Published : 29 Apr 2025, 06:38 PM
ভিনসেন্ট মাসেকেসার ফুল লেংথ ডেলিভারি মিড অনের দিকে খেলেই রানের জন্য ছুটলেন মুশফিকুর রহিম। সম্ভাব্য বিপদ বুঝতে পেরে শেষ মুহূর্তে ফুল লেংথ ডাইভ দিলেন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। কিন্তু পারলেন না যথাসময়ে ক্রিজে ঢুকতে। সরাসরি থ্রোয়ে স্টাম্প এলোমেলো করে বিদায়ঘণ্টা বাজিয়ে দিলেন ওয়েসলি মাধেভেরে। মাথা নিচু করে মাঠ ছেড়ে গেলেন মুশফিক।
অথচ আগের সময়টায় চমৎকার ব্যাটিং করে দীর্ঘ খরা কাটিয়ে ওঠার সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন ৩৯ ছুঁইছুঁই ব্যাটসম্যান। কিন্তু অহেতুক রানআউটে অপমৃত্যু ঘটে ৪০ রানের ইনিংসের। এই আউটই যেন বাংলাদেশের গোটা দিনের ‘হাইলাইটস।’ একের পর এক উইকেট ছুড়ে বড় ইনিংসের সুযোগ হারিয়েছেন ব্যাটসম্যানরা।
এর মাঝেও অবশ্য ব্যতিক্রম ছিলেন সাদমান ইসলাম। প্রায় চার বছর পর টেস্টে সেঞ্চুরি করে দলের লিড পাওয়ায় বড় অবদান রাখেন বাঁহাতি ওপেনার। তার ব্যাটে ভালো কিছুর আশা জাগালেও অন্যদের ব্যর্থতায় দিনের শেষ দিকে মাত্র ২০ রানের মধ্যে ৪ উইকেট হারিয়ে হতাশাই সঙ্গী স্বাগতিকদের।
চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৭ উইকেটে ২৯১ রান। জিম্বাবুয়ের চেয়ে ৬৪ রানে এগিয়ে তারা। প্রথম ইনিংসে সফরকারীদের ২২৭ রানে গুটিয়ে দেয় নাজমুল হোসেন শান্তর দল।
দিনের প্রথম বলেই জিম্বাবুয়ের শেষ উইকেট নিয়ে শুরুটা দুর্দান্ত করে বাংলাদেশ। এরপর দুই ওপেনারের শতরানের জুটিতে জাগিয়ে তোলে বড় স্কোরের সম্ভাবনা। কিন্তু থিতু হয়েও একের পর এক ব্যাটসম্যানের উইকেট ছুড়ে আসার মিছিলে মিইয়ে গেছে সেই আশা।
২০২১ সালে জিম্বাবুয়ে সফরে টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি করেছিলেন সাদমান। প্রায় চার বছর একই দলের বিপক্ষে তিনি করেছেন ক্যারিয়ার সেরা ১২০ রান। ১৮১ বলের ইনিংসে তিনি মারেন ১৬ চার ও ১টি ছক্কা। ২২ ম্যাচের ক্যারিয়ারে এক ইনিংসে এটিই সর্বোচ্চ বাউন্ডারির রেকর্ড।
আগের দিন পাঁচ উইকেট নেওয়া তাইজুল মঙ্গলবার ব্লেসিং মুজারাবানিকে ফিরিয়ে ইনিংসের সমাপ্তি টানেন। ৬০ রানে ৬ উইকেট নিয়ে থামেন বাঁহাতি স্পিনার।
পরে প্রথম সেশনে কোনো উইকেট পড়তে দেননি দুই ওপেনার সাদমান ও এনামুল। শুরুতে অবশ্য কিছুটা নড়বড়ে ছিলেন তিন বছর পর টেস্ট খেলতে নামা এনামুল। দ্বিতীয় বলই লাগে তার হেলমেটে। এরপরও কয়েকটি ডেলিভারি ঠিকঠাক খেলতে পারেননি।
সময় নিয়ে ক্রমেই সামলে ওঠেন এনামুল। অন্য প্রান্তে সাদমান শুরু থেকেই ছিলেন সাবলীল। জিম্বাবুয়ের নির্বিষ বোলিংয়ের প্রাপ্য সাজা ঠিকঠাক দেন বাঁহাতি ওপেনার।
৭৮ বলে ফিফটি ছুঁয়ে ৬৬ বলে অপরাজিত থেকেন মধ্যাহ্ন বিরতিতে যান সাদমান। আগের পাঁচ টেস্টে সর্বোচ্চ ২৩ রানের ইনিংস খেলা এনামুল প্রথম সেশনে করেন ৩৮ রান।
দুজনের ব্যাটে আড়াই বছর পর উদ্বোধনী জুটিতে শতরানের দেখা পায় বাংলাদেশ। ভারতের বিপক্ষে ২০২২ সালে চট্টগ্রামেই শুরুর জুটিতে ১২৪ রান যোগ করেছিলেন শান্ত ও জাকির হাসান।
ওই জুটিকে ছাড়িয়ে যেতে পারেননি সাদমান-এনামুল। দ্বিতীয় সেশনের শুরুতে ড্রেসিং রুমের পথ ধরেন এনামুল। মুজারাবানির অফ স্টাম্প ঘেঁষা লেংথ ডেলিভারির লাইনে যেতে পারেননি তিনি। পেছনের প্যাডে লাগতেই আঙুল তুলে দেন আম্পায়ার।
১১৯ রানের ভাঙে শুরুর বন্ধন। ফেরার ইনিংসে ৩৯ রান করেন এনামুল। ৮০ বলের ইনিংসে ৪টি চার মারেন ৩২ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান।
নিখাঁদ ব্যাটিং উইকেটে পরে জুটি বাঁধেন সাদমান ও মুমিনুল হক। চমৎকার ব্যাটিংয়ে ১৪২ বলে তিন অঙ্কে পৌঁছান ৩০ ছুঁইছুঁই ওপেনার। প্রায় চার বছর ও ২৬ ইনিংসের সেঞ্চুরিখরা ঘোচানোর পর ব্রায়ান বেনেটের বলে একমাত্র ছক্কাটি মারেন সাদমান।
জিম্বাবুয়ের বোলাররা তেমন কোনো সুযোগ তৈরি করতে না পারায় তাদের হয়ে কাজটি যেন করে দেন মুমিনুল নিজেই। ওয়েলিংটন মাসাকাদজার হালকা ঝুলিয়ে দেওয়া বলে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়ে বসেন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান।
ফলে সমাপ্তি ঘটে মুমিনুলের ৩৩ রানের ইনিংসের। দ্বিতীয় উইকেট জুটি ভাঙে ৭৬ রানে।
পরের ওভারের প্রথম বলে বেনেটের বলে এলবিডব্লিউ হন সাদমান। রিভিউ নিয়েও লাভ হয়নি তার। নিজেকে অবশ্য দুর্ভাগা ভাবতেই পারেন তিনি। কারণ রিপ্লেতে দেখা যায়, বলটি কোনো রকমের লেগ স্টাম্প স্পর্শ করেছিল।
৩ উইকেটে ২০৫ রান নিয়ে চা বিরতিতে যায় বাংলাদেশ। তৃতীয় সেশনেই সব কিছু বদলে দেন ভিনসেন্ট মাসেকেসা। আর ৮৬ রান যোগ করতে ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলে স্বাগতিকরা। এর তিনটিই নেন অভিষিক্ত লেগ স্পিনার। অন্যটি মুশফিকের রানআউট।
চা বিরতির পর বেশ কিছুক্ষণ দলকে এগিয়ে নেন শান্ত ও মুশফিক। জিম্বাবুয়েকে ছাড়িয়ে লিড পেয়ে যায় বাংলাদেশ। কিন্তু সুখ বেশিক্ষণ সইতে পারেননি শান্ত। মাসেকেসার নিরীহ এক ডেলিভারিতে শর্ট মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়ে বসেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
টিকতে পারেননি জাকের আলি। মাসেকেসাকে ফিরতি ক্যাচ দেন উইকেটরক্ষ-ব্যাটসম্যান।
এর কিছুক্ষণ পর মুশফিকের সেই রান আউট। ফেরার আগপর্যন্ত দারুণ ব্যাটিংয়ে ৪ চার ও ১ ছক্কায় ৫৯ বলে ৪০ রান করেন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। সম্ভাবনা জাগিয়েও আরও একবার পঞ্চাশ ছুঁতে ব্যর্থ তিনি। ফিফটিখরা বেড়ে দাঁড়াল ১৩ ইনিংসে।
নাঈম হাসানকে নিয়ে প্রতিরোধের চেষ্টা করেন মেহেদী হাসান মিরাজ। কিন্তু মাসেকেসার লেগ স্পিনে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়ে যান নাঈম।
দিনের বাকি ৪ ওভারে আর উইকেট পড়তে দেননি মিরাজ ও তাইজুল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
জিম্বাবুয়ে ১ম ইনিংস: ৯০.১ ওভারে ২২৭ (সিগা ১৮*, মুজারাবানি ২; হাসান ১০-৩-২৪-০, তানজিম ১০-০-৪৯-১, মিরাজ ২১-৭-৪৪-০, তাইজুল ২৭.১-৬-৬০-৬, নাঈম ২০-৯-৪২-২, মুমিনুল ২-০-২-০)
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৮৭ ওভারে ২৯১/৭ (সাদমান ১২০, এনামুল ৩৯, মুমিনুল ৩৩, শান্ত ২৩, মুশফিক ৪০, জাকের ৫, মিরাজ ১৬*, নাঈম ৩, তাইজুল ৫*; এনগারাভা ১১-২-৪১-০, মুজারাবানি ১৬-৪-৪৪-১,, মাসাকাদজা ২৯-৫-৭৭-১, মাসেকেসা ১৪-০-৪৪-৩, মাধেভেরে ৮-০-২৯-০, বেনেট ৯-১-৪৯-১)।