মায়ের সঙ্গে কথা না বললে শান্তি পান না রনি

মায়ের ভালোবাসাই তাকে নিরন্তর প্রেরণা জোগায় ক্রিকেটের পথে এগিয়ে চলতে।

ক্রীড়া প্রতিবেদকচট্টগ্রাম থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 March 2023, 02:11 PM
Updated : 30 March 2023, 02:11 PM

‘বাবা, তোমাকে অনেক মনে পড়ছে। আমি জানি তুমি ওপর থেকে আমাদের দেখছ’- আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ম্যাচ সেরা পর সামাজিক মাধ্যমে এই ছিল রনি তালুকদারের অনুভূতির প্রকাশ। বাবা দেখে যেতে পারেননি ক্রিকেটে তার সাফল্য। তবে মা দেখতে পাচ্ছেন, এটুকুই আপাতত রনির তৃপ্তি। মায়ের ভালোবাসা আর ক্রীড়াপ্রেমী পরিবারের প্রেরণাতেই জাতীয় দলে রনির প্রত্যাবর্তন আর ক্রিকেটের পথে ছুটে চলা। 

২০১৪ সালে মারা যান রনির বাবা মনোরঞ্জন তালুকদার। পরের বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় রনির। দেশকে প্রতিনিধিত্ব করার সেই দিনটি বাবা দেখে যেতে পারেননি বলে আক্ষেপের শেষ নেই তার। সেবার এক ম্যাচেই থেমে যায় রনির আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার। তবে রনি হাল ছাড়েননি। ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলে যেতে থাকেন। তার পরিবারটাই যে ক্রিকেটময়!

তার অন্য দুই ভাইও খেলেছেন ক্রিকেট। যদিও তার মতো সাফল্য পাননি। বড় ভাই রাজীব তালুকদার স্বীকৃত পর্যায়ে খেলতে পারেননি। ছোট ভাই জনি তালুকদার একসময় নিয়মিত ছিলেন ঘরোয়া ক্রিকেটে। জাতীয় লিগে ঢাকা বিভাগের হয়ে একসঙ্গে খেলেছেন দুই ভাই, ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবেও খেলেছেন একসঙ্গে। তবে জনিও আপাতত ছিটকে পড়েছেন মূল স্রোত থেকে।

টিকে আছেন রনি। দীর্ঘদিন জাতীয় দলের বাইরে থাকলেও ঘরোয়া ক্রিকেটের শীর্ষ পর্যায়ে খেলে যান তিনি। একসময় বাবা জোগাতেন উৎসাহ। বাবার চলে যাওয়ার পর মায়ের সমর্থন ও অনুপ্রেরণায় এগিয়ে চলেছেন তিনি। প্রায় ৮ বছর পর জাতীয় দলে ফেরার অসাধারণ গল্পও রচনা করেছেন, দেশের ক্রিকেটে যা তৈরি করেছে দারুণ এক উদাহরণ। 

এই মাসের শুরুতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে শুরুটা ভালো করেও বড় কিছু করতে পারেনি। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে চলতি সিরিজে তা পুষিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ৩৮ বলে ৬৭ রানের তিনিই ম্যান অব দা ম্যাচ। দ্বিতীয় ম্যাচে ২৩ বলে ৪৪ রানের ইনিংস খেলে লিটন দাসের সঙ্গে জুটিতে নাম লিখিয়েছেন রেকর্ড বইয়ে।

তৃতীয় ম্যাচের আগের দিন চট্টগ্রামে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তিনি বললেন, পরিবারই তার নিরন্তর প্রেরণার উৎস। 

“আমার পরিবার ক্রীড়াপ্রেমী। আমার বাবা সবসময় খেলা পছন্দ করতেন। আমরা তিন ভাই খেলাধুলা করতাম। বড় ভাই খেলাধুলা করতেন। জনি, আমার ছোট ভাই এখনও খেলে। আমার মা-বাবা... বলতে গেলে আমার পরিবার থেকে যে সমর্থন পেতাম এটা অসাধারণ। মূল সমর্থনটা পরিবারই দিতো।” 

বিপিএলের সবশেষ আসরে রংপুর রাইডার্সের জার্সিতে হয়ে ৪২৫ রান করেন রনি, যা ছিল টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, বিপিএল শুরুর আগেই মা তাকে বলেছিলেন, বিপিএলে ভালো খেলতে পারলে সুখবর পেতে পারেন। হয়েছেও তাই। বিপিএলের পারফরম্যান্সেই তিনি ফিরতে পেরেছেন জাতীয় দলে।

মায়ের প্রতি রনির আবেগ-ভালোবাসা, মায়ের সঙ্গে তার সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতাকে ক্রিকেটের পথেও এগিয়ে চলার জ্বালানী হিসেবে মনে করেন রনি। 

“মা সবসময় আমার জন্য অনেক আশীর্বাদ করেন, চিন্তাভাবনা করেন। আমি যেন চোটে না পড়ি। আমি যেন ভালো খেলতে পারি। আমার দল যেন ভালো খেলে। এটা সবসময় আমার প্রতি আশীর্বাদ থাকেন। সবসময় ফোনে যোগাযোগ করেন, খোঁজখবর নেন। খেলার আগে মায়ের সঙ্গে কথা বলেই মাঠে যাই। এটা আমার কাছে ভালো লাগে। ওনার সঙ্গে কথা না বললে আমি নিজেই শান্তি পাই না।”