অপরাজিত সেঞ্চুরি করে দলকে জেতালেন এনামুল হক, দুর্দান্ত ছন্দে থাকা মাহিদুল ইসলাম টানা করলেন পঞ্চম ফিফটি, দারুণ বোলিংয়ে নাজমুল ইসলাম অপুর শিকার ৫ উইকেট।
Published : 30 Mar 2024, 07:01 PM
জাতীয় দলে থিতু হলে না পারলেও ঘরোয়া ক্রিকেটে এনামুল হক বরাবরই সেরা পারফরমারদের একজন। এবার যদিও লিগের শুরুটা তার ভালো হয়নি। তবে ঠিকই স্বরূপে ফিরে অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান উপহার দিলেন অপরাজিত সেঞ্চুরি। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির রেকর্ডে তিনি আরেকধাপ এগিয়ে গেলেন সবার ওপরে থাকা তামিম ইকবালের কাছে।
ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচে এনামুলের সেঞ্চুরির দিনে আবাহনী ধরে রেখেছে জয়যাত্রা। অন্য মাঠে তাদের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মোহামেডান জয় পেয়েছে উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে। দিনের আরেক ম্যাচে নাজমুল ইসলামের ৫ উইকেটে জয়ে ফিরেছে প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব।
মাহিদুলের টানা পাঁচ, মোহামেডানের পাঁচ রানের জয়
আগের রাউন্ডে ব্যাট হাতে দলকে রোমাঞ্চকর জয় এনে দেওয়া কামরুলের কাঁধে এবার পড়ে শেষ ওভারে বল হাতে জেতানোর দায়িত্ব। নিখুঁতভাবে নিজের দায়িত্ব পালন করে সাত ম্যাচে মোহামেডানের ষষ্ঠ জয় নিশ্চিত করেন অভিজ্ঞ পেসার।
ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলি স্টেডিয়ামে ২০০ রানের পুঁজি নিয়ে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবকে ৫ রানে হারায় মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব।
১২ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দুই নম্বরে উঠেছে তারা। সমানসংখ্যক ম্যাচে শেখ জামালের দ্বিতীয় পরাজয় এটি। তাদের অবস্থান চতুর্থ।
লিগের শুরু থেকেই দারুণ ছন্দে থাকা মাহিদুল ইসলাম সাত ম্যাচে করেছেন ষষ্ঠ ফিফটি। ৪ চার ও ১ ছক্কায় ১০৪ বলে ৭০ রানের ইনিংস খেলেছেন ২৪ বছর বয়সী কিপার-ব্যাটসম্যান।
সবশেষ পাঁচ ম্যাচেই মাহিদুলের ব্যাট থেকে এসেছে পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংস। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত তার সংগ্রহ ৪৪৩ রান। রানের তালিকায় তার ওপরে আছেন শুধু প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবের তরুণ ওপেনার পারভেজ হোসেন (৪৫৩ রান)।
মাহিদুলের দায়িত্বশীল ইনিংসের পর শেখ জামালকে আটকে রাখার কাজটি দারুণভাবে করেন তিন স্পিনার নাসুম আহমেদ, আসিফ হাসান ও আরিফুল ইসলাম। আঁটসাঁট বোলিংয়ে তিন জন মিলে নেন ৪ উইকেট। ৩০ ওভারে তাদের খরচ স্রেফ ৮০ রান।
তুলনামূলক ছোট লক্ষ্যে শুরুতেই রবিউল ইসলামের উইকেট হারায় শেখ জামাল। বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি সৈকত আলিও। আরেক ওপেনার সাইফ হাসান একপ্রান্ত আগলে রাখলেও রানের গতি বাড়াতে পারেননি।
একশ রান করতে ৩২ ওভার লেগে যায় শেখ জামালের। পরের ওভারে পায়ের পেশির টানে মাঠ ছেড়ে যান ৯৯ বলে ৬০ রান করা সাইফ। মিডল অর্ডারের তিন ভরসা ফজলে মাহমুদ, নুরুল হাসান সোহান ও ইয়াসির আলি চৌধুরিও ফেরেন দ্রুত।
চাপে পড়ে যাওয়া দলকে এগিয়ে নেন আট নম্বরে নামা জিয়াউর রহমান। সপ্তম উইকেট পতনের পর ফের ক্রিজে যান সাইফ। জিয়ার সঙ্গে তিনি ২৬ বলে যোগ করেন ৩৪ রান।
৪১ বলে ৩৯ রান করে ৪৮তম ওভারে আউট হয়ে যান জিয়া। ২ ওভারে বাকি ২১ রানের দায়িত্ব পড়ে সাইফের কাঁধে। তা শেষ পর্যন্ত পারেননি ২৫ বছর বয়সী ওপেনার।
শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল ১৪ রান। প্রথম ৪ বলে স্রেফ ৩ রান দেন কামরুল ইসলাম রাব্বি। পঞ্চম বলে ব্যাটের কানায় লেগে বাউন্ডারি পান সাইফ। শেষ বলে ৭ রানের সমীকরণে কামরুল করেন ওয়াইড ইয়র্কার। সাইফ নিতে পারেন কেবল একটি রান।
লিস্ট 'এ' ক্যারিয়ারের ২৭তম ফিফটিতে ৭ চার ও ১ ছক্কায় ১২০ বলে ৮৪ রানে অপরাজিত থেকে যান তিনি। দলের তা কজে লাগেনি।
এর আগে মাহিদুল ছাড়া মোহামেডানের স্বীকৃত ব্যাটসম্যানদের কেউই ত্রিশ ছুঁতে পারেননি। ব্যর্থতার ধারা আরও লম্বা করেন ইমরুল কায়েস, রনি তালুকদার, প্রান্তিক নওরোজরা।
ছয় নম্বরে নেমে দারুণ শুরু করেন মাহমুদউল্লাহ। কিন্তু ইনিংস লম্বা হয়নি তার। ২ চার ও ১ ছক্কায় ২২ বলে ২৮ রান করে ফেরেন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান।
আগের ম্যাচের মতো এ দিনও শেষ দিকে ঝড় তোলেন আবু হায়দার। ৫ চার ও ২ ছক্কায় ৩৬ বলে ৪৫ রান করেন তিনি। তার সৌজন্যেই ২০০ ছুঁতে পারে মোহামেডান। সেই পুঁজিকেই শেষ পর্যন্ত যথেষ্ট প্রমাণ করে ছাড়েন বোলাররা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব: ৪৮.৪ ওভারে ২০০ (ইমরুল ৪, রনি ১, প্রান্তিক ১৪, মাহিদুল ৭০, আরিফুল ইসলাম ১৬, মাহমুদউল্লাহ ২৮, আরিফুল হক ০, নাসুম ৭, আবু হায়দার ৪৫, কামরুল ৩, আসিফ ১*; শফিকুল ১০-২-৩৫-২, রিপন ৯.৪-২-৫০-২, সৈকত ৪-০-১৩-১, জিয়াউর ৫-০-১৫-০, আরিফ ৮-০-৪৩-১, তাইবুর ৮-১-১৯-৩, সাইফ ৪-০-২২-১)
শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব: ৫০ ওভারে ১৯৫/৮ (সাইফ ৮৪*, রবিউল ০, সৈকত ২১, তাইবুর ১৫, সোহান ১৫, ফজলে মাহমুদ ১, ইয়াসির ৭, জিয়াউর ৩৯, আরিফ ৩, রিপন ৩*; আবু হায়দার ৯-০-৫৭-১, নাসুম ১০-৩-২৯-২, আসিফ ১০-৩-২৩-২, কামরুল ৮-০-৪২-২, আরিফুল ইসলাম ১০-০-২৮-০, আরিফুল হক ৩-০-১৬-১)
ফল: মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব ৫ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: মাহিদুল ইসলাম
এনামুলের সেঞ্চুরিতে আবাহনীর সাতে সাত
জাতীয় দলের ব্যস্ততা শেষ করে আবাহনীতে যোগ দেওয়ার পর তিন ম্যাচ হাসেনি এনামুল হকের ব্যাট। অবশেষে গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের বিপক্ষে তিনি পেলেন রানের দেখা। অপরাজিত সেঞ্চুরিতে অভিজ্ঞ ওপেনার জেতালেন দলকে।
বিকেএসপির ৩ নম্বর মাঠে ভেজা আউটফিল্ডের কারণে ৪৯ ওভারে নেমে আসা ম্যাচে ৭ উইকেটের জয় পায় আবাহনী। ২০৫ রানের লক্ষ্য ৬৪ বল বাকি থাকতেই ছুঁয়ে ফেলে বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা।
সাত ম্যাচের সবকটি জিতে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে তারা। সমান ম্যাচে চার জয়ে ছয় নম্বরে গাজী গ্রুপ।
৭ চার ও ৪ ছক্কায় ১১৮ বলে ১০৭ রানের ইনিংস খেলেন এনামুল। ২০৩ ম্যাচের লিস্ট 'এ' ক্যারিয়ারে তার ১৯তম সেঞ্চুরি এটি।
এই সংস্করণে বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সেঞ্চুরি সংখ্যায় তার চেয়ে এগিয়ে আছেন শুধু তামিম ইকবাল (২২টি)।
সহজ রান তাড়ায় পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে ড্রেসিং রুমে ফেরেন মোহাম্মদ নাঈম শেখ। ২৯ বলে তিনি করেন ১৯ রান। সাত ম্যাচে দুটি ফিফটি করলেও এখনও তিন অঙ্ক ছুঁতে পারেননি গত আসরের সর্বোচ্চ রান করা এই ব্যাটসম্যান।
দ্বিতীয় উইকেটে ১২২ রানের জুটি গড়েন এনামুল ও জাকের আলি। আগের ম্যাচে ৭৮ রান করা জাকের এবার খেলেন ৫ চার ও ২ ছক্কায় ৫৮ রানের ইনিংস। তার বিদায়ের পর চার নম্বরে নামানো হয় তানজিম হাসানকে। তবে টিকতে পারেননি তিনি।
৬১ বলে পঞ্চাশ ছোঁয়া এনামুল পরেও এগিয়ে যান একই ছন্দে। পরের পঞ্চাশ করতে খেলেন ৫০ বল। শেষ দিকে সাইফ উদ্দিনকে নিয়ে ম্যাচ শেষ করেন ৩১ বছর বয়সী ওপেনার।
ম্যাচের প্রথম ভাগে গাজী গ্রুপের পক্ষে সর্বোচ্চ ৬০ রান করেন অধিনায়ক মেহেদি মারুফ। ৭৩ বলের ইনিংসে ৮ চারের সঙ্গে ১ ছক্কা মারেন তিনি।
ত্রয়োদশ ওভারে তাসকিন আহমেদের বাউন্সারে মাথায় আঘাত পেয়ে মাঠ ছাড়েন আল আমিন জুনিয়র। কনকাশন বদলি হিসেবে নেমে হাবিবুর রহমান খেলেন ৩ চার ও ৪ ছক্কায় ২৫ বলে ৪১ রানের ইনিংস।
আর কোনো ব্যাটসম্যান সেভাবে দাঁড়াতে না পারায় আবাহনীকে চ্যালেঞ্জ করার মতো স্কোর তারা গড়তে পারেনি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স: ৪৪.৪ ওভারে ২০৪ (মেহেদি ৬০, আনিসুল ১৯, সাব্বির ৭, আল আমিন ০ আহত অবসর, পারভেজ ৯, হাবিবুর ৪১, প্রিতম ১, মইন ১৭, মাহফুজুর ২৬, গাফফার ২, ওয়াসি ৮*, রুয়েল ০; তাসকিন ৮-১-২৮-২, সাইফ উদ্দিন ৬-১-২৪-২, তানভির ৮-০-৪২-২, তানজিম ৬.৪-০-৫১-২, রাকিবুল ৮-০-৩৮-০, মোসাদ্দেক ৮-১-১৭-১)
আবাহনী লিমিটেড: ৩৯.২ ওভারে ২০৭/৩ (এনামুল ১০৭*, নাঈম ১৯, জাকের ৫৮, তানজিম ১, সাইফ উদ্দিন ১৮*; রুয়েল ৯-০-৪৭-১, পারভেজ ৪-০-৩২-০, মইন ৪-১-২১-১, মাহফুজুর ৬.২-০-২৭-০, ওয়াসি ৯-০-৪৩-১, গাফফার ৭-০-৩৬-০)
ফল: আবাহনী লিমিটেড ৭ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: এনামুল হক
নাজমুলের স্পিনে জয়ে ফিরল প্রাইম ব্যাংক
চার জয়ে লিগে যাত্রা শুরুর পর জোড়া পরাজয়ে ধাক্কা খায় প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব। শিরোপা প্রত্যাশী দলটিকে সপ্তম রাউন্ডে জয়ে ফেরালেন নাজমুল ইসলাম। ৫ উইকেট নিয়ে এই বাঁহাতি স্পিনার গড়ে দেন জয়ের ভিত।
বিকেএসপির ৪ নম্বর মাঠে লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জকে ৫ উইকেটে হারায় প্রাইম ব্যাংক। ১৬৬ রানের লক্ষ্য ৩৪.৫ ওভারে ছুঁয়ে ফেলে তামিম ইকবালের দল।
পাওয়ার প্লেতে ৪ উইকেট নিয়ে রূপগঞ্জের ব্যাটিংয়ের মেরুদণ্ড ভেঙে দেন নাজমুল। সব মিলিয়ে ৪৪ রানে তিনি নেন ৫ উইকেট। লিস্ট 'এ' ক্রিকেটে ৩২ বছর বয়সী স্পিনারের পঞ্চম ৫ উইকেট এটি।
লিগের সাত ম্যাচে এখন পর্যন্ত তার শিকার ১৬ উইকেট। মারুফ মৃধার সঙ্গে যৌথভাবে উইকেটের তালিকায় শীর্ষে অভিজ্ঞ বাঁহাতি স্পিনার।
ছয় নম্বরে নামা আমিনুল ইসলামের ১০৫ বলে ৫৫ রানের সৌজন্যে কোনো রকমে দেড়শ পার করে রূপগঞ্জ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২১ রান আসে বাঁহাতি স্পিনার শহিদুল ইসলামের ব্যাটে।
রান তাড়ায় পারভেজ হোসেনের সঙ্গে ইনিংস সূচনা করেন শেখ মেহেদি হাসান। পঞ্চাশের আগে ড্রেসিং রুমে ফেরেন দুজনই।
তিন নম্বরে নেমে ৪০ বলে ৩৫ রানের ইনিংস খেলেন তামিম। শুভাগত হোমের বলে ইনসাইড আউট শট খেলার চেষ্টায় কট বিহাইন্ড হন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান।
এরপর সাব্বির রহমান, নাঈম ইসলাম, অলক কাপালিদের ছোট ছোট ইনিংসে অনায়াসে ম্যাচ জেতে প্রাইম ব্যাংক।
১০ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের তিন নম্বরে উঠেছে প্রাইম ব্যাংক। সমান ম্যাচে রূপগঞ্জের পয়েন্টও সমান ১০। নেট রান রেটে পিছিয়ে থাকায় তাদের অবস্থান পঞ্চম।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জ: ৪৩.৩ ওভারে ১৬৫ (ইমরানউজ্জামান ১৯, তৌফিক ২, রিজওয়ান ৫, শামীম ১০, আমিনুল ৫৫, শুভাগত ১৪, মাশরাফি ২, শহিদুল ২১, সুমন ১১, হালিম ৫, আল আমিন ১*; আশিকুর ৫-০-১৩-০, নাজমুল ১০-১-৪৪-৫, মেহেদি ১০-২-৪০-১, এনামুল ৫-০-১৮-০, অলক ৬-১-১১-২, রুবেল ৫.৩-০-২০-২, নাঈম ২-০-৮-০)
প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব: ৩৪.৫ ওভারে ১৬৭/৫ (মেহেদি ১৬, পারভেজ ২২, তামিম ৩৫, সাব্বির ২৮, নাঈম ২৮*, মিঠুন ১২, অলক ২১*; আল আমিন ৭-০-২৩-০, সুমন ৭-০-৫৯-১, শুভাগত ৮-০-২৯-১, শহিদুল ১০-০-৪২-২, শামীম ২.৫-০-১৪-০)
ফল: প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব ৫ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: নাজমুল ইসলাম