ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বরে বার্ষিক মিলনমেলায় জড়ো হয়েছিলেন ইংরেজি বিভাগের প্রাক্তনীরা।
Published : 25 Jan 2025, 10:42 PM
আবারও ফিরে এল বন্ধুদের সঙ্গে সাক্ষাৎ, আড্ডা, রসিকতা আর গল্পে গল্পে সময় কাটানোর এক বিকাল-সন্ধ্যা; স্মৃতিভ্রমণের এ মিলনমেলায় দেখা হল পুরনো সহপাঠী আর বিভাগের ছোট-বড়দের সঙ্গে, আনন্দ হল মন ভরে।
আড্ডার ফাঁকে ফাঁকে একে অপরের সঙ্গে ক্যামেরাবন্দি হলেন, স্মৃতির ঝাঁপি খুলে দিয়ে ফিরে গেলেন পুরনো দিনে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সঙ্গী, সাথীদের কাছে পেয়ে ইংরেজি বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থীদের কাছে শনিবারের শীতের বিকাল উষ্ণ হয়ে উঠল আন্তরিকতায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক মিলনায়তনে (টিএসসি) তারা জড়ো হয়েছিলেন ইংলিশ ডিপার্টমেন্ট অ্যালামনাই সোসাইটির (ইডাস) এ পুনর্মিলনী আয়োজনে।
বিভাগের প্রাক্তনীরা আসতে শুরু করেন বিকাল ৩টা থেকেই। সময় যত গড়িয়েছে উপস্থিতি বেড়েছে। সন্ধ্যা পেরিয়ে টিএসসির সবুজ চত্বর আর মিলনায়তনের সামনের বারান্দায় তারা আড্ডায় মেতেছিলেনর রাত পর্যন্ত।
'ইডাস ব্যাশ-২০২৪' এর এ আয়োজনে আসা প্রাক্তনীরা টিএসসির মূল ফটক দিয়ে ঢুকতেই রেজিস্ট্রেশন কার্ড সংগ্রহ করে মিলনায়তনের কক্ষের সামনে আসতেই পেয়েছেন উষ্ণ অভ্যর্থনা; আয়োজনের স্মারক হিসেবে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে উপহারসামগ্রী। একটি ফর্ম পূরণের মাধ্যমে নিজেদের উপস্থিতির তথ্যও রেখেছেন তারা।
একই স্থানে মিলছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত পুস্তকাদি ও ম্যাগাজিন।
এর কিছুটা সামনে এসে ক্যাফেটেরিয়া ঘেঁষে সারি সারি টেবিলে ছিল নানারকম মুখরোচক দেশি ও বিদেশি খাবারের আয়োজন।
আগত অতিথিদের চিতই পিঠা, রেশমি জিলাপি, পাটিসাপটা পিঠা, সিঙ্গারা, স্যান্ডউইচ, ফুচকা, চটপটি ও ভাপা পিঠার স্বাদ নিতে দেখা গেছে। কেউ কেউ আবার কফির কাপে চুমুক দিয়ে পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় মেতেছেন।
বরাবরের মতই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির সবুজ প্রাঙ্গণে বর্ণিল এ আয়োজনে এসে ক্যাম্পাস জীবনের সবুজ দিনগুলোতে ফিরে গেলেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সাব্কে শিক্ষার্থীরা।
ইডাসের এ আয়োজনে এসে পুরনো বন্ধুদের খুঁজছিলেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সাবেক এই শিক্ষার্থী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "প্রতিবছরের মত এবারও আমাদের অনুষ্ঠানটি খুব সুন্দর হয়েছে। টিএসসিকে মিস করি। এসব অনুষ্ঠানে এলে পুরনো জায়গায় পুরনো বন্ধুদের পাওয়া যায়।"
পুনর্মিলনী আয়োজনে এসেছিলেন ইডাসের সাবেক সভাপতি সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী।
এসেছিলেন তথ্য সচিব মাহবুবা ফারজানাসহ আরও অনেক প্রাক্তনী।
তাদের মত সবাই বিভাগের নিয়মিত এ আয়োজনে উপস্থিত হয়ে বন্ধুদের সঙ্গে যেমন উচ্ছ্বল সময় কাটিয়েছেন; জ্যেষ্ঠ ও কণিষ্ঠদের সঙ্গে গল্পে মেতেছেন।
প্রাক্তনীদের সঙ্গে দেখা হতেই কুশল বিনিময় করেছেন, খোঁজ নিয়েছেন একে অপরের।
কেউ কেউ পুরোনো দিনের স্মৃতি ফিরিয়ে এনে মাতেন রসিকতায়। প্রিয় মুখের সঙ্গে নতুন করে স্মৃতি ধারণ করেন মোবাইল ফোনে, ক্যামেরায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক নেভিন ফরিদা তুলে ধরলেন মিশ্র অনুভূতি।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটসহ নানা চড়াই-উৎরাইয়ের মাঝে এ আয়োজন করা নিয়ে চিন্তিত ছিলাম। তবে আলহামদুলিল্লাহ আয়োজনটি ঠিকঠাক হয়েছে। তবে সবসময়ের তুলনায় এবার যে ভালো হয়েছে সেটা বলা যায় না।
“তবে সকলেই এ অনুষ্ঠানে এসে আনন্দ করছে। এটা দেখে খুবই ভালো লাগছে। এ ক্ষেত্রে বলা যায় আয়োজনটি সফল।"
বিভাগের এমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ও সাবেক অধ্যাপক নিয়াজ জামান এবারে আসতে পারেননি।
বিভাগের বয়োজ্যেষ্ঠ বেশ কয়েকজন অধ্যাপকের এ আয়োজনে আসতে না পারা নিয়ে আক্ষেপ করে নেভিন ফরিদা বলেন, "এবছর এমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীসহ অনেকেই আসতে পারছেন না। অনেকেই অসুস্থ অবস্থায় আছেন।"
ইংরেজি বিভাগের বর্তমান চেয়ারপারসন জেরিন আলম এ আয়োজনের বিষয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, "আজকের এই আয়োজনে আমরা তিনজন শিক্ষককে সম্মাননা জানাতে পেরে খুবই আনন্দিত। সবকিছু খুব সুন্দরভাবে আয়োজন করা হয়েছে বলে আমরা সবাই সন্তুষ্ট।"
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের বিষয়ে তিনি বলেন, "আমাদের সবকিছুই নিজেদের। এ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যারা পরিবেশন করছেন তারা সকলেই আমাদের অ্যালামনাইয়ের সদস্য। সকল ক্ষেত্রেই আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ।"
সম্মাননা প্রদান
ইডাসের এ আয়োজনে এবার বিশেষ সম্মাননা দেওয়া হয় তিনজন অধ্যাপককে।
এমেরিটাস অধ্যাপক হওয়ায় সম্মাননা দেওয়া হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে বিশেষ অবদানের জন্য সম্মাননা গ্রহণ করেন অধ্যাপক মো. শওকত হোসাইন ও অধ্যাপক মোঃ সদরুল আমিন।
সম্মাননা পাওয়ার পর অনুভূতি তুলে ধরে অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল বলেন, "এমেরিটাস অধ্যাপক এখন আর সারাজীবন থাকে না। আমার এমেরিটাস অধ্যাপক পদটি ২০৩৬ সাল পর্যন্ত থাকবে। তবে আমি মারা গেলে আগেই শেষ হয়ে যাবে।
“কিন্তু ইংরেজি বিভাগের পরিবারে একইসাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার নামটি সারাজীবনই থেকে যাবে।"
অধ্যাপক সদরুল আমিন সম্মাননা পেয়ে বেশ আনন্দিত। তবে প্রতিবছরের তুলনায় এবার অনুষ্ঠানে উপস্থিতি কম থাকায় কিছুটা আক্ষেপ প্রকাশ করেন তিনি।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, "আমি আজকের অনুষ্ঠানে খুবই আনন্দিত। তবে এবার লোকজন একটু কম মনে হচ্ছে। প্রতিবছরই অনেক কিছু বদলে যায়।"
নতুন কমিটি ঘোষণা
সংগঠনের নতুন কমিটি ঘোষণা করেন এমেরিটাস অধ্যাপক ফখরুল আলম। এবার সভাপতি হিসেবে সাবেক সচিব ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মোহাম্মদ ইসমাইল জাবিউল্লাহ এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক তাহমিনা আহমেদের নেতৃত্বে আসার ঘোষণা দেন।
অধ্যাপক তাহমিনা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "আজকের অনুষ্ঠানে আমরা বেশ ভালো আয়োজন লক্ষ করেছি। সবাইকে আনন্দ করতে দেখে ভাল লাগছে। আমাদের ইডাস আরো এগিয়ে যাক।"
সদ্য সাবেকদের উচ্ছ্বাস
প্রবীণদের বক্তব্য শেষে সংগীত অনুষ্ঠান ও অন্যান্য সংস্কৃতিক আয়োজনের মাধ্যমে সমাপ্তি ঘটে ইডাসের এ আয়োজনের।
প্রবীণদের পাশাপাশি নবীন গ্রাজুয়েটরাও এ আয়োজনে উৎফুল্ল ছিলেন। এ অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করেছেন ইংরেজি বিভাগের ২০১৭-২০১৮ শিক্ষাবর্ষের সদ্য সাবেক শিক্ষার্থী রাফায়েত জিসান মজুমদার।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, "প্রতিবছরই আমাদের এই আয়োজনে অনেক বেশি মজা হয়। অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ আসেন। আমি বেশ কিছু বছর ধরে এই অনুষ্ঠানে গাইছি। আজকেও বেশ মজা করেছি।"
একই ব্যাচের মোহাইমিনুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "আমাদের অনেক অনেক সিনিয়ররা এ অনুষ্ঠানে এসেছেন। আমরা সর্ব কনিষ্ঠ অ্য্যালামনাই। এ আয়োজন আমাদের জন্য নতুন অভিজ্ঞতা। অনেক অনেক উপভোগ করেছি।"
সাউথ ইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক ফাইরুজ ফারিহাও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সদ্য সাবেক শিক্ষার্থী।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, "এত দিন পর টিএসসির মত স্থানে এসে সবার সাথে দেখা হল। বেশ ভাল লেগেছে।"