প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে পারফর্ম করতে থাকা অমিত হাসানকে নিয়ে তাড়াহুড়ো না করে পুরোপুরি তৈরি করে টেস্ট দলে সুযোগ দিতে চান নির্বাচকরা।
Published : 13 Nov 2024, 06:42 PM
৬৩৮ মিনিট ব্যাটিং করে ৪৫৫ বল খেলে ২১৩ রান- জাতীয় ক্রিকেট লিগের চতুর্থ রাউন্ডে অমিত হাসানের পারফরম্যান্স। এবারের আসরের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরিতে বেশ সাড়া ফেলে দিয়েছেন সিলেট বিভাগের অধিনায়ক। চলতি লিগে তার ব্যাটিং গড় এখন ৭৭.৬৬। লাল বলের ক্রিকেট দারুণ পারফর্ম করেছেন তিনি আগেও। তবে বাংলাদেশ টেস্ট দলে নেওয়ার ক্ষেত্রে তাকে নিয়ে তাড়াহুড়ো করতে চান না জাতীয় নির্বাচক হান্নান সরকার।
টেস্ট দলে তার ডাক পাওয়ার একটা সম্ভাবনা তার তৈরি হয়েছিল সম্প্রতি। কুঁচকির চোটে নাজমুল হোসেন শান্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ থেকে ছিটকে পড়ায় বদলি একজনকে নিতে হতো। শেষ পর্যন্ত অমিত নন, সুযোগটি পান শাহাদাত হোসেন। জাতীয় লিগের চতুর্থ রাউন্ডে সেঞ্চুরি করার পর চার টেস্ট খেলা ব্যাটসম্যানের ফেরার দুয়ার খুলে যায়।
তবে এবারের লিগের পারফরম্যান্সে শাহাদাতের চেয়ে অনেক এগিয়ে অমিত। রান করেছেন দ্বিগুনের বেশি।
সেঞ্চুরির আগে প্রথম তিন রাউন্ডে তিন ইনিংসে শূন্য রানে আউট হয়েছেন শাহাদাত। বাকি দুই ইনিংসে রান ছিল ১১ ও ৩১।
অমিত সেখানে প্রথম তিন রাউন্ডেও রান করেছেন। বড় ইনিংস খেলতে না পারলেও ফিফটি ছিল দুটি। চতুর্থ রাউন্ডে ডাবল সেঞ্চুরির পর তো ৪৬৬ রান নিয়ে রান সংগ্রহের তালিকায় সবার ওপরে উঠে গেছেন ২৩ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান।
শান্তর বদলে সুযোগটি শাহাদাত কেন পেলেন, অমিত কেন নয়, প্রশ্ন ওঠা তাই স্বাভাবিক। মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বুধবার সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে সেই প্রশ্নের উত্তর দিলেন নির্বাচক হান্নান। অমিত আরও শাণিত করে জাতীয় দলে আনতে চান তারা।
“এই ধরনের ক্রিকেটার যারা নিয়মিত পারফর্ম করছে, তাদের কঠিন একটা মঞ্চে নিয়ে বিপদে ফেলার চেয়ে আরও কীভাবে আমরা আন্তর্জাতিক মানে ক্রিকেটার বানিয়ে নিতে পারি, সেদিকে নজর দিতে হবে।
“এখানে বলার বা লুকোচুরির কিছু নেই। আমাদের ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের মধ্যে অনেক বড় একটা পার্থক্য আছে। প্রায়ই দেখবেন ঘরোয়া ক্রিকেটের পারফরমার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে গিয়ে ভুগতে থাকে। তখন এক-দুই ম্যাচ খেলার পর তাকে নিয়ে আবার অন্য চিন্তা করতে হয়েছে।”
অমিত শুধু এবারই নন, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে গত কয়েক বছর ধরেই মোটামুটি রান করছেন। ২০১৯ সালে সিলেটের হয়ে জাতীয় লিগের ম্যাচ দিয়েই স্বীকৃত ক্রিকেটে অভিষেক হয় তার। ঢাকা মেট্রোর বিপক্ষে ম্যাচের প্রথম ইনিংসে তিনি করেন ১২৫ রান। তবে ওই মৌসুমে দুই ম্যাচের বেশি সুযোগ পাননি। পরের মৌসুমেও খেলেন দুটি ম্যাচ।
২০২১-২২ মৌসুমে নিয়মিত খেলার সুযোগ পেয়ে দুর্দান্ত ধারাবাহিকতায় তাক লাগিয়ে দেন তিনি। সেবার ১০ ম্যাচে ৪ সেঞ্চুরি ও ২ ফিফটিতে ৯১২ রান করেন ৬০.৮০ গড়ে। পরের দুই মৌসুমে ততটা চমকপ্রদ ছিল না পারফরম্যান্স, তবে একটি করে সেঞ্চুরি করেন দুবারই। এবার করলেন ক্যারিয়ারের প্রথম দ্বিশতক।
সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ৩৩ ম্যাচের প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ারে ৯ ফিফটির সঙ্গে ৮ সেঞ্চুরিতে অমিতের সংগ্রহ ২ হাজার ৪২৫ রান। গড় ৪৯.৪৮, বাংলাদেশের বাস্তবতায় যা বেশ ভালো।
পাশাপাশি তিনি কিপিংও করেন, এটাও তার পক্ষে বাড়তি নম্বর যোগ করে। জাতীয় লিগে এবার সিলেটের অধিনায়কত্বও করছেন তিনি।
অমিতের এমন পারফরম্যান্স নজর কেড়েছে নির্বাচকদেরও। তবে আন্তর্জাতিক মঞ্চে নামানোর আগে আরও কিছু ধাপে পরীক্ষা নিয়ে তাকে পুরোপুরি প্রস্তুত করতে চান তারা।
“অমিত কিন্তু শুধু এই বছরের পারফরম্যান্স নয়, সার্বিক পারফরম্যান্সেই কিছুটা সামর্থ্য দেখানোর চেষ্টা করেছে। জাতীয় লিগে অভিষেক হওয়ার পর থেকে সে প্রতি বছর রান করেছে, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে।”
“এরপর তার জন্য ধাপ হলো এইচপিতে (হাই পারফরম্যান্স ইউনিট) আসা। সেখানে সে তিন বছরের বেশি সময় ধরে আছে। এইচপিতে তাকে বেশ কিছু ম্যাচ খেলানো হয়েছে। এইচপির যে অস্ট্রেলিয়া সফর হয়েছে, সেখানেও সে ছিল। চারটা ইনিংসে ব্যাটিং করেছে। আমি ছিলাম, তার ব্যাটিং দেখেছি।”
গত জুলাইয়ে এইচপির ওই অস্ট্রেলিয়া সফরে পাকিস্তান 'এ' দলের বিপক্ষে দুটি ম্যাচ খেলেন অমিত। পাকিস্তানের হয়ে টেস্ট খেলা খুররাম শাহজাদ, মোহাম্মদ আলি, কামরান গুলামদের নিয়ে সাজানো বোলিংয়ের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসে ৭১ রান করেন অমিত। বাকি তিন ইনিংস বড় করতে পারেননি তিনি।
ওই সফরেই প্রথমবার দেশের বাইরে আন্তর্জাতিক মানের বোলারদের মুখোমুখি হন অমিত। দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের সঙ্গে পরবর্তী ধাপের পার্থক্যটাও তার কিছুটা বুঝতে পারার কথা তখন।
তবে ওই সফরে ব্যর্থ হলেও অমিতের প্রতিভা বা সম্ভাবনা নিয়ে কোনো সংশয় নেই হান্নানের। তাই আভাস দিয়ে রাখলেন, জাতীয় দলে ডাক পাওয়া থেকে খুব বেশি দূরে নেই তরুণ এই ব্যাটসম্যান।
“অমিত এমন একজন ক্রিকেটার, যে নিয়মিত রান করছে। তাকে আমরা প্রক্রিয়ার মধ্যে রেখেছি, প্রস্তুত করছি। আমি বিশ্বাস করি, একজন ক্রিকেটারকে সুযোগ দিলে তাকে যেন যথেষ্ট সুযোগ দেওয়া হয়। আর সেই সুযোগ দেওয়ার আগে তাকে পরিপক্ব বা যথাযথ তৈরি করে নিয়ে যাওয়াটা তার জন্য যেমন ভালো, আমাদের জন্যও ভালো।”
“একজন ক্রিকেটারকে অভিষেক করানোর ক্ষেত্রে কোন কন্ডিশনে, কোথায় করালে ভালো হয়, এগুলো কিন্তু বড় ব্যাপার। অনেকগুলো বিষয় আলোচনা হয়েছে। অমিত আমাদের কাছাকাছি প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। এমন না যে, অমিত শুধু এই বছর রান করেছে। সে প্রতি বছরই রান করছে এবং (জাতীয় দলের) খুব কাছাকাছি রয়েছে।”
অমিত এভাবে পারফর্ম করতে থাকলে এই দূরত্বটুকু ঘুচে যেতেও সময় বেশি লাগবে না।