গতবছর এইচএসসি শেষ করা তাসনুভা আক্তার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চান ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগে। কিন্তু মহামারীর মধ্যে এবার গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষায় এ বিষয়ের জন্য প্রস্তুতি কীভাবে নেবেন তা তিনি বুঝতে পারছেন না।
Published : 03 Oct 2021, 11:20 AM
স্নাতক পর্যায়ে ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিষয়টি পড়ানো হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যাল ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আগের মতই নিজস্ব নিয়মে আলাদা পরীক্ষা নেবে। তবে জগন্নাথ ও কবি নজরুল ভর্তি পরীক্ষা হবে আরও ১৮টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে গুচ্ছ পদ্ধতিতে।
গুচ্ছভুক্ত এই ২০ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য মানবিক, বাণিজ্য ও বিজ্ঞান- তিনটি গুচ্ছে ১০০ নম্বরের ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হবে এমসিকিউ পদ্ধতিতে। সেই ফলাফলের ভিত্তিতে মেধাতালিকা প্রকাশ করার পর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজস্ব শর্ত অনুযায়ী শিক্ষার্থী ভর্তি করবে।
ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন, নাট্যকলা, চারুকলা ও সংগীত বিভাগে শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় বরাবরই আলাদাভাবে লিখিত, ব্যবহারিক ও মৌখিক পরীক্ষা নিত। বাড়তি যোগ্যতা চাওয়া হত বলে আলাদাভাবে বিজ্ঞপ্তিও দেওয়া হত। গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এসব বিভাগে এবার কীভাবে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে তা বুঝতে পারছেন না শিক্ষার্থীদের অনেকে।
তাসনুভা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পরীক্ষা তো শুরু হবে ১৭ অক্টোবর থেকে, সময় প্রায় চলে এসেছে। সিনিয়রদের কাছে শুনেছি আগে পরীক্ষা হত একভাবে। এবার কীভাবে পরীক্ষা নেবে সে বিষয়ে কোনো দিক- নির্দেশনা তো পেলাম না। বিষয়গুলো স্পষ্ট করা উচিৎ।”
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের বিশেষ বিভাগগুলোর ভর্তি পরীক্ষা কোনো ইউনিটের অধীনে এমসিকিউ পদ্ধতিতে নেওয়া হলেও পরে বিভাগগুলো আলাদাভাবে মূল্যায়ন করে শিক্ষার্থী নির্বাচন করত।
এবারও আলাদাভাবে মূল্যায়নের দাবি জানিয়ে তাসনুভা বলেন, “গুচ্ছের মেধাতালিকা থেকেই যদি এই ডিপার্টমেন্টগুলোতে ভর্তি করানো হয়, তাহলে এমনও হতে পারে অনেক যোগ্য শিক্ষার্থী সেখানে পড়ার সুযোগ পাবে না।”
নরসিংদী সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করা নাঈম হাসানও স্নাতক পর্যায়ে কোনো ‘সৃজনশীল’ বিষয়ে পড়তে চান।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “গান, আঁকা- এসবের প্রতি আমার আকর্ষণ অনেক দিনের। পড়তেও চাই এসব নিয়েই। কিন্তু এই বিভাগগুলোতে কীভাবে পরীক্ষা নেওয়া হবে, সে বিষয়ে এখনো কিছু জানতে পারলাম না। প্রস্তুতিরও একটা ব্যপার আছে।”
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগ কী ভাবছে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান জুনায়েদ হালিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা আমাদের পুরোনো প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে চাই। গুচ্ছ পদ্ধতিতে যারা আমাদের বিভাগ পছন্দ করবে, আমরা তাদের মধ্য থেকে লিখিত পরীক্ষা ও ভাইভা নিয়ে চূড়ান্ত করতে চাই।”
একই কথা বলেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. কামালউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেছেন, গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষার পর বিভাগগুলোতে ভর্তি হতে আগ্রহীদের জন্য আলাদা বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে। গুচ্ছ পদ্ধতির মেধা তালিকায় থাকা শিক্ষার্থীরাই তাতে সুযোগ পাবে।
“মেধা তালিকার শিক্ষার্থীদের আগের শিক্ষাবর্ষের মতোই পরীক্ষা নিয়ে চূড়ান্ত করব। এ বিভাগগুলোতে মানবিকের শিক্ষার্থীদের সুযোগ বেশি থাকবে। তবে বাকিদেরও সুযোগ দেওয়া হবে।”
যেসব শিক্ষার্থী গুচ্ছ পদ্ধতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদন করার সুযোগ পায়নি, তারা এ বিভাগগুলোতে আবেদনের সুযোগ পাবে না বলে জানান তিনি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এবার বিশেষ বিভাগগুলোর প্রাথমিক মেধাতালিকা ‘বি’ ইউনিট থেকে চূড়ান্ত করা হবে জানিয়ে উপাচার্য অধ্যাপক এ এইচ এম মুস্তাফিজুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পরে বিশেষ বিভাগগুলোতে ভর্তি করার জন্য তাদের আলাদা একটি পরীক্ষা নেওয়া হবে। পরীক্ষার পদ্ধতি এখনো ঠিক করিনি। আগে বড় পরীক্ষাটা হয়ে যাক।”
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এ বিভাগগুলোতে ভর্তির বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেনি জানিয়ে উপাচার্য অধ্যাপক মাহমুদ হোসাইন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটমককে বলেন, “গুচ্ছ পরীক্ষার পরে আমরা কিছু শর্ত দেব। এটা নিয়ে আমাদের কথা হচ্ছে। গুচ্ছ পরীক্ষার পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
তবে গুচ্ছের মেধাতালিকা থেকেই বিশেষ বিভাগগুলোর জন্য শিক্ষার্থী নির্বাচন করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া গুচ্ছভুক্ত ২০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা শিক্ষার্থীদের শারীরিক উপস্থিতিতে ১৭ অক্টোবর থেকে নেওয়া হবে।
সূচি অনুযায়ী ১৭ অক্টোবর বিজ্ঞান বিভাগ, ২৪ অক্টোবর মানবিক বিভাগ এবং ১ নভেম্বর বাণিজ্য বিভাগের ভর্তি পরীক্ষা হবে।
গুচ্ছভুক্ত এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে মোট ৩ লাখ ৬১ হাজার ৪০৬ জন শিক্ষার্থী প্রাথমিকভাবে আবেদন করে।
এর মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগে ১ লাখ ৯৪ হাজার ৮৪১, মানবিক বিভাগে ১ লাখ ৭ হাজার ৯৩৩ এবং বাণিজ্য বিভাগে ৫৮ হাজার ৬৩২ জন শিক্ষার্থী আবেদন করেছেন।