মঙ্গলবার থেকে ৩ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা।
Published : 01 Jul 2024, 06:59 PM
মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে হাই কোর্টের দেওয়া রায়ের মাসখানেক পর লাগাতার আন্দোলনের দিকে এগোচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা।
২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী সোমবার বিক্ষোভ দেখিয়ে ৩ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন।
একই দাবিতে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। আর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে।
বেলা ১১টার দিকে 'বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন' ব্যানারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রন্থাগারের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে রাজু ভাস্কর্যের সামনে গিয়ে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।
সমাবেশ থেকে ৩ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- মঙ্গলবার বেলা আড়াইটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার থেকে গণপদযাত্রা। দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীদের একই সময়ে এই কর্মসূচি পালনে আহ্বান জানানো হয়েছে।
৩ ও ৪ জুলাই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সাত সরকারি কলেজ এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ঢাকার অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা একত্রিত হবেন রাজু ভাস্কর্যে।
৪ জুলাই পর্যন্ত সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করা হবে জানিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, “৪ জুলাইয়ের মধ্যে আইনিভাবে আমাদের দাবির বিষয়ে চূড়ান্ত সুরাহা করতে হবে। আমাদের আশ্বস্ত করতে হবে, যাতে কোটা ব্যবস্থার চূড়ান্ত ফয়সালা করা হয়।
সর্বজনীন পেনশনের প্রত্যয় স্কিম প্রজ্ঞাপনের প্রতিবাদে শিক্ষকদের আন্দোলনে সংহতি জানান নাহিদ ইসলাম। তবে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে গ্রন্থাগার খোলা রাখার দাবি জানান তিনি।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর সরকারি চাকরিতে নারী কোটা ১০ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ এবং জেলা কোটা ১০ শতাংশ বাতিল করে পরিপত্র জারি করে সরকার।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জারি করা ওই পরিপত্রে বলা হয়, নবম গ্রেড (আগের প্রথম শ্রেণি) এবং দশম থেকে ১৩তম গ্রেডের (আগের দ্বিতীয় শ্রেণি) পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি বাতিল করা হল। এখন থেকে মেধারভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হবে।
তবে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা বাতিল হলেও তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদে কোটা ব্যবস্থা আগের মতই বহাল থাকবে বলে ওই পরিপত্রে বলা হয়।
ওই পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান অহিদুল ইসলামসহ সাতজন।
ওই আবেদনের চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত ৫ জুন হাই কোর্টের একটি বেঞ্চ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয়।
ওইদিনই রায় প্রত্যাখান করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ দেখান শিক্ষার্থীরা। এরপর ওই রায় স্থগিত চেয়ে ৯ জুন আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়: সোমবার দুপুরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী কলা ভবনের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি রায়সাহেব বাজার মোড় হয়ে বাহাদুর শাহ পার্ক প্রদক্ষিণ করে ক্যাম্পাসের ভাষা শহীদ রফিক ভবনের সামনে এসে সমাবেশে পরিণত হয়।
শিক্ষার্থীদের হাতে নানা স্লোগানের প্ল্যাকার্ড দেখা যায়, যার মধ্যে আছে-‘আঠারোর হাতিয়ার, জেগে উঠো আরেকবার’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথায় কবর দে’, ‘কোটা প্রথা নিপাত যাক, মেধাবীরা মুক্তি পাক, ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘শেখ হাসিনার বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’।
সমাবেশে বাংলা বিভাগের দশম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাজ্জাদ হোসেন মুন্না বলেন, “২০১৮ সালে আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার সেসময় কোটা পদ্ধতি বাতিল করে। কিন্তু ২০২৪ সালে এসে হাই কোর্ট সেই কোটা পুনর্বহাল করেছেন, হাই কোর্টের রায়কে আমরা প্রত্যাখ্যান করছি।”
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী জসীম উদ্দিন বলেন, “সরকারি চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে কোটা নয়, বরং মেধাকে যাচাই করে চাকরি নিশ্চিত করতে হবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো আমাদের দেশেও কোটা আধুনিকায়ন করতে হবে।”
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়: একদল শিক্ষার্থী কোটা পদ্ধতি বাতিলসহ চার দাবিতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন।
সোমবার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে ছাত্র সমাবেশ করে শিক্ষার্থীরা। সেখান থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক সংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে। ১০ মিনিট অবরোধ শেষে সড়ক ছেড়ে দেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা চার দাবির মধ্যে রয়েছে- ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখতে হবে। পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে (সকল গ্রেডে) ‘অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক’ কোটা বাদ দিতে হবে এবং সংবিধান অনুযায়ী কেবল অনগ্রসর ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করা যেতে পারে।
সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না এবং কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দিতে হবে। এছাড়া দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
আন্দোলনরত আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী আরিফ সোহেল বলেন, “মুক্তিযোদ্ধাদের নামে কোটা চালু করে মুক্তিযোদ্ধাদেরকে একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। যদিও তারা কোনো প্রকার বৈষয়িক লাভের উদ্দেশ্যে যুদ্ধ করেননি।
“মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি অবমাননাকর এই কোটা ব্যবস্থা চাই না। এই মহান সংগ্রামে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হওয়ার আগ পর্যন্ত আমাদের লড়াই চলমান থাকবে।”
আন্দোলনরত আরেক শিক্ষার্থী উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের জাহিদুল ইমন বলেন, “আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য আগামী ৪ জুলাই দিন ধার্য করা হয়েছে।
“জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এই অসাম্য রায়ের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে।”
আরও পড়ুন: