বাবর-রিজওয়ানদের বাদ দিয়ে টি-টোয়েন্টিতে নতুনভাবে শুরু করা পাকিস্তান টানা দুই ম্যাচে হেরে গেল খর্বশক্তির নিউ জিল্যান্ডের কাছে।
Published : 18 Mar 2025, 12:42 PM
প্রথম ওভারটি মেডেন। শাহিন শাহ আফ্রিদির ক্ষুরধার বোলিংয়ের সামনে নড়বড়ে টিম সাইফার্ট। মনে হলো, পুঁজি বড় না হলেও লড়াই করবে পাকিস্তান। কিন্তু কিসের কী, পরের দুই ওভারেই সাতটি ছক্কা মেরে রেকর্ড বইয়ে নাম তুললেন সাইফার্ট ও ফিন অ্যালেন। পাকিস্তানও পারল না লড়াই জমাতে। টানা দুই জয়ে নিউ জিল্যান্ড এগিয়ে গেল সিরিজ জয়ের কাছে।
পাঁচ ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে পাকিস্তানকে পাঁচ উইকেটে হারিয়ে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল নিউ জিল্যান্ড।
ডানেডিনে মঙ্গলবার বৃষ্টির কারণে দেরিতে শুরু হওয়া ম্যাচ নেমে আসে ১৫ ওভারে। আগের ম্যাচে দুর্দান্ত বোলিং করে ম্যাচ-সেরা হওয়া কাইল জেমিসনকে বিশ্রামে রাখে নিউ জিল্যান্ড। কিউই বোলিং আক্রমণের ধার তাতে কমেনি খুব একটা। পাকিস্তানকে তারা আটকে রাখে ১৩৫ রানে।
রান তাড়ায় দুই ওপেনারের বিস্ফোরক জুটিই ম্যাচের ভাগ্য নিশ্চিত করে দেয়। পরে পাঁচ উইকেট হারালেও আদতে লড়াই তেমন হয়নি। নিউ জিল্যান্ডের জয় নিয়ে সংশয় কখনোই জাগেনি।
নিয়মিত অধিনায়ক মিচেল স্যান্টনারসহ প্রথম পছন্দের বেশ কজন ক্রিকেটারকের ছাড়াই সিরিজ জয়ের দুয়ারে পৌঁছে গেল নিউ জিল্যান্ড। বাবর আজম, মোহাম্মদ রিজওয়ানদের বাইরে রেখে সালমান আলি আগার নেতৃত্বে টি-টোয়েন্টিতে নতুন শুরু করা পাকিস্তান ব্যর্থ হলো দুই ম্যাচে।
আগের ম্যাচে ৯১ রানে গুটিয়ে বাজেভাবে হেরে যাওয়া পাকিস্তান এবার রান একটু বেশি করেছে বটে। তবে ইউনিভার্সিটি ওভালের রানপ্রসবা ছোট মাঠে যা যথেষ্ট হয়নি।
আফ্রিদি যদিও প্রথম ওভারটি মেডেন নেন। সাড়ে তিন বছর পর এই সংস্করণে মেডেনের দেখা পেলেন পাকিস্তানের কোনো বোলার। তবে সেই স্বস্তি উবে যায় দ্রুতই।
ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে মোহাম্মদ আলিকে তিনটি ছক্কা মারেন ফিন অ্যালেন। পরের ওভারে তাকে ছাড়িয়ে যান সাইফার্ট। এবার আফ্রিদিকে বিধবস্ত করেন তিনি ওভারে চারটি ছক্কায়!
আইসিসির পূর্ণ সদস্য কোনো দলের ম্যাচে প্রথম তিন ওভারে সবচেয়ে বেশি ছক্কার রেকর্ড এটি। সব দেশ মিলিয়ে ‘বল বাই বল’ হিসাব রাখা ম্যাচগুলির মধ্যে প্রথম তিন ওভারে আট ছক্কার রেকর্ড ফিলিপিন্সের বিপক্ষে ইন্দোনেশিয়ার।
পরের ওভারে খুশদিল শাহর স্পিন এনে রানের স্রোতে একটু বাঁধ দেওয়া যায় বটে। তবে পরে ওভারে আবার আলিকে এক ছক্কা ও দুটি চার মারেন সাইফার্ট।
ওই ওভারেই স্লোয়ার ডেলিভারিতে উইকেট হারান সাইফার্ট (২২ বলে ৪৫)। তবে অ্যালেনের তাণ্ডব চলতে থাকে। জাহান্দাদ খানকে বোলিংয়ে স্বাগত জানান তিনি একটি চার ও দুটি ছক্কায়।
১৬ বলে ৩৮ রান করে ওই ওভারেই বিদায় নেন অ্যালেন। তবে ম্যাচ তখন কার্যত শেষ। ১৩৬ রান তাড়ায় ৭ ওভারে ৮৮ রান করে ফেললে আর বাকি কী থাকে!
এরপর মার্ক চ্যাপম্যান টিকতে পারেননি। ড্যারিল মিচেল ও জিমি নিশামকে ঝড় তুলতে দেননি হারিস রউফ। তবে কিউইদের জিততে বেগ পেতে হয়নি তেমন একটা। মিচেল হে অপরাজিত থাকেন ১৬ বলে ২১ রানে।
ইউনিভার্সিটি ওভালের ২২ গজে ঘাসে ভরা থাকলেও বরাবরের মতোই উইকেট ছিল ব্যাটিং সহায়ক। কিন্তু পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইন আপকে ডানা মেলতে দেয়নি নিউ জিল্যান্ড। কেবল ব্যতিক্রম ছিলেন অধিনায়ক সালমান আলি আগা।
টস জিতে বোলিংয়ে নামা নিউ জিল্যান্ডকে প্রথম ওভারে উইকেট এনে দেন জ্যাকব ডাফি। টানা দুই ম্যাচে শূন্যতে বিদায় নেন তরুণ ওপেনার হাসান নাওয়াজ। দুটি চার মারার পর বিদায় নেন আরেক ওপেনার মোহাম্মদ হারিসও।
সালমানের পাল্টা আক্রমণে চাপ কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করে পাকিস্তান। ৬ ওভারে ৪৮ রান তোলে তারা। কিন্তু ইশ সোধি আক্রমণে এসেই আবার ঘুরিয়ে দেন মোড়। তিন বলের মধ্যে এই লেগ স্পিনার ফিরিয়ে দেন ইরফান খান (১১) ও খুশদিল শাহকে (২)।
সালমান তবু স্রোতের বিপরীতে আরকটু ছুটে আউট হন দশম ওভারে। ২৮ বলে ৪৬ রান করেন পাকিস্তান অধিনায়ক, তার ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস এটি।
পরে দুটি করে চার ও ছক্কায় ১৪ বলে ২৬ রান করেন শাদাব খান। ৯ নম্বরে নেমে ১৪ বলে ২২ রান করে দলকে ১৩৫ রানে নিয়ে যান শাহিন আফ্রিদি।
তবে যথেষ্ট হয়নি সেই স্কোর। সিরিজে পরের ম্যাচ শুক্রবার মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
পাকিস্তান: ১৫ ওভারে ১৩৫/৯ (হারিস ১১, নাওয়াজ ০, সালমান ৪৬, ইরফান ১১, খুশদিল ২, শাদাব ২৬, সামাদ ১১, জাহান্দাদ ০, আফ্রিদি ২২*, রউফ ১; ডাফি ৩-০-২০-২, ফোকস ৩-০-৩২-০, সিয়ার্স ৩-০-২৩-২, নিশাম ৩-০-২৬-২, সোধি ২-০-১৭-২, ব্রেসওয়েল ১-০-১৪-০)।
নিউ জিল্যান্ড: ১৩.১ ওভারে ১৩৭/৫ (সাইফার্ট ৪৫, অ্যালেন ৩৮, চ্যাপম্যান ১, মিচেল ১৪, নিশাম ৫, হে ২৪*, ব্রেসওয়েল ৫*; আফ্রিদি ৩-১-৩১-০, আলি ২-০-৩৪-১, খুশদিল ৩-০-১৬-১, রউফ ৩-০-২০-২, জাহান্দাদ ১.১-০-২৩-১, শাদাব ১-০-১০-০)
ফল: নিউ জিল্যান্ড ৫ উইকেটে জয়ী।
সিরিজ: পাঁচ ম্যাচ সিরিজে নিউ জিল্যান্ড ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে।
ম্যান অব দা ম্যাচ : টিম সাইফার্ট।