সমাবর্তনে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট ও গ্রাজুয়েট প্রোগ্রামের ২৮৮৫ জন শিক্ষার্থীকে সনদ দেওয়া হয়।
Published : 16 Apr 2025, 06:08 PM
তরুণ শক্তির নেতৃত্বে দেশের মানুষ ‘অধিকার বিবর্জিত প্রজা’ থেকে নতুন করে ‘অধিকার সমৃদ্ধ নাগরিক’ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষা উপদেষ্টা চৌধুরী রফিকুল আবরার।
বুধবার জধানীর আফতাব নগরে বেসরকারি ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির ২৪তম সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতির প্রতিনিধি ও প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নিয়ে তিনি বলেছেন, “বাংলাদেশের ইতিহাসে আমরা যুগসন্ধিক্ষণে উপনীত হয়েছি। জাতি হিসেবে আমরা অধিকার বিবর্জিত প্রজা থেকে আবার নতুন করে অধিকার সমৃদ্ধ নাগরিক হয়েছি।
“এ নতুন ইতিহাস রচিত হয়েছে তরুণ শক্তির বলিষ্ঠ নেতৃত্বে। তেমনই এক তরুণ প্রাণসমৃদ্ধ প্রাজ্ঞণে এসে আজ আমি গৌরবান্বিত।”
সমাবর্তনে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট ও গ্রাজুয়েট প্রোগ্রামের ২৮৮৫ জন শিক্ষার্থীকে সনদ দেওয়া হয়। এছাড়া অনন্য মেধাবী ছয়জন শিক্ষার্থীকে দেওয়া হয় স্বর্ণ পদক।
নবীন গ্র্যাজুয়েটদের অভিনন্দন জানিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, “তোমরা সকল বাধাবিঘ্ন পেরিয়ে তোমাদের শিক্ষা গ্রহণের স্বীকৃতিসরূপ স্নাতক সনদ অর্জন করেছ। তোমাদের জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় শেষ করে নতুন আরেক অধ্যায়ে তোমরা প্রবেশ করছ।
“তা এমন সময়ে করছ যখন একদিকে প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতা পুরো পৃথিবীকে প্রতিনিয়ত দ্রুতগতিতে বদলে দিয়ে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত করছে। আর অন্যদিকে বিশ্ব জুড়ে অসহিষ্ণুতা, কুপকমন্ডুকতা, উগ্রজাতীয়তাবাদ সভ্যতার বড় বড় অর্জনগুলোর চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। একদিকে তাই অপার সম্ভাবনার হাতছানি, অন্যদিকে বড় ধরনের অস্থিরতার শঙ্কা।”
শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, “এই বাস্তবতায় তোমরা যেমন অমিত সম্ভাবনার বাংলাদেশকে তোমাদের জ্ঞান, বুদ্ধি, মেধা, দক্ষতা ও শ্রম দিয়ে গড়ে তুলবে; অন্যদিকে বিশ্ব নাগরিক হিসাবে শান্তি, সহিষ্ণুতা, সমতা এবং ন্যায়ভিত্তিক পৃথিবী গড়ে তুলতেও ভূমিকা রাখবে বলে আমি আশা করি।”
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন জায়গাটা সব সময় বলা হতো একটা খবরদারির জায়গা। আমরা অবশ্যই সেখান থেকে সরে এসছি।
“আমরা কোঅপারেশনের জায়গায় অবস্থান করছি। এ কোঅপারেশন হবে টিম ওয়ার্কের মধ্যে দিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, পাবলিক-প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় এ টিমওয়ার্ক হবে।”
সমাবর্তন বক্তা এপেক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুজুর শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, “আজ থেকে ২৫ বা ৩০ বছরের পরের বাংলাদেশ কেমন হবে তা নির্ভর করছে তোমাদের ওপর। জুলাই অভ্যুত্থানে তোমরা যে বৈষম্যহীন দেশের কথা বলেছ, সেই কমিটমেন্ট ধরে রেখে একটি সাম্য ও ন্যভিত্তিক সমাজ গড়ার নেতৃত্ব দেবে।”
গ্রাজুয়েটদের তিনি চাকরি খোঁজার বদলে উদ্যোক্তা হওবার আহ্বান জানান।
চীনের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, “বড় প্রতিষ্ঠান করতে হবে এমন নয়, ছোট ছোট প্রতিষ্ঠান গড়েও দেশের জিডিপিতে বড় অবদান রাখা যায়।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বাংলাদেশে উচ্চামানের শিক্ষা কমিশন গঠনের দাবি জানান। পাশাপাশি একটি আধুনিক, বিজ্ঞানমনস্ক এবং উদ্ভাবনী শিক্ষানীতি প্রণয়নের দাবি শিক্ষা উপদেষ্টার কাছে তুলে ধরেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শামস রহমান বলেন, “আমাদের জনশক্তিকে সম্পদে রূপান্তর করতে হলে আমাদের প্রযুক্তিগত এবং ভাষাগত দক্ষতা বাড়াতে হবে। শিক্ষার্থীদের প্রচলিত কাঠামোর বাইরে গিয়ে নিজেদের সৃজনশীলতা দিয়ে নতুন কিছু করতে হবে।”
সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য, উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারপার্সন, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী, গ্রাজুয়েট ও তাদের অভিভাবকরা অংশ নেন।