চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি শুরুর আগে প্রস্তুতির ঘাটতির কথা বলেছিলেন প্রধান কোচ ফিল সিমন্স, বাংলাদেশের শেষ ম্যাচের আগে একই কথা বললেন সিনিয়র সহকারী কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন।
Published : 27 Feb 2025, 09:43 AM
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে শুরু আর শেষটা যেন এক বিন্দুতে মিলে গেল বাংলাদেশ দলের। আইসিসি টুর্নামেন্ট খেলতে দেশ ছাড়ার আগে প্রস্তুতির অভাবের কথা বলেছিলেন প্রধান কোচ ফিল সিমন্স। দলের শেষ ম্যাচের আগে একই কথা শোনালেন সিনিয়র সহকারী কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। তার দীর্ঘ সংবাদ সম্মেলনের বড় অংশে থাকল প্রস্তুতির ঘাটতির প্রসঙ্গ।
টুর্নামেন্ট শুরুর আগে থেকেই আলোচনায় ছিল বাংলাদেশের প্রস্তুতি ঘাটতি। প্রায় দেড় মাসের বিপিএল শেষ করে ওয়ানডের প্রস্তুতির জন্য তেমন একটা সময় পায়নি বাংলাদেশ। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আনুষ্ঠানিক প্রস্তুতি পর্ব শুরুর পরদিনই কোচ সিমন্স বলেছিলেন, এই পরিস্থিতি আদর্শ নয়।
সেই খেসারত দিতে হয়েছে দলকে। দুই ম্যাচে হেরে আসর থেকে ছিটকে পড়ার পর সালাউদ্দিন বলছেন, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ভাবনায় রেখে বিপিএল আরও আগে শেষ করা উচিত ছিল।
গত ৭ ফেব্রুয়ারি পর্দা নেমেছে বিপিএলের একাদশ আসরের। পরদিন শুরু হয় চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির জন্য বাংলাদেশের অনুশীলন ক্যাম্প। দেশ ছাড়ার আগে পাঁচ দিন অনুশীলন করে দল। তবে পুরো স্কোয়াডের সবাইকে একসঙ্গে পাওয়া গেছে কেবল ১২ ফেব্রুয়ারি। বিপিএলে টানা খেলার ক্লান্তি ও ব্যক্তিগত ছুটি মিলিয়ে আগের চার দিন ক্যাম্পে যোগ দেননি কয়েকজন।
বিপিএলে প্রায় দেড় মাস টি-টোয়েন্টি খেলেছেন ক্রিকেটাররা। এর আগে স্থানীয় ক্রিকেটাররা ব্যস্ত সময় পার করেছেন এনসিএল টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে। পঞ্চাশ ওভারের ক্রিকেট তারা সবশেষ খেলেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে। প্রায় আড়াই মাস এই সংস্করণের কোনো চর্চা না করেই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মতো বড় আসর খেলতে যান ক্রিকেটাররা।
পরিণতি এখন সবার সামনে। ভারত ও নিউ জিল্যান্ডের সঙ্গে তেমন লড়াই জমাতে পারেনি বাংলাদেশ। এক ম্যাচ বাকি থাকতেই ছিটকে গেছে টুর্নামেন্ট থেকে। নিয়মরক্ষার ম্যাচে বৃহস্পতিবার তাদের প্রতিপক্ষ স্বাগতিক পাকিস্তান।
বৃষ্টির কারণে ম্যাচের আগের দিন অনুশীলন করতে পারেনি বাংলাদেশ। এর আগে সংবাদ সম্মেলনে সেই প্রস্তুতি নিয়েই অনেক কথা বলেন সালাউদ্দিন।
“এটা মেনে নিতে হবে যে এখন পর্যন্ত বড় কোনো আইসিসি ইভেন্টে আমরা পারফর্ম করতে পারিনি। তবে আমি খুব আশাবাদী, আমরা খুব তাড়াতাড়ি ভালো করতে পারব। সেটার জন্য শুধু ক্রিকেটার নয়, ঘরোয়া ক্রিকেট থেকে শুরু করে আমাদের পরিকল্পনার জায়গা... আপনি যদি দেখেন এই টুর্নামেন্ট খেলতে আসার আগে পাঁচটা দল যথেষ্ট প্রস্তুতি নিয়ে এসেছে।”
“পাকিস্তানে এসে যদি ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলতাম, সেখানে প্রস্তুতির ব্যাপার আছে। ভারত আর ইংল্যান্ডও পঞ্চাশ ওভারের প্রস্তুতি নিয়েছে। আমরা কিন্তু সেই প্রস্তুতি নিতে পারিনি। একটা বিপিএল খেলার দুদিন পরই আমাদের উড়াল দিতে হয়েছে। তাই প্রস্তুতি একটা বড় ব্যাপার।”
প্রস্তুতির ঘাটতি মেটাতে পরবর্তী টুর্নামেন্টের আগে সার্বিক পরিকল্পনা সাজানোর কথা বললেন সিনিয়র সহকারী কোচ।
“(প্রস্তুতির) সেই পরিকল্পনা আপনি কীভাবে করবেন, এটার জন্য শুধু ক্রিকেটার নয়, আমরা যারা ম্যানেজমেন্টে আছি, যারা বোর্ডে আছে, সবাইকে চিন্তা করতে হবে। পরবর্তী টুর্নামেন্টে কীভাবে খেলতে চাই, কীভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে... সবকিছুর সমন্বয়ে পারফরম্যান্স আসতে পারে। হুট করে বলে দিলে পারফরম্যান্স চলে আসবে, তা কিন্তু নয়। সব কিছু নিয়ে গুছিয়ে পরিকল্পনা করে যদি এগোতে পারি তাহলে আমাদের জন্য ভালো হবে।”
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি শুরুর সপ্তাহখানেক আগে স্বাগতিক পাকিস্তানসহ দক্ষিণ আফ্রিকা ও নিউ জিল্যান্ড মিলে খেলেছে ত্রিদেশীয় সিরিজ। স্বাগতিকদের দুবার হারিয়ে যেখানে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয় নিউ জিল্যান্ড।
আগেভাগে পাকিস্তানে গিয়ে কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার সুবিধা বেশ ভালোভাবে পাচ্ছে কিউইরা। দুই ম্যাচ শেষে 'এ' গ্রুপের শীর্ষে তারাই। অন্য গ্রুপে দক্ষিণ আফ্রিকাও এখন পর্যন্ত এক নম্বরে।
টুর্নামেন্টের আগে এমন কোনো সিরিজ খেলতে না পারার আক্ষেপ সালাউদ্দিনের।
“সবকিছুই পরিকল্পনার বিষয়। পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা ও নিউ জিল্যান্ড যে ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলেছে, সেটা তো পাঁচ দিন আগে ঠিক করেনি। নিশ্চয়ই এক বছর আগে ঠিক করেছে। যেহেতু একটা বড় টুর্নামেন্ট খেলবে, এর আগে হোম গ্রাউন্ডে (স্বাগতিক দেশে) তারা যদি তিনটা ম্যাচ খেলতে পারে, এর চেয়ে বড় প্রস্তুতি তো কিছু হতে পারে না।”
“আমাদের এই প্রস্তুতির ঘাটতির জন্য আসলে... দায়ী করলে তো দুনিয়ার সবাইকে দায়ী করা যায়। ম্যানেজমেন্টে যারা থাকি, আমাদের কাজ এই প্রস্তুতিটা যেন আদায় করে নিতে পারি। হয়তো আমরা পরিকল্পনা করি কিন্তু সেটা আদায় করতে পারি না। ম্যানেজমেন্ট দিকে যারা আছে, তাদেরও কিন্তু এটা বোঝাতে হবে যে আমাদের এই ধরনের প্রস্তুতি নিতে হবে।”
যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজে অনুষ্ঠিত গত বছরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে বাংলাদেশও নিজেদের প্রস্তুতি সারতে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে খেলেছিল তিন ম্যাচের সিরিজ। তবে এবার চাইলেও সেটি সম্ভব হতো না। কারণ, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি শুরুর মাত্র ১২ দিন আগে শেষ হয়েছে বিপিএল। তাই ওয়ানডের যথাযথ প্রস্তুতিই নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এজন্য বিপিএলের সূচির দিকেই আঙুল তুললেন জাতীয় দলের সহকারী কোচ।
“বিপিএল যদি আরও ১৫ দিন আগে শেষ হতো... ইচ্ছা করলেই শেষ করা যেত, তাহলে হয়তো প্রস্তুতি নেওয়ার মতো আরেকটু সুযোগ থাকত। সবকিছুই আসলে আরেকটু পরিকল্পনা করে... যা হওয়ার হয়ে গেছে। পরবর্তীতে যেন আরও ভালো করতে পারি, যারাই থাকুক (দায়িত্বে), কীভাবে আমরা আরও সামনে এগোতে পারি, সেটা আসলে বাস্তবায়ন করতে হবে।”