যে অবস্থায় ভাস্কর্যটি উদ্ধার হয়েছে, সে অবস্থায় কেবল জোড়া দেওয়া হয়েছে।
Published : 18 Feb 2023, 08:42 PM
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের পাশ থেকে ‘গুম হয়ে’ যাওয়া রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতিবাদী ভাস্কর্যটি ফের আগের জায়গায় বসেছে, তবে তা ফিরেছে ছিন্নভিন্ন রূপে।
পাশের সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে শুক্রবার বিকালে ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় ভাস্কর্যটিকে দুই টুকরো অবস্থায় উদ্ধারের পর শনিবার জোড়া দিয়ে তা স্থাপন করেন চারুকলার শিক্ষার্থীরা।
এবার ভাস্কর্যের দুই পাশে দুটি ব্যানার টাঙিয়ে দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এক ব্যানারে লেখা, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল এবং সব ধরনের সেন্সরশিপ বন্ধ কর’। আরেক ব্যানারে লেখা, ‘তোমার পূজোর ছলে তোমায় ভুলেই থাকি’।
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক ‘সেন্সরশিপ ও নিপীড়নের’ ঘটনার প্রতিবাদে গত মঙ্গলবার বইমেলার টিএসসি সংলগ্ন প্রবেশমুখে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাস্কর্যটি স্থাপন করেন একদল শিক্ষার্থী। ছাত্র ইউনিয়নের সহযোগিতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীরা এ ভাস্কর্য নির্মাণ করে।
ভাস্কর্যটিতে কবিগুরুকে উপস্থাপন করা হয় ভিন্ন রূপে; তার মুখে টেপ আটকানো, হাতে থাকা কাব্যগ্রন্থ গীতাঞ্জলিতে ঠুকে আছে পেরেক, সেটা রক্তাক্ত।
ভাস্কর্য স্থাপনের দুদিন পর বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সেটি আর সেখানে দেখা যায়নি। পরে শিক্ষার্থীরা ওই স্থানে ‘গুম হয়ে গেছেন রবীন্দ্রনাথ!’ শিরোনামের এক ব্যানার টানিয়ে দেন।
শুক্রবার বিকালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের টিএসসি সংলগ্ন ফটক ও ছবির হাটের মাঝামাঝি স্থানে ভাস্কর্যটির দুইটি খণ্ডিত অংশ উদ্ধার করেন শিক্ষার্থীরা। সেই খণ্ড দুটি জোড়া লাগিয়ে শনিবার ছিন্নভিন্ন রূপেই হাজির করা হয়েছে প্রতিবাদী ভাস্কর্যটিকে।
ভাস্কর্যটি নির্মাণের সঙ্গে জড়িত ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সভাপতি শিমুল কুম্ভকার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর রাতের আঁধারে ভাস্কর্যটি অপসারণ করে দুই খণ্ড করে ফেলেছিল। আমরা সেটা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে উদ্ধার করে পুনরায় স্থাপন করেছি।
‘গুম হওয়া’ রবীন্দ্র-ভাস্কর্য মিলল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে
টিএসসিতে রবিঠাকুরের মুখ বাঁধা ভাস্কর্য
“‘তোমার পূজোর ছলে তোমায় ভুলেই থাকি’ এই লাইনটি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক গোলাম রব্বানীকে উদ্দেশ্য করে লেখা হয়েছে।”
শিমুল কুম্ভকার বলেন, “আমরা যখন প্রথম ভাস্কর্যটি বসাই, তখন স্যার (প্রক্টর) বলেছেন, এটা অপসংস্কৃতি আর রবীন্দ্রনাথকে বিকৃত করা। অথচ তিনিই আবার সেই ভাস্কর্যটি ভেঙে ফেলেছেন। আমরা মনে করি ভেঙে ফেলার মাধ্যমে তিনিই রবীন্দ্রনাথকে অবমাননা করেছেন।”
ভাস্কর্যটি স্থাপনে অনুমতি না নেওয়ার যে অভিযোগ তুলেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, সে বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ভাস্কর্য বিভাগের এই শিক্ষার্থী বলেন, “এটা একটা প্রতিবাদ। পৃথিবীর কোথাও কোনো প্রতিবাদের জন্য কখনও অনুমতি নেওয়া হয়নি।
“প্রক্টর স্যারের কাছে যদি অনুমতি চাইতাম, তিনি যদি আমাদের অনুমতি না দিতেন- তাহলে কি আমরা প্রতিবাদ করব না? তাই অনুমতি নিয়ে ভাস্কর্য বসাতে হবে- এটা কোনো যুক্তি নয়।”
অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা এ বিষয়ে আমাদের অবস্থান জানিয়ে দিয়েছি৷ কিন্তু এরপরও যারা আবারও এটি এখানে এনে স্থাপন করেছে, তাদের উদ্দেশ্য কোনোভাবেই মহৎ নয়।
“তারা একটি সুন্দর সংস্কৃতিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে। যখন আমাদের বাঙালি জাতিসত্তার প্রতীক বইমেলা চলছে, তখন এই ধরনের কর্মকাণ্ড কোনোভাবে কাম্য নয়। আমি তাদেরকে পরামর্শ দিতে চাই, আপনারা নিজ দায়িত্বে এটি সরিয়ে ফেলুন। অন্যথায় যে কোনো ধরনের সমস্যার দায়-দায়িত্ব তাদের নিতে হবে।”