Published : 22 Apr 2024, 10:41 PM
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সহপাঠ্য ক্লাব বুয়েট সাংবাদিক সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদের ২০২৩-২৪ কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে।
রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী ছাত্রকল্যাণ পরিচালক ড. রূপক মুৎসুদ্দী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, “অনিবার্য কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠ্য ক্লাব বুয়েট সাংবাদিক সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদ ২০২৩-২৪ কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হলো।”
এ বিষয়ে বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আল আমিন সিদ্দিক সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কমিটিটা বিলুপ্ত করা হয়েছে। এখন আপাতত নতুন করে কমিটি দেওয়া হচ্ছে না। গঠনতন্ত্র দেখে সমিতির কার্যপরিধি পর্যালোচনা করে কমিটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।”
বুয়েট সাংবাদিক সমিতির সদস্যরা দেশের অন্যান্য সাংবাদিক সমিতির সদস্যদের মতো কোনো জাতীয় সংবাদমাধ্যমে সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত নন। তাদের একটি নিজস্ব নিউজ পোর্টাল ও ফেইসবুক পেইজ রয়েছে, যেখানে তারা বুয়েট সম্পর্কিত সংবাদ ও তথ্য প্রচার করেন।
সমিতির পক্ষ থেকে এই নিউজ পোর্টাল ও ফেইসবুক পেইজের মাধ্যমে বুয়েট ক্যাম্পাসে গুজব ও অপপ্রচার চালানোর অভিযোগ আছে। তাছাড়া টাঙ্গুয়ার হাওরে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে যে ৩৪ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ, তাদের মধ্যে সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদকসহ ছয়জন সদস্য ছিলেন।
ওই ছয় আসামি হলেন- মাঈন উদ্দীন, ফাহাদুল ইসলাম, মাহমুদুল হাসান, খালিদ আম্মার, তানভীর আরাফাত ফাহিম ও সাদ আদনান অপি।
২০২৩ সালের ৩১ জুলাই ঢাকা থেকে সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরে বেড়াতে আসা বুয়েটের ২৪ জন শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৩৪ শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। যাদের নামে এখনো আদালতে মামলা চলমান এবং তারা জামিনে আছেন।
পুলিশের দাবি, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা ইসলামী ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তারা হাওরে বেড়ানোর উছিলায় সেখানে গোপন বৈঠক ও সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্র করতে গিয়েছিলেন।
এ বিষয়ে জানতে সদ্য বিলুপ্ত বুয়েট সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মঈন উদ্দীনকে ফোন করা হলে তার নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।
সহপাঠ্য ক্লাব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হলেও সংগঠনের নাম সাংবাদিক সমিতি কেন, এ প্রশ্নের উত্তরে সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি মো. হিমু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সহপাঠ্য ক্লাব হিসেবে বুয়েট সাংবাদিক সমিতি ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। প্রতিষ্ঠাকাল থেকে এটা বুয়েট সাংবাদিক সমিতি নামে পরিচিত।
“এটার নামকরণ কেন সাংবাদিক সমিতি করা হয়েছে, সেটা আমরা বলতে পারছি না। যারা প্রতিষ্ঠা করেছে, তারাই বলতে পারবে।”
২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর বুয়েটের শেরে বাংলা হলের আবাসিক ছাত্র আবরার ফাহাদকে রাতে ছাত্রলীগের এক নেতার কক্ষে নিয়ে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়। সেই ঘটনায় ক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে বুয়েট। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বুয়েটে নিষিদ্ধ হয় ছাত্ররাজনীতি।
গত ২৮ মার্চ গভীর রাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতিসহ একদল নেতাকর্মী বুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের অংশ হিসেবে ২৯ মার্চ থেকে ৩ এপ্রিল পর্যন্ত ছয় দফা দাবিতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে পুরকৌশল বিভাগের ২১তম ব্যাচের ছাত্র ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ইমতিয়াজ হোসেন রাহিম রাব্বীর হলের সিট বাতিল করা হয়েছিল। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ ছিল, রাব্বীই ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ নেতাদের সমাগম ঘটিয়েছিলেন।
পরে ওই শিক্ষার্থীর রিট আবেদনে হলের সিট বাতিলের সিদ্ধান্ত স্থগিত করে দেয় হাই কোর্ট। তার আলাদা আবেদনে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতির ওপর জারি করা নিষেধাজ্ঞাও স্থগিত করে উচ্চ আদালত। তাতে প্রকৌশল শিক্ষার এ বিদ্যাপীঠে ছাত্র রাজনীতি ফেরার পথ খোলে। তবে ছাত্রলীগসহ কোনো সংগঠনই এখনো প্রকাশ্যে কমিটি দেয়নি বুয়েটে।
৪ এপ্রিল থেকে ঈদের ছুটি শুরু হয় বুয়েটে। রোজার ঈদ ও পহেলা বৈশাখের টানা ১৩ দিনের ছুটি শেষে ১৭ এপ্রিল বুয়েট ক্যাম্পাস খোলে। সেদিন থেকে দাপ্তরিক কার্যক্রম শুরু হলেও ‘ছাত্র রাজনীতিমুক্ত’ ক্যাম্পাসের দাবিতে পরীক্ষা বর্জন অব্যাহত রাখেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশ না নেওয়ায় চলমান পরীক্ষা স্থগিত করেছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) কর্তৃপক্ষ।
এদিকে ক্যাম্পাস খোলার আগে শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে গত ১৬ এপ্রিল বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালক (ডিএসডব্লিউ) অধ্যাপক মিজানুর রহমানকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এ পদে নতুন দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পুরকৌশলের অধ্যাপক মোহাম্মদ আল আমিন সিদ্দিককে। এর পরও শিক্ষার্থীরা একাডেমিক কার্যক্রমে ফেরেননি।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত স্থগিত করে হাই কোর্ট যে আদেশ দিয়েছে, তার বিরুদ্ধে আপিল করা হলে এবং বর্জন করা পরীক্ষার নতুন তারিখ ঠিক করা হলে তারা অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমে ফিরবেন।