ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীরা দফায় দফায় মারামারিতে জড়ান।
Published : 16 Feb 2024, 11:56 PM
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে সরস্বতী পূজার কনসার্টকে ঘিরে ছাত্রলীগের দুই পক্ষে সংঘর্ষে ১৪ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে একটি বেসরকারি হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র বা আইসিইউতে ভর্তি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাত ১ টা থেকে ৪ টা পর্যন্ত জগন্নাথ হলে দফায় দফায় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
এর জেরে শুক্রবার বিকেলে মধুর ক্যান্টিনেও মারামারিতে জড়ান দুই পক্ষের নেতা-কর্মীরা।
জগন্নাথ হলে মারামারিতে আহতরা হলেন: সৈকতের সমর্থক অপূর্ব চক্রবর্তী, পলাশ রায় সৌরভ, পল্লব মণ্ডল, অর্পণ কুমার বাপ্পি, বিপ্লব পাল, বর্ষণ রয়, কার্তিক কুমার এবং ইনানের অনুসারী শ্রীরূপ কুন্ডু, অপূর্ব, অভি, রিদ্ধি, ধ্রুব, চিন্ময় ও প্রিতম।
হামলায় অপূর্ব চক্রবর্তীর মাথা ফেটে গেছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মাথায় আটটি সেলাই দেওয়ার পর শুক্রবার বিকেলে তাকে ধানমন্ডির পপুলার হাসপাতালের আইসিউতে ভর্তি করা হয়।
ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জানান, বৃহস্পতিবার রাতে জগন্নাথ হল মাঠে কনসার্টের আয়োজন করা হয়। সেখানে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত উপস্থিত ছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মমতাজের গান শেষে ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতারা জগন্নাথ হল থেকে বের হওয়ার সময় ধাক্কাধাক্কি হয়। সেখানে ইনানের অনুসারী গণেশ ঘোষ তার কর্মীদের নিয়ে জটলা তৈরি করেন। তাদের সঙ্গে সৈকতের অনুসারীদের ঝামেলা তৈরি হয়। সৈকত বিষয়টি মীমাংসা করে চলে যান।
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য, সৈকত চলে যাওয়ার পর এ নিয়ে দুই পক্ষের নেতা-কর্মীদের মধ্যে হট্টগোল বাঁধে। রাত আড়াইটার দিকে ইনানের অনুসারীরা সৈকতের অনুসারীদের উপর হামলা করে। এ সময় দুই পক্ষের হাতেই হকিস্টিক, পাইপসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র ছিল।
সৈকতের অনুসারী পলাশ রায় সৌরভ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা যখন সৈকত ভাইকে বিদায় দিয়ে ফিরছিলাম, তখন ইনান ভাইয়ের সমর্থকরা আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা করে। এই হামলায় আমাদের ৭-৮ জন আহত হয়েছে। এর মধ্যে অপূর্ব চক্রবর্তী গুরুতর আহত হন। এতে তার চোখের কোনায় কেটে যায় ও মাথা ফেটে যায়৷
“আজকে দুপুরে ১৫-২০ জন মধুর ক্যান্টিনে ইনান ভাইকে জানাতে গেলে আমাদের ওপর আবার হামলা করে। এ সময় আমাদের দুজন জুনিয়রের হাত কেটে যায়।”
তবে ইনানের অনুসারী জগন্নাথ হলের রাজীব বিশ্বাস দায় দিয়েছেন সৈকত অনুসারীদের। তিনি বলেন, “ধাক্কা লাগার পর গণেশ ঘোষ তাৎক্ষণিকভাবে সৈকতের কাছে ক্ষমা চাইলে তিনি মীমাংসা করে হল ত্যাগ করেন।
“পরে সৈকতের অনুসারীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে আমাদের ওপর হামলা করেন। হামলায় আমাদের ৮-৯ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন।’
জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ মিহির লাল সাহা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শিক্ষার্থীদের ভুল-বোঝাবুঝিতে গতকাল রাতে কিছুটা বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছিল। এ সময় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। বিষয়টি উভয় পক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে মীমাংসা করে দেওয়া হয়েছে।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত বলেন, “মাতাল অবস্থায় গণেশ আমার গায়ের ওপর এসে পড়ে। আমি বিষয়টি মীমাংসা করে চলে আসি। পরে জানতে পারলাম, হলের কয়েকটি গ্রুপ একত্রিত হয়ে বাইরে থেকে লোক এনে হামলা করেছে।
“যারাই এ ঘটনায় জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে হবে৷ ছাত্রলীগও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবে।”
অন্যদিকে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শুনেছি গতকাল রাতে জগন্নাথ হলে কনসার্ট শেষে বিশৃঙ্খলা হয়েছিল। পরে হল প্রশাসন গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় আজকে মধুর ক্যান্টিনে কিছু ছেলেপেলের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা ও উত্তেজনাপূর্ণ পরিবেশ তৈরি হয়।
“ছাত্রলীগের কেউ যদি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় জড়িত থাকে, আমরা অবশ্যই তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করব।”
আরও পড়ুন...
চবিতে ফের সংঘর্ষে ছাত্রলীগ, আহত ১৩
চবি ছাত্রলীগের দুপক্ষের সংঘর্ষ, আহত ৮
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপে মারামারি