১৯ সদস্যের ‘বোর্ড টানেলার্স’ দলটি আগামী ২৭-২৯ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে ফাইনালে অংশ নেবে।
Published : 09 Mar 2025, 05:38 PM
ইলন মাস্কের ‘নট আ বোরিং কম্পিটিশন’ এর চূড়ান্ত পর্বে অংশ নিতে যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশের (আইইউবি) দুই শিক্ষার্থী।
অ্যাকাউন্টিং বিভাগের শাহ আসিফ হাফিজ ও ফাইন্যান্স বিভাগের দেওয়ান মো. আলিফ বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠিত ‘বোর্ড টানেলার্স’ দলের সদস্য।
১৯ সদস্যের এই দলটি আগামী ২৭-২৯ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে ফাইনালে অংশ নেবে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।
ইলন মাস্কের টানেল নির্মাণ প্রতিষ্ঠান ‘দ্য বোরিং কোম্পানি’ প্রতি বছর এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। বিভিন্ন দেশ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থী ও গবেষকরা টানেল নির্মাণ সম্পর্কিত উদ্ভাবনী ধারণা ও প্রযুক্তি নিয়ে প্রতিযোগিতায় অংশ নেন।
প্রতিযোগিতায় দলগুলোকে ৩০ মিটার দীর্ঘ ও ৫০০ সেন্টিমিটার প্রশস্ত একেকটি টানেল খনন করতে হবে। খননের গতি, নির্ভুলতা, ও নতুন প্রযুক্তির প্রয়োগ- এই তিনটি বিভাগে প্রতিযোগীদের মূল্যায়ন করা হবে।
প্রতিযোগিতার উদ্দেশ্য হলো নগর পরিকল্পনা, পরিবহন, অবকাঠামো, প্রতিরক্ষা, মহাকাশ গবেষণা এবং খনিজ অনুসন্ধানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে টানেল নির্মাণের খরচ কমানো ও কার্যকারিতা বৃদ্ধি করা।
‘বোর্ড টানেলার্স’ গঠিত হয় ২০২৩ সালে। তারা মাইক্রোটানেল বোরিং মেশিন (এমটিবিএম) নামে একটি বিশেষ যন্ত্র তৈরি করেছে, যা রোবোটিক্স এবং মেকানিকাল, ইলেকট্রিক্যাল, সিভিল ও কম্পিউটার প্রকৌশল ব্যবহার করে কার্যকরভাবে মাটির নিচে সুড়ঙ্গ খনন করতে পারে।
শাহ আসিফ বলেন, “গত বছর আমরা যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে আমাদের পরিকল্পনা উপস্থাপন করি। ইউনিভার্সিটি অফ পেনসিলভানিয়া, ভার্জিনিয়া টেক, ইটিএইচ জুরিখ, এবং ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাসের মতো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমাদের প্রতিদ্বন্দীতা করতে হয়। তখনো আমাদের যন্ত্রটি পুরোপুরি তৈরি হয়নি, তাই আমরা শুধু আমাদের আইডিয়া উপস্থাপন করেছিলাম এবং ফাইনালে পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিলাম। রুকি অ্যাওয়ার্ডও জিতেছিলাম।
“এবার আমরা যন্ত্রটিকে আরও উন্নত করেছি এবং আশা করছি যে মার্চে যুক্তরাষ্ট্রে যে প্রতিযোগিতা হবে সেখানে সেটিকে কার্যকরভাবে চালাতে পারবো।”
দলের আরেক সদস্য মো. আলিফ বলেন, “এটি শুধু একটি টানেল খননের প্রতিযোগিতা নয়; এটি ভবিষ্যতের অবকাঠামো নির্মাণের নতুন পথ উন্মোচন করার একটি দারুণ সুযোগ। আমরা বিশ্বকে দেখাতে চাই যে, বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাও উন্নত প্রযুক্তি উদ্ভাবনে পিছিয়ে নেই। এই যাত্রায় আইইউবি কর্তৃপক্ষ আমাদের যে সহায়তা ও সমর্থন দিয়েছে তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”
আইইউবির উপাচার্য অধ্যাপক ম. তামিম বলেন, “বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনন্য অর্জন। এতে প্রমাণ হয় যে, বিশ্বমানের প্রকৌশল প্রযুক্তি উদ্ভাবনে প্রতিযোগিতা করার সক্ষমতা তাদের আছে। টানেল খনন প্রযুক্তি ভবিষ্যতে অবকাঠামো উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে, বিশেষ করে নগর পরিবহন ও জ্বালানি ব্যবস্থার ক্ষেত্রে।
“এই সাফল্যের আরেকটি বিশেষ দিক হলো, আইইউবির বিজনেস স্কুলের দুজন শিক্ষার্থী এই দলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বড় উদ্ভাবন শুধু প্রকৌশল দক্ষতার ওপর নির্ভর করে না; ব্যবসায়িক বিশ্লেষণ ও বহুমুখী জ্ঞানও সমান গুরুত্বপূর্ণ। তাদের এই বৈশ্বিক যাত্রায় পাশে থাকতে পেরে আইইউবি গর্বিত।”
এবারের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য ‘বোর্ড টানেলার্স’ দলটি ১৮-২২ মার্চ টেক্সাসে অবস্থান করবে এবং ২৩ মার্চ তাদের যন্ত্রটি বিমানযোগে সেখানে পৌঁছাবে।
২৪-২৬ মার্চ যন্ত্রটির পরীক্ষা ও মূল্যায়ন চলবে। মূল প্রতিযোগিতা চলবে ২৭-২৯ মার্চ, যেখানে নিজেদের তৈরি এমটিবিএম ব্যবহার করে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর টানেল খননের দক্ষতা মূল্যায়ন করা হবে।
প্রতিযোগিতা শেষে ৩০ মার্চ ক্লিনআপ ও ১ এপ্রিল চূড়ান্ত প্যাকিং সম্পন্ন হবে।