কর্মসূচীতে একদিকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবং আরেক দিকে সাধারণ সম্পাদক নেতৃত্ব দিচ্ছেন; যারা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের একই প্যানেল থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন।
Published : 16 Jan 2023, 07:07 PM
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ক্যাম্পাসে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির দুই অংশ।
সোমবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতির নেতৃত্বে একটি অংশ প্রশাসনিক ভবনের সামনে এবং সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে আরেকটি অংশ একই সময়ে বুদ্ধিজীবী চত্বরে একত্রিত হয়ে সমাবেশ করে।
সমিতির উভয় অংশই মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের আওয়ামীপন্থি শিক্ষক হিসেবে পরিচিত। সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদেও এ পক্ষের শিক্ষকরাই নেতৃত্বে রয়েছেন। সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে সমিতির দুই অংশের দ্বন্দ্বের বিষয়টি সোমবারের পৃথক কর্মসূচির মাধ্যমে প্রকাশ্যে এল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয় ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি কার্যনির্বাহী পরিষদ ২০২২’ এর ব্যানারে। এ কর্মসূচি সঞ্চালনা করেন চবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) আব্দুল হক। এতে শতাধিক শিক্ষক অংশ নেন।
মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসনের বিরুদ্ধে শিক্ষকদের জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন, সিন্ডিকেটে শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনে গড়িমসি এবং শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়।
একই সঙ্গে চারুকলা ইনস্টিটিউটের বর্তমান অচলাবস্থা নিরসনে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণে ব্যর্থতার অভিযোগ এনে শিক্ষক সমিতি এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করছে বলে কর্মসূচি চলাকালে বলা হয়।
সমিতির সভাপতি ভারপ্রাপ্ত অধ্যাপক আব্দুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে আমাদের দাবিগুলো না মানা হলে কিংবা এ বিষয়ে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করতে না দেখা গেলে আমরা পরবর্তী কার্যনির্বাহী পরিষদের সভায় আন্দোলনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিব।”
এদিকে একই সময় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক সজীব কুমার ঘোষের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিজীবী চত্বরের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষক সমিতির আরেকাংশ। এতে পঞ্চাশ জনের মত শিক্ষককে অংশ নিতে দেখা যায়।
‘শিক্ষক সমিতির সাধারণ শিক্ষকবৃন্দের’ ব্যানারে ‘অবৈধ মানববন্ধন মানি না’ স্লোগানে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।
‘শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভায় সম্মানিত শিক্ষকদের পেশকৃত মতামতকে উপেক্ষা করে ব্যক্তিস্বার্থ উদ্দেশ্য হাসিলে সরকার ও প্রশাসন বিরোধী মানববন্ধনের’ প্রতিবাদে বেলা ১টা পর্যন্ত এ কর্মসূচি পালন করেন তারা।
এ কর্মসূচিতে বক্তব্যে অধ্যাপক সজীব কুমার বলেন, “আমরা সবসময়ই প্রশাসনের সাথে কথা বলে শিক্ষকদের দাবিগুলো পূরণের চেষ্টা করি। তবে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি (আব্দুল হক) এবং তার সাথে কয়েকজন শিক্ষক প্রতিবারই আলোচনায় বসাটা এড়িয়ে গেছেন। মাননীয় উপাচার্য আলোচনায় বসতে চাইলেও কোনোভাবেই দাবিগুলো নিয়ে প্রশাসনের নিকট যেতে আগ্রহ প্রকাশ করেননি তারা।”
তার ভাষ্য, “তিনি (আব্দুল হক) মূলত সহ সভাপতি। ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হয়ে তিনি বারবার নিজের সিদ্ধান্তে শিক্ষক সমিতির সভা ডেকেছেন। তিনি আমাদের অনুরোধকে অগ্রাহ্য করে নিজ সিদ্ধান্ত নিয়ে তা আবার প্রেস রিলিজে দিয়ে দিয়েছেন।
“উনার এই কর্মকাণ্ডগুলো শিক্ষক সমিতির দীর্ঘ ঐতিহ্যকে ভুলুন্ঠিত করেছে। আমি এই মানববন্ধনে আসতে চাইনি। কিন্তু সাধারণ সম্পাদক হিসেবে শিক্ষকদের প্রতি দায়বদ্ধতার কারণেই আমাকে আজকে এখানে আসতে হয়েছে।”
চবি শিক্ষক সমিতির নির্বাচিত সভাপতি ছিলেন সেলিনা আখতার। ম্যানেজমেন্ট বিভাগের এ অধ্যাপক গত ১৯ সেপ্টেম্বর রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে নিয়োগ পান। এরপর থেকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন সমিতির সহ সভাপতি আব্দুল হক।