দুর্দান্ত বোলিং-ফিল্ডিংয়ে এক ম্যাচ বাকি রেখেই সিরিজ জিতে গেল আয়ারল্যান্ড।
Published : 07 Dec 2024, 05:45 PM
ম্যাচ নতুন উইকেটে। টস জিতে আইরিশ অধিনায়কের সিদ্ধান্তও ভিন্ন। আগের ম্যাচের মতো ভালো হলো না তাদের ব্যাটিংও। কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যেটা, সেখানেই বদল নেই। আয়ারল্যান্ডের জয়ের দেখা পেল আবার। টানা দুই ম্যাচ হেরে বাংলাদেশ হেরে গেল সিরিজও।
দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশকে ৪৭ রানে হারিয়ে এক ম্যাচ বাকি রেখেই সিরিজ জয় নিশ্চিত করল আয়ারল্যান্ড।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শনিবার ২০ ওভারে আয়ারল্যান্ড তোলে ১৩৪ রান। পুঁজি খুব বড় না হলেও দারুণ বোলিং-ফিল্ডিংয়ে বড় জয় আদায় করে নেয় তারা। বাংলাদেশ গুটিয়ে যায় ৮৭ রানে।
শুরুর বিপর্যয়ের পর শারমিন আক্তার ও স্বর্ণা আক্তার চেষ্টা করেন লড়াইয়ের। কিন্তু ১৭ রানের মধ্যে শেষ ৬ উইকেট হারিয়ে ১৭ বল বাকি থাকতেই গুটিয়ে যায় ইনিংস।
ব্যাট হাতে ২৫ বলে ৩২ করার পর দারুণ বোলিংয়ে ১৩ রানে ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচের সেরা ওর্লা প্রেন্ডারগাস্ট।
রান তাড়ায় নামা বাংলাদেশকে শুরুতে নাড়িয়ে দেন প্রেন্ডারগাস্টই। আগের ম্যাচে শতরানের রেকর্ড জুটি গড়া দুই ওপেনারকে এবার দ্রুতই ফেরান তিনি। তীক্ষ্নভাবে ভেতরে ঢোকা ডেলিভারি বোল্ড হয়ে যান সোবহানা মোস্তারি। স্লগ করে উইকেট বিলিয়ে দেন দিলারা আক্তার।
দলের বিপদে দাঁড়াতে পারেননি নিগার সুলতানাও। ৬ রান করে বাংলাদেশ অধিনায়ক স্টাম্পে টেনে আনেন আর্লিন কেলির বাইরের বল।
পরে ওভারে যখন তাজ নেহার বিদায় নিলেন, ২২ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে এরকম ছিটকে পড়ে বাংলাদেশ।
তবে ফর্মে থাকা শারমিন আক্তার কিছুটা জাগিয়ে তোলেন আশা। তাকে সঙ্গ দেন স্বর্ণা আক্তার। এক-দুই করে রান নিয়ে দলকে লড়াইয়ে ফেরানোর চেষ্টা করেন দুজন।
তবে রান রেটের টানাপোড়েন বাড়ছিলই। সেই দাবি মেটাতে গিয়ে জায়গা বানিয়ে খেলার চেষ্টায় স্বর্ণা আউট হন ২০ রানে। জুটি থামে ৪২ বলে ৪৮ রানে।
এই জুটি ভাঙার পর বাংলাদেশের ইনিংস ভেঙে পড়ে দ্রুতই। দ্রুত রান তোলার চেষ্টায় আউট হন ফাহিমা খাতুন। রান আউট হন জাহানারা আলম ও জান্নাতুল ফেরদৌস।
শারমিনের প্রচেষ্টা শেষ হয় ক্যারিয়ার সেরা ৩৮ রানে। নাহিদা আক্তারকে বোল্ড করে ম্যাচ শেষ করেন প্রেন্ডারগাস্ট।
বাংলাদেশের শেষ পাঁচ ব্যাটারের কেউ পাঁচ রানের বেশি করতে পারেনি।
ম্যাচের প্রথম ভাগে আয়ারল্যান্ডের ব্যাটিংয়ের শুরুটা ছিল ভালো-মন্দের মিশেলে। প্রথম পাঁচ ওভারে সাতটি বাউন্ডারি মারেন এমি হান্টার ও গ্যাবি লুইস। প্রচুর ‘ডট’ বলের কারণে তবু রানের গতি খুব ভালো ছিল না।
ষষ্ঠ ওভারে আক্রমণে এসেই জুটি ভাঙেন নাহিদা আক্তার। প্রথমে আউট হতে পারতেন হান্টার, কিন্তু ক্যাচ নিতে ব্যর্থ হন স্বর্ণা আক্তার। এক বল পরই শর্ট ফাইন লেগে দিলারা আক্তারের দারুণ ক্যাচে ফেরেন আইরিশ অধিনায়ক লুইস (১৮ বলে ১৪)।
পাওয়ার প্লেতে আইরিশরা তোলে ৩৪ রান।
আগের ম্যাচে মাঝের ওভারগুলোতেই ঝড়ো ব্যাটিংয়ে রান বাড়িয়েছিল তারা। এ দিনও পাওয়ার প্লে শেষ হতেই জান্নাতুল ফেরদৌসকে ছক্কা মারেন প্রেন্ডারগাস্ট। তবে আগের দিনের মতো এতটা দ্রুততায় রান আসেনি আর।
জান্নাতুলের বলে হান্টার বিদায় নেন ২৩ বলে ২৩ রান করে। আগের দিন ৭৯ রান করা লিয়া পল এ দিন ১৬ রান করতে বল খেলেন ১৯টি।
প্রেন্ডারগাস্ট চেষ্টা করেন সময়ের দাবি মেটাতে। ২৫ বলে ৩২ রান আসে তার ব্যাট থেকে। পরে ২৫ বলে ৩৫ রান করেন লরা ডেলানি।
২০ রানে ২ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের সেরা বোলার নাহিদা আক্তার মাঝবিরতিতে টিভি সাক্ষাৎকারে বলেন, এই লক্ষ্য তাদের নাগালেই আছে। কিন্তু ব্যাটাররা দলকে নিতে পারল না কাছাকাছিও।
এই নিয়ে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে তিন টি-টোয়েন্টি সিরিজের দুটিই হারল বাংলাদেশ। হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর লড়াই সোমবার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
আয়ারল্যান্ড: ২০ ওভারে ১৩৪/৫ (হান্টার ২৩, লুইস ১৪, প্রেন্ডারগাস্ট ৩২, পল ১৬, ডেলানি ৩৫, ফোর্বস ৪*, স্টোকেল ৯*; জাহানারা ৪-০-২৫-১, মেঘলা ৪-০-২৭-০, জান্নাতুল ৪-১-২৯-১, নাহিদা ৪-০-২০-২, ফাহিমা ৪-০-৩২-১)।
বাংলাদেশ: ১৭.১ ওভারে ৮৭ (দিলারা ১০, সোবহানা ১, নিগার ৬, শারমিন ৩৮, তাজ ২, স্বর্ণা ২০, ফাহিমা ৫, জাহানারা ১, জান্নাতুল ২, নাহিদা ০, মেগলা ০*; সারজেন্ট ৪-০-২১-০, প্রেন্ডারগাস্ট ৩.১-০-১৩-৩, কেলি ৩-০-১০-২, ডালজেল ২-০-১৪-১, ডেলানি ৩-০-১৬-২, ম্যাগুইয়ের ২-০-১৩-০)।
ফল: আয়ারল্যান্ড ৪৭ রানে জয়ী।
প্লেয়ার অব দা ম্যাচ: ওর্লা প্রেন্ডারগাস্ট।