ঢাবির ৪ শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে হল ছাড়া করার অভিযোগ ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে

ছাত্রলীগ নেতা সিয়াম বলছেন, “ফেইসবুকে রাষ্ট্রবিরোধী পোস্ট দেওয়ায় তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়, পরে তারা স্বেচ্ছায় মুচলেকা দিয়ে হল ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 May 2023, 12:42 PM
Updated : 24 May 2023, 12:42 PM

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চার শিক্ষার্থীকে মারধর করে মাস্টারদা সূর্যসেন হল ছাড়া করার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে।

মঙ্গলবার বিকাল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত প্রায় ৫ ঘণ্টা ধরে হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিয়াম রহমানের কক্ষে নির্যাতন চালানো হয় বলে ওই শিক্ষার্থীদের অভিযোগ। পরে মুচলেকা নিয়ে তাদের হল থেকে বের করে দেওয়া হয়।

বুধবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগ করেন ওই চার শিক্ষার্থী।

তবে মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করে সিয়াম রহমান বলেছেন, “ফেইসবুকে রাষ্ট্রবিরোধী পোস্ট দেওয়ায় তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়, পরে তারা স্বেচ্ছায় মুচলেকা দিয়ে হল ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।”

অভিযোগকারী চার শিক্ষার্থী হলেন- ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের আলম বাদশা, একই বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের লুতফর রহমান, আরবি বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের আশিকুর রহমান ও মনোবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের আল-আমিন।

মঙ্গলবার তারা হল প্রশাসন বরাবর অভিযোগ দিয়েছেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে হলের সিনিয়র হাউজ টিউটর শহীদ কাজীকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাকির হোসেন ভূঁইয়া জানিয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে চার শিক্ষার্থী বলেন, মাস্টারদা সূর্যসেন হলের ৫৩২ নম্বর কক্ষে তারা ছয়জন থাকেন। সেখানে সুমন আহমেদ নামে ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের এক শিক্ষার্থী অবৈধভাবে থাকেন। সম্প্রতি তাকে হল থেকে বের হয়ে যেতে বললে সুমন বিষয়টি সূর্যসেন হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিয়াম রহমানকে জানান।

মঙ্গলবার বিকাল ৩টায় হল ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আহাদ তাদেরকে সিয়াম রহমানের ৪৫০ নম্বর কক্ষে ডেকে নেন।

লিখিত বক্তব্যে শিক্ষার্থীরা বলেন, “আমরা সেখানে গেলে দেখতে পাই সিয়াম রহমান এবং সুমন আহমেদের সাথে আগে থেকেই লাঠিসোঁটা নিয়ে অবস্থান করছিলেন হল ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি হামিদ কারজাই, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ জামান অভি, উপ আইন সম্পাদক মুহাম্মদ তালহা, আপ্যায়ন সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম নীরব।

“আমরা রুমে প্রবেশের সাথে সাথে আমাদের মোবাইল কেড়ে নেয়। আমাদের মোবাইল চেক করতে থাকে। মোবাইলে আশানুরূপ কিছু না পেয়ে উপর্যুপরি কিল, ঘুসি ও লাথি দিতে থাকেন আমাদের চারজনকে। সুমন আহমেদকে রুম থেকে চলে যেতে বলায় আমরা আর হলে থাকতে পারব না বলে সাফ জানিয়ে দেয়।”

সিয়াম রহমান জোর করে মুচলেকা নেয় অভিযোগ করে লিখিত বিবৃতিতে বলা হয়, “হলে থাকলে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন সিয়াম রহমান। ক্রিকেট স্টাম্প নিয়ে পেটাতে পেটাতে আমাদেরকে ৫ ঘণ্টা পর রাত ৮টার সময় বের করে দেয়। আমরা ভয়ে হলে আর অবস্থান করিনি। রাতেই আমরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিই।

“আমাদের কাছ থেকে আলাদা চারটা মুচলেকা নেয় এই বলে যে, আমরা বর্তমানে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত নই। সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের সাথে একমত নই। অন্যায়ভাবে সুমন আহমেদকে রুম থেকে বের করেছি। হল থেকে স্বেচ্ছায় বের হয়ে যাব।”

অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করলে সিয়াম রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “একজন শিক্ষার্থীকে তারা (অভিযোগকারীরা) হল থেকে বের করে দিতে পারে না। ছাত্রলীগের নাম ব্যবহার করে এর আগেও তারা হল থেকে একজনকে বের করে দিয়েছে।

“এ ঘটনায় আমি তাদের মীমাংসার জন্য আমরা রুমে ডেকে এনেছিলাম। পরে জানতে পারলাম তারা আমাদের জননেত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে ফেইসবুকে বিদ্রুপাত্মক পোস্ট দিয়েছে, পদ্মা সেতুকে নিয়ে কিছু গুজব সৃষ্টিকারী পোস্ট দিয়েছে। সেগুলো আবার বিভিন্ন গ্রুপে শেয়ার করেছে। এজন্য তারা আমার কাছে মাফ চায় এবং মুচলেকা দিয়ে হল ছেড়ে দিতে সিদ্ধান্ত নেয়।”

সিয়াম রহমান কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সাদ্দাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখব।”