ও অধিনায়ক মঈন খান যখন সেঞ্চুরিটি করেন, আজমের বয়স তখন সাত বছরও হয়নি। এখন ২৪ বছর বয়সী আজম বলছেন, “তার সেই সেঞ্চুরিটি আমার মনে আছে, লাহোরের বিপক্ষে করেছিলেন।”
মঈনের ক্যারিয়ারে তখন গোধূলি বেলা, তবে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট ছিল ঊষালগ্নে। সময়টা ২০০৫ সাল। ওই বছরের এপ্রিলে স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতে প্রথমবার খেলতে নামলেন তিনি লাহোরে করাচি ডলফিন্সের হয়ে। এমনিতে ক্যারিয়ারের বেশির ভাগ সময়ই তিনি খেলেছেন মিডল বা লোয়ার মিডল অর্ডারে। লাহোর লায়ন্সের বিপক্ষে সেদিন অধিনায়ক মঈন নামলেন তিন নম্বরে। ৮ চার ও ৬ ছক্কায় করলেন ৫৯ বলে ১১২।
তার ছেলে আজম খান টি-টোয়েন্টি জমানার ক্রিকেটার। পরিচিতিও গড়ে তুলেছেন টি-টোয়েন্টি বিশেষজ্ঞ হিসেবে। জাতীয় দলে খেলেছেন এই সংস্করণে। তবে প্রথমবার তিন অঙ্কের স্বাদ পেতে তার লাগল ৯৩ ম্যাচ।
একটা বড় কারণ তার ব্যাটিং অর্ডার। বাবার মতো কিপিং করেন তিনিও। ব্যাট করেন মূলত পাঁচ-ছয় নম্বরে। কখনও কখনও আরও নিচে। বড় শট খেলতে পারেন, বেশির ভাগ সময়ই ফিনিশারের ভূমিকা থাকে তার। এবার খুলনা টাইগার্সে তিনি পাচ্ছেন ভিন্ন ভূমিকা। বিপিএলের প্রথম দুই ম্যাচেই তাকে চার নম্বরে নামিয়েছে দল।
প্রথম ম্যাচে আউট হয়ে যান ১২ বলে ১৮ রান করে। দ্বিতীয় ম্যাচে শনিবার ৯ চার ও ৮ ছক্কায় খেলেন ৫৮ বলে ১০৮ রানের ইনিংস।
বাবার অভিষেক সেঞ্চুরিটি তিনি দেখেছিলেন বলে জানালেন ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে। নিজের শতরান পেতে এত দেরির পেছনের কারণ হিসেবে বললেন ব্যাটিং অর্ডারের কথাই।
“তার সেই সেঞ্চুরিটি আমার মনে আছে, লাহোরের বিপক্ষে করেছিলেন। সেদিন তিনি তিন নম্বরে খেলেছিলেন। আমি সাধারণ পাঁচ-ছয়ে ব্যাট করি। তবে এখানে চারে ব্যাট করার সুযোগ মিলছে প্রথমবার। আমার জন্য দারুণ অভিজ্ঞতা। ওপরে দিকে ব্যাট করলে অনেক ওভার হাতে থাকে, নিজের মতো করে ইনিংস গড়ার সুযোগ পাওয়া যায়।”
৯৩ টি-টোয়েন্টির পাশাপাশি লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে তিনি খেলেছেন ২২ ম্যাচ। সাদা বলের ক্রিকেটেই তার প্রথম সেঞ্চুরি এটি। ইনিংসটি তাই তিনি নিশ্চিতভাবেই ভুলবেন না কখনও। তবে ম্যাচটি অবশ্য শেষ পর্যন্ত হেরে যায় তার দল। আরেক পাকিস্তানি উসমান খানের সেঞ্চুরিতে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স ম্যাচ জিতে নেয় ৯ উইকেটে।
আজমের অভিজ্ঞতাও তাই অম্লমধুর। সেঞ্চুরির উচ্ছ্বাস যেমন আছে, তেমনি তাকে পোড়াচ্ছে দলের হার।
“আমার জন্য এটা বড় অর্জন। আমি এখন বিশ্বজুড়ে নানা লিগে খেলছি। বড় তারকাদের সঙ্গে খেলে অভিজ্ঞতা হচ্ছে। প্রথমবার বিপিএল খেলতে পারা আমার জন্য রোমাঞ্চকর। খুবই খুশি যে প্রথম সেঞ্চুরিও পেয়েছি এখানে। তবে সেঞ্চুরির পর ম্যাচ হেরে খারাপ লাগছে।”
তার বাবা মঈন খান বাংলাদেশে খেলে গেছেন বেশ কবারই। এখানকার উইকেট নিয়ে ভালো ধারণা তার আছে। আজম এখানে খেলতে এলেন প্রথমবার। আসার আগে বাবার কাছ থেকে পরামর্শ যথেষ্টই পেয়েছেন তিনি, যা কাজে লেগেছে শনিবারের ম্যাচে।
“যখন তাকে বললাম যে বিপিএলে একটি দল আমাকে নিয়েছে, তখন বেশ ভালো আলোচনা হয়েছিল আমাদের, যে এখানে কীভাবে খেলতে হবে। তিনি আমাকে বলেছিলেন এখানে একটু বেশি সময় উইকেটে থাকতে। কারণ ঢাকায় উইকেট বেশ ‘ট্রিকি’ হতে পারে। আমি সেটাই চেষ্টা করেছি। দ্রুত দুটি উইকেট হারানোর পর টিকে থাকতেই হতো আমাকে।”
খেলোয়াড়ি জীবন শেষে মঈন খান এখন কোচ হিসেবেও নিজের আলাদা জায়গা করে নিয়েছেন পাকিস্তানের ক্রিকেটে। তার ক্রিকেট একাডেমি বেশ খ্যাতি কুড়িয়েছেন। পাকিস্তান সুপার লিগসহ ঘরোয়া ক্রিকেটে কোচ হিসেবে তিনি কাজ করে চলেছেন দক্ষতার সঙ্গে।
বাবার সঙ্গে ক্রিকেট নিয়ে অনেক কথাও হয় আজমের। তবে সেখানে টেকনিক সংক্রান্ত আলোচনা খুব একটা থাকে না বলেই জানালেন বিখ্যাত বাবার উঠতি ছেলে।
“বাবার সঙ্গে সাধারণ আমি টেকনিক নিয়ে ততটা কথা বলি না। শুধু কৌশল নিয়ে আলোচনা করি। কৌশলই আসল ব্যাপার ক্রিকেটে। ক্রিকেটে বড় দৈর্ঘ্যের ম্যাচে টেকনিক কখনও কখনও গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু সংক্ষিপ্ত সংস্করণে এটা তেমন গুরুত্ব নেই। ইদানিং তো কিছু ক্রিকেটারকে দেখে থাকবেন, প্রচুর অপ্রথাগত শট খেলে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এসব লাগেই।”
মঈন পরিচিত ছিলেন তার ভয়ডরহীন ক্রিকেটের কারণে। বিপর্যয়ের মধ্যে দারুণ সব ইনিংসের কারণে তাকে বলা হতো ‘ক্রাইসিস ম্যান।’ সময়ের চেয়ে এগিয়ে থাকা উদ্ভাবনী সব শটও খেলতেন তিনি। বিশেষ করে, তাই সুইপ শট ছিল বিখ্যাত। অ্যালান ডোনাল্ডের মতো গতিময় ফাস্ট বোলার, গ্লেন ম্যাকগ্রার মতো নিখুঁত লাইন-লেংথের বোলারকেও তিনি হাঁটু গেড়ে চার-ছক্কা মেরে দিয়েছেন।
আজমের এই সেঞ্চুরির ইনিংসেও দেখা গেছে সেসব শটের কিছু ছাপ। পেসার মেহেদী হাসান রানার অফ স্টাম্পের বাইরের একটি বলে সুইপ করে ছক্কা মেরেছেন। বাবার মতো শট খেলেছেন আরও কয়েকটি। আজম বললেন, টি-টোয়েন্টির দাবি মেটাতেই এসব শট আত্মস্থ করছেন তিনি।
“টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এরকম শট শিখতেই হয়। সংক্ষিত সংস্করণে সবসময়ই চটপটে থাকতে হয়। এই স্কিলগুলোয় আমি তাই উন্নতি কার চেষ্টা করছি। ভবিষ্যতে আরও কাজ করে আরও ভালো হয়ে ওঠার চেষ্টা করব।”