অন্য কারও মতো নন, গতি দিয়ে আপন পরিচয়েই পরিচিত হতে চান বাংলাদেশের তরুণ ফাস্ট বোলার, ১৫২ কিলোমিটার গতি ছাড়িয়ে যাওয়ার আশাও করছেন তিনি।
Published : 10 Sep 2024, 02:09 PM
প্রসঙ্গ যখন গতির, ক্রিকেট ইতিহাসের গতিময় সব ফাস্ট বোলারদের ছবি চোখের সামনে ভেসে ওঠে। তবে নাহিদ রানা নিজেকে দেখেন কেবলই আপন আয়নায়। গতি দিয়ে তিনি নিজেকে উপস্থাপন করতে চান আপন পরিচয়েই। সম্প্রতি পাকিস্তান সফরে গতির ঝড় তোলা বাংলাদেশের এই তরুণ ফাস্ট বোলারের আশা, ১৫২ কিলোমিটার ছাড়িয়ে আরও দ্রতগতির ডেলিভারি বের হবে তার হাত থেকে।
গতি দিয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটে বেশ কিছু দিন ধরেই আলোচনায় ছিলেন নাহিদ। এখন তিনি নজর কেড়েছেন ক্রিকেট বিশ্বের।
পাকিস্তান সফরে দুই টেস্টে তার গতিময় বোলিং চমকে দিয়েছে সেখানকার ক্রিকেট মহলকে। যে পাকিস্তান থেকে একসময় ওয়াকার ইউনিস, মোহাম্মদ জাহিদ, শোয়েব আখতারের মতো গতিময় বোলার এসেছে, দুর্দান্ত সব ফাস্ট বোলার উপহার দিয়েছে যে দেশ, সেই পাকিস্তানেই এবার গতি দিয়ে সবাইকে অনেকটা ছাড়িয়ে গেছেন নাহিদ।
নাহিদের গতি দেখে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যমে শোয়েব আখতারের সঙ্গে তুলনাও হয়েছে। তবে তার মতো হতে বা সেই তুলনায় যেতে চান না তিনি নিজে।
বিসিবির সামাজিক মাধ্যমের ভিডিওতে শোয়েবের প্রসঙ্গে কথা উঠতেই মিষ্টি হাসিতে নাহিদের প্রত্যয়ী উচ্চারণ, “আমি কারও মতো হতে চাই না। আমি নাহিদ রানা, নাহিদ রানাই হতে চাই বাংলাদেশের।”
গতিময় ফাস্ট বোলারদের ক্ষেত্রে যুগে যুগেই দেখা গেছে, সাধারণত কাউকে আদর্শ মেনে বা অনুসরণ করে নিজেকে গড়ার চেষ্টা করেন তারা। তবে নাহিদ বললেন, সুনির্দিষ্ট এমন কোনো নায়ক তার ছিল না।
“সত্যি বলতে, সেভাবে কাউকে অনুসরণ করা হয় না আমার। তবে বাংলাদেশের সব পেস বোলারকেই ভালো লাগে আমার। কারণ টিভিতে তাদের খেলা দেখে বড় হয়েছি। সেরকম কেউ একজন নেই। বাংলাদেশ দলের সবাই আমার সিনিয়র। তাদের খেলা টিভিতে দেখে বড় হয়েছি। সবার বোলিংই ভালো লাগে আমার।”
বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ও বিপিএলে গতির ঝড় তোলার পর গত মার্চে সিলেটে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক তার। প্রথম টেস্টে দুই ইনিংস মিলিয়ে পাঁচ উইকেট শিকার করলেও বোলিং খুব গোছানো ছিল না। কিন্তু অনেক উন্নতির ছাপ রাখেন তিনি পাকিস্তান সফরে। তার গতিও যেমন ধারাবাহিকভাবে দেখা যায় আগের চেয়ে বেশি, তেমনি স্কিল, লাইন-লেংথ, ব্যাটসম্যান বুঝে বল করা, আগ্রাসন, সবকিছুতেই ছিল অগ্রগতির পরিষ্কার প্রমাণ।
পাকিস্তানে প্রথম টেস্টে বাবর আজমের উইকেট নেন তিনি। পরের টেস্টে তার বাড়তি বাউন্স সামলাতে না পেরে বিদায় নেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। দ্বিতীয় ইনিংসে তো তার দুর্দান্ত বোলিংয়ে চার উইকেট বাংলাদেশকে অনেকটা এগিয়ে নেয় জয়ের পথে।
সব মিলিয়ে এই সফরে দলের প্রত্যাশা ও নিজের চাওয়াকে একবিন্দুতে মেলাতে পেরে খুশি ২১ বছর বয়সী এই ফাস্ট বোলার।
“স্বপ্নের মতো নয়… তবে আমি যেটা আশা করেছিলাম, দল যেটা আশা করেছিল আমার কাছে, এই জিনিসটা করতে পেরেছি। দেশ ছাড়ার আগে আমি বলেছিলাম যে, দেশের জন্য কিছু করতে চাই। তো করতে পেরেছি, ভালো লেগেছে।”
উইকেট শিকার তো আছেই, তবে তার মূল বিজ্ঞাপন তো গতিই। এখানেই তিনি নিজেকে বিশেষ একজন হিসেবে মেলে ধরেছেন। তার একটি ডেলিভারি ছিল ঘণ্টায় ১৫২ কিলোমিটার গতির। বাংলাদেশের ইতিহাসে গতির রেকর্ড রাখা ডেলিভারিগুলোর হিসেবে এই প্রথম কোনো বোলার স্পর্শ করেছেন দেড়শ কিলোমিটার। এছাড়া ১৪৯ কিলোমিটার গতির ডেলিভারি ছিল বেশকিছু, ১৪৫ ছাড়িয়েছেন তিনি নিয়মিতই।
নাহিদ অবশ্য বললেন, গতির চেয়ে তার বেশি ভাবনা ছিল দলীয় পরিকল্পনা সফল করা নিয়ে।
“এটা কখনও অনুভব করিনি যে ১৫২ করতে হবে বা এর চেয়েও জোরে করতে হবে। একটা ব্যাপারই মাথায় নিয়ে বোলিং করেছি যে, দল আমাকে যে পরিকল্পনা দিয়েছে, সেভাবে করছি এবং নিজের পরিকল্পনা অনুযায়ী করেছি।”
পাকিস্তান সফর তাকে তারকা বানিয়ে দিয়েছে বলা যায়। দেশে ফেরার পর চাঁপাইনবাবগঞ্জে নিজ বাড়িতে ফিরে বিশাল সংবর্ধনা পেয়েছেন তিনি। সংবর্ধনা দেওয়া হয় তার কোচ ও বাংলাদেশের সাবেক টেস্ট পেসার আলমগির কবিরকেও। মানুষের ভালোবাসা তাকে প্রেরণা জুগিয়েছে আরও ভালো করতে।
“তারা সবাই অনেক খুশি। আমার বন্ধুমহল, বাসার সবাই, গ্রামের মানুষ… তারা সবাই অনেক খুশি। বলেছেন যে ‘ভালো হচ্ছে, সামনে এগিয়ে যাও।”
পাকিস্তান-জয়ের পর এখন ভারত সফরের প্রস্তুতি চলছে বাংলাদেশ দলের। নাহিদও নিজেকে শাণিয়ে নিচ্ছেন আরও। আরও ভালো কিছু করার আশা ফুটে উঠল তার কণ্ঠে।
“প্রস্তুতি ভালো হচ্ছে। প্রস্তুতি যত ভালো হবে, ওখানে গিয়ে ম্যাচে তত ভালো করা যাবে। ভারত ভালো দল অবশ্যই। তবে ক্রিকেটে দুই দলের মধ্যে যে ভালো খেলবে, তারাই জিতবে। ম্যাচেই তাই দেখা যাবে।”
“অবশ্যই আমার লক্ষ্য আছে। দলকে সেরাটা এখনও দেওয়ার বাকি আছে। ইনশাল্লাহ দেব।”
সেই সেরাটা দেওয়ার পথে গতিও তো বড় একটা অস্ত্র, যেখানে কৌতূহল থাকবে সবারই। ১৫২ কিলোমিটার গতি কি ছাড়িয়ে যেতে চান? লাজুক হাসিতে নাহিদ বললেন, “গতি ব্যাপারটা তো বলে করা যায় না। এটা ছন্দের ওপর নির্ভর করে। কখন দেখব… হয়ে গেছে…!”