ভারত-ইংল্যান্ড সিরিজ
ব্যর্থতার বৃত্তেই বন্দি রইলেন রোহিত শার্মা, ইংল্যান্ডকে হারিয়ে সিরিজে এগিয়ে গেল ভারত।
Published : 06 Feb 2025, 09:19 PM
লাল বল কিংবা সাদা বল, দেশে কিংবা বিদেশে, ঘরোয়া কিংবা আন্তর্জাতিক- সব জায়গায় একই চিত্র; ব্যাট হাতে আরও একবার ব্যর্থ রোহিত শার্মা। অধিনায়কের বিবর্ণ দিনে অবশ্য উজ্জ্বল সহ-অধিনায়ক শুবমান গিল। বোলারদের দারুণ বোলিংয়ের পর তিন ব্যাটসম্যানের ফিফটিতে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে সিরিজে এগিয়ে গেল ভারত।
তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে ভারতের জয় ৪ উইকেটে।
ব্যবধানের চেয়েও সহজভাবে জিতেছে ভারত। ৭ উইকেট হাতে রেখে তাদের দরকার ছিল ২৮ রান। এই পথ পাড়ি দিতে ৩ উইকেট হারায় তারা। ম্যাচ জিতে যায় তারা ৬৮ বল বাকি থাকতেই।
টি-টোয়েন্টি সিরিজ ৪-১ ব্যবধানে জয়ের পর ওয়ানডের শুরুটাও দারুণ হলো ভারতের।
নাগপুরে বৃহস্পতিবার ইংল্যান্ডের উড়ন্ত শুরুর পরও তাদের ২৪৮ রানে গুটিয়ে দিয়ে কাজ এগিয়ে রাখেন ভারতের বোলাররা।
অভিষেকে প্রথম ৩ ওভারে ৩৭ রান দেওয়ার পর ঘুরে দাঁড়িয়ে ৩টি উইকেট নেন হার্শিত রানা। একটি অনন্য কীর্তিও গড়েন ২৩ বছর বয়সী পেসার। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের তিন সংস্করণে অভিষেকে অন্তত ৩টি করে উইকেট নেওয়া প্রথম ভারতীয় ক্রিকেটার তিনিই।
চমৎকার বোলিংয়ে ২৬ রানে ৩ উইকেট নেন অভিজ্ঞ বাঁহাতি স্পিনিং অলরাউন্ডার রাভিন্দ্রা জাদেজাও।
ইংল্যান্ডের হয়ে পঞ্চাশ ছুঁতে পারেন জস বাটলার ও জ্যাকব বেথেল। তবে ইনিংস বড় করতে পারেননি কেউ। পঞ্চাশের ঘরেই আটকে যান এই দুজন।
রান তাড়ায় ১৪ চারে ৯৬ বলে ৮৭ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচ-সেরার স্বীকৃতি পান গিল। ছয় মাস পর আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে নেমে ৯ চার ও ২ ছক্কায় ৩৬ বলে ৫৯ রান করেন শ্রেয়াস আইয়ার। ৪৭ বলে ৫২ রান করেন আকসার প্যাটেল।
ওপেনার রোহিত আউট হন ২ রান করে। ২০২৪-২৫ মৌসুমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সব সংস্করণ মিলিয়ে ১৬ ইনিংসে তার রান মোটে ১৬৬, গড় স্রেফ ১০.৩৭।
দেশের মাটিতে বাংলাদেশ ও নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে এবং অস্ট্রেলিয়া সফরে টেস্ট সিরিজে ব্যর্থতার পর রাঞ্জি ট্রফিতে ফিরেও ভালো করতে পারেননি তিনি। ব্যর্থতার খোলস থেকে বের হতে পারলেন না এবারও।
আরেক তারকা ভিরাট কোহলি এই ম্যাচে খেলতে পারেননি চোটের কারণে। টসের সময় রোহিত জানান, বুধবার সন্ধ্যায় অনুশীলনের সময় ডান হাঁটুতে চোট পান কোহলি।
টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামে ইংল্যান্ড। উইকেটে শুরুতে পেসারদের জন্য মুভমেন্ট থাকলেও ব্যাটিংয়ের জন্য ভালোই ছিল। শুরুটাও ভালো করে সফরকারীরা।
নতুন বলে হার্শিত নিজের দ্বিতীয় ওভার মেডেন নিলেও পরের ওভারে দেন ২৬ রান। এই ওভারে তাকে তিনটি ছক্কার সঙ্গে দুটি চার মারেন ফিল সল্ট।
প্রথম ৮ ওভারে ইংল্যান্ড করে বিনা উইকেটে ৭১ রান। এরপর দ্রুত ৩ উইকেট হারায় তারা।
বিপজ্জনক সল্ট রান আউটে ফেরেন ২৬ বলে ৪৩ রান করে। তার ইনিংসে ৫টি চারের সঙ্গে ছক্কা ছিল ৩টি।
হার্শিত দ্বিতীয় স্পেলে ফিরেই জোড়া শিকার ধরেন বেন ডাকেট ও হ্যারি ব্রুককে ফিরিয়ে। ডাকেটের দারুণ ক্যাচ নেন ওয়ানডে অভিষিক্ত ইয়াশাসভি জয়সওয়াল।
বিনা উইকেটে ৭৫ থেকে ইংলিশদের স্কোর তখন ৩ উইকেটে ৭৭!
প্রায় ১৫ মাস পর ওয়ানডেতে ফিরে জো রুট বিদায় নেন ৩১ বলে ১৯ রান করে। তাকে এলবিডব্লিউ করে প্রথম শিকার ধরেন জাদেজা।
পঞ্চম উইকেটে ৫৯ রানের জুটি গড়েন বাটলার ও বেথেল। শেষ পর্যন্ত এটিই হয়ে থাকে ইনিংস সেরা জুটি। দুজনই বিদায় নেন ফিফটির পরপর। বাটলার ৬৭ বলে করেন ৫২, বেথেল ৬৪ বলে ৫১।
লিয়াম লিভিংস্টোন, ব্রাইডন কার্সরা ভালো করতে পারেননি। জফ্রা আর্চারের ১৮ বলে অপরাজিত ২১ রানের সুবাদে আড়াইশর কাছাকাছি যেতে পারে ইংল্যান্ড।
লক্ষ্য তাড়ায় স্কোর ১৯ রেখে দুই ওপেনার জয়সওয়াল ও রোহিতকে হারায় ভারত। আর্চারের দারুণ ডেলিভারিতে কিপারের গ্লাভসে ধরা পড়েন জওসওয়াল (২২ বলে ১৫)। লেগ সাইডে খেলার চেষ্টায় মিড অনে ক্যাচ দেন রোহিত।
চার নম্বরে নেমেই আক্রমণ শুরু করেন শ্রেয়াস। আর্চারকে টানা দুটি ছক্কা মারেন তিনি। ফিফটি পূর্ণ করেন কেবল ২৮ বলে। তাকে ফিরিয়ে ৬৪ বলে ৯৪ রানের আগ্রাসী জুটি ভাঙেন বেথেল।
চতুর্থ উইকেটে ১০৭ বলে ১০৮ রানের বড় জুটিতে দলকে জয়ের পথে এগিয়ে নেন গিল ও আকসার। গিল ফিফটি করেন ৬০ বলে, পঞ্চাশ ছুঁতে আকসারের লাগে ৪৬ বল।
আকসারকে বোল্ড করে ওই জুটি ভাঙেন লেগ স্পিনার আদিল রাশিদ। রিশাভ পান্তকে পেছনে ফেলে কিপার-ব্যাটসম্যান হিসেবে একাদশে সুযোগ পাওয়া লোকেশ রাহুল ফেরেন ২ রানে।
জয়ের জন্য দলের দরকার যখন ১৮ রান, সেঞ্চুরি থেকে গিল তখন ১৭ রান দূরে। এরপর একটি চার মেরেই বিদায় নেন তিনি শর্ট বলে ক্যাচ দিয়ে।
হার্দিক পান্ডিয়াকে নিয়ে বাকিটা সারেন জাদেজা।
আগামী রোববার হবে দ্বিতীয় ম্যাচ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ইংল্যান্ড: ৪৭.৪ ওভারে ২৪৮ (সল্ট ৪৩, ডাকেট ৩২, রুট ১৯, ব্রুক ০, বাটলার ৫২, বেথেল ৫১, লিভিংস্টোন ৫, কার্স ১০, রাশিদ ৮, আর্চার ২১*, সাকিব ২১*; শামি ৮-১-৩৮-১, হার্শিত ৭-১-৫৩-৩, আকসার ৭-১-৩৮-১, পান্ডিয়া ৭-১-৩৭-০, কুলদিপ ৯.৪-০-৫৩-১, জাদেজা ৯-১-২৬-৩)
ভারত: ৩৮.৪ ওভারে ২৫১/৬ (জয়সওয়াল ১৫, রোহিত ২, গিল ৮৭, শ্রেয়াস ৫৯, আকসার ৫২, রাহুল ২, পান্ডিয়া ৯*, জাদেজা ১২*; আর্চার ৭-১-৩৯-১, সাকিব ৬.৪-০-৪৭-২, কার্স ৫-০-৫২-০, রাশিদ ১০-১-৪৯-২, বেথেল ৩-০-১৮-১, লিভিংস্টোন ৫-০-২৮-০, রুট ২-০-১০-০)
ফল: ভারত ৪ উইকেটে জয়ী
সিরিজ: ৩ ম্যাচের সিরিজে প্রথমটির পর ১-০তে এগিয়ে ভারত
ম্যান অব দা ম্যাচ: শুবমান গিল