জাতীয় ক্রিকেট লিগ
জাতীয় ক্রিকেট লিগের চতুর্থ রাউন্ডে ম্যাচের শেষ দিন তিন অঙ্কের দেখা পেলেন মোহাম্মদ মিঠুন, দারুণ বোলিংয়ে ৬ উইকেট নিলেন এনামুল হক।
Published : 12 Nov 2024, 05:47 PM
তৌফিক খানের শর্ট ডেলিভারি ছক্কা মেরে শতরানে পৌঁছে গেলেন মোহাম্মদ মিঠুন। উদযাপনের মাঝেই তার সঙ্গে হাত মেলাতে চলে এলেন সিলেটের ফিল্ডাররা। কেননা ড্র মেনে নিতে যে এই সেঞ্চুরির অপেক্ষায়ই ছিল দুই দল।
জাতীয় ক্রিকেট লিগের চতুর্থ রাউন্ডে মিঠুনের সেঞ্চুরির দিনে রান পেয়েছেন খুলনার এনামুল হক, ইমরুল কায়েস, কাজী নুরুল হাসান সোহানরাও। অন্য ম্যাচে বল হাতে ৬ উইকেট নিয়েছেন ঢাকার পেসার এনামুল হক।
৭ ছক্কায় মিঠুনের সেঞ্চুরি
কক্সবাজার একাডেমি মাঠে ফল আসেনি সিলেট ও খুলনার ম্যাচে। ফলো-অনে পড়ে দ্বিতীয় ইনিংসে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে খুলনা। মিঠুনের সেঞ্চুরি ছাড়াও ফিফটি করেছেন এনামুল, ইমরুল ও সোহান।
সিলেটের ৭ উইকেটে ৪৯৬ রানের জবাবে প্রথম ইনিংসে ২৭৩ রানে গুটিয়ে যায় খুলনা। তাই তাদের আবার ব্যাটিংয়ে নামায় সিলেট। দ্বিতীয়বার মাত্র ৩ উইকেটে হারিয়ে ২৯৬ রান করে ফেলে খুলনা।
চার ম্যাচে সিলেটের এটি দ্বিতীয় ড্র। সঙ্গে দুই জয়ে মোট ১৬ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষস্থান ফিরে পেয়েছে তারা। কয়েক ঘণ্টা আগে রাজশাহীকে হারিয়ে এক নম্বরে উঠেছিল রংপুর। চার ম্যাচে এক জয় ও তিন ড্রয়ে ১৪ পয়েন্ট নিয়ে চার নম্বরে খুলনা।
দিনের শুরুতে অমিত মজুমদারের উইকেট হারিয়ে কিছুটা চাপে পড়ে সোহানের নেতৃত্বাধীন দল। দ্বিতীয় উইকেটে ১০১ রানের জুটি গড়ে প্রাথমিক ধাক্কা সামাল দেন এনামুল ও ইমরুল। ২ চার ও ৩ ছক্কায় এনামুল করেন ৫৪ রান।
এরপর মিঠুনের সঙ্গে আরও ৫৩ রান যোগ করেন ইমরুল। সেঞ্চুরির আশা জাগালেও ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হয়ে যান ৭ চার ও ২ ছক্কায় ৭১ রান করা অভিজ্ঞ বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।
আর উইকেট পড়তে দেননি মিঠুন ও সোহান। অবিচ্ছিন্ন জুটিতে মাত্র ১৩০ বলে ১২৬ রান যোগ করেন তারা। ৭টি চারের সঙ্গে ৭টি ছক্কা মেরে ১০৮ বলে ক্যারিয়ারের ১৬তম সেঞ্চুরি করেন মিঠুন। ৬ চার ও ১ ছক্কায় ৬০ বলে ৫০ রান করেন সোহান।
প্রথম ইনিংসে ১১ ওভার বোলিং করা ইবাদত হোসেন দ্বিতীয়বার হাত ঘোরান ৪ ওভার। প্রায় ১৬ মাস পর স্বীকৃত ক্রিকেটে ফিরে তার প্রাপ্তি ১ উইকেট।
একমাত্র ইনিংসে ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি করে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতে অমিত হাসান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
সিলেট ১ম ইনিংস: ৪৯৬/৭ ডিক্লে.
খুলনা ১ম ইনিংস: ২৭৩
খুলনা ২য় ইনিংস: (ফলো-অন) ৭৫.৫ ওভারে ২৯৬/৩ (এনামুল ৫৪, অমিত ৫, ইমরুল ৭১, মিথুন ১০২*, সোহান ৫০*; ইবাদত ৪-১-১০-০, খালেদ ৯-৪-২১-০, তোফায়েল ৬-১-১৯-১, নাঈম ১৯-৪-৫৩-০, নাবিল ১৬-৩-৬৩-১, রাহাতুল ১৫-১-৮৯-০, তৌফিক ২.৫-০-১৫-০, গালিব ৪-০-১৩-০)
ফল: ম্যাচ ড্র
ম্যন অব দা ম্যাচ: অমিত হাসান
এনামুলের ৬ উইকেটের পর ঢাকার লড়াই
সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের একাডেমি মাঠে শেষ দিকে জমে উঠেছিল ঢাকা মেট্রো ও ঢাকা বিভাগের লড়াই। মেট্রোর বোলিং সামলে ব্যাটিং দৃঢ়তা ও প্রকৃতির সহায়তায় পরাজয় এড়িয়ে ড্র নিয়ে মাঠ ছাড়তে পেরেছে ঢাকা।
জয়ের জন্য শেষ দিন ৫৭ ওভারে ২৫৭ রানের লক্ষ্য পায় ঢাকা। তারা ৪৩ ওভারে ৮ উইকেটে ১৪৮ রান করার পর আলোকস্বল্পতায় আর খেলা সম্ভব হয়নি। তাই জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়েও ড্র নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয় মেট্রোর।
চার ম্যাচে মেট্রোর এটি প্রথম ড্র। সঙ্গে দুই জয়ে মোট ১৯ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের তিন নম্বরে তারা। সমান ম্যাচে মাত্র ৮ পয়েন্ট নিয়ে সাত নম্বরে ঢাকা।
৬ উইকেটে ১৮৬ রান নিয়ে মঙ্গলবার খেলা শুরু করে মেট্রো। ঢাকার বোলারদের হতাশ করে সপ্তম উইকেট জুটিতে পঞ্চাশ রান যোগ করেন গাজী তাহজিবুল ইসলাম ও আবু হায়দার। ২০৩ বলে ৪৪ রান করে আউট হন তাহজিবুল।
পরে রকিবুল হাসানের সঙ্গে মিলে দলকে আড়াইশ পার করান আবু হায়দার। ৫ চার, ১ ছক্কায় ৪৭ রান করেন তিনি।
আগের দিন ৩ উইকেট নেওয়া এনামুল এদিন নেন আরও ৩ উইকেট। সব মিলিয়ে ৮১ রানে ৬ উইকেট ২৪ বছর বয়সী পেসারের ক্যারিয়ার সেরা। এ নিয়ে দ্বিতীয় ৫ উইকেট নিলেন তিনি।
রান তাড়ায় ইতিবাচক শুরু করেন ঢাকার দুই ওপেনার আশিকুর রহমান ও রনি তালুকদার। দুজনের উদ্বোধনী জুটিতে ১০ ওভারে আসে ৫৫ রান। আশিকুর ৩২ বলে ৩৪ ও রনি ৩১ বলে ২৪ রান করে আউট হলে খোলসে ঢুকে যায় তারা।
জয়রাজ শেখ, মাহিদুল ইসলাম ও মোসাদ্দেক হসেন হতাশ করলে একপ্রান্ত আগলে রাখেন তাইবুর রহমান। ষষ্ঠ উইকেটে শুভাগত হোমের সঙ্গে ৭৯ বলে ৩২ রানের জুটি গড়েন অভিজ্ঞ বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।
দুজনকেই আউট করেন আবু হায়দার। পরে রকিবুলের বলে এনামুল ক্যাচ আউট হলে জাগে শেষ বেলার রোমাঞ্চের সম্ভাবনা। কিন্তু আলোকস্বল্পতায় সেই সুযোগ পায়নি মেট্রো।
রকিবুল ৪ ও আবু হায়দার নেন ৩ উইকেট।
দ্বিতীয় ইনিংসের ৬ উইকেটের আগে আগে প্রথমবার ৪ উইকেট নেন এনামুল। ম্যাচে ১০ উইকেট নিয়ে তার হাতেই ওঠে ম্যাচ সেরার পুরস্কার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ঢাকা মেট্রো ১ম ইনিংস: ৩০৪
ঢাকা ১ম ইনিংস: ৩১৫
ঢাকা মেট্রো ২য় ইনিংস: ৯৮.১ ওভারে ২৬৭ (আগের দিন ১৮৬/৬) (তাহজিবুল ৪৪, আবু হায়দার ৪৭, রকিবুল ১৩, আরিফ ২, মারুফ ০*; সালাউদ্দিন ১৩-৩-৩২-০, ১৫-২-৪১-২, এনামুল ২১-৪-৮১-৬, শুভাগত ১৫.১-২-৩৩-১, নাজমুল ২০-৬-৩৮-১, তাইবুর ৭-১-১৪-০, মোসাদ্দেক ৭-১-১৪-০)
ঢাকা ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ২৫৭) ৪৩ ওভারে ১৪৮/৮ (আশিকুর ৩৪, রনি ২৩, জয়রাজ ১৪, তাইবুর ৭০, মাহিদুল ০, মোসাদ্দেক ৭, শুভাগত ১৯, রিপন ৬*, এনামুল ০, নাজমুল ০; মারুফ ৪-০-১৮-০, আবু হায়দার ১২-২-৪৫-৩, রকিবুল ১৮-৪-৩৮-৪, আরিফ ৮-১-৩১-১, আইচ ১-০-২-০)
ফল: ম্যাচ ড্র
ম্যান অব দা ম্যাচ: এনামুল হক