শহীদ মিনার সংলগ্ন সড়কের পাশাপাশি টিএসসি চত্বরেও আলপনা আঁকা হচ্ছে।
Published : 20 Feb 2025, 07:55 PM
একুশে ফেব্রুয়ারিতে এবার ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানানোর আয়োজনে থাকছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ছাপ; সে অনুযায়ীই চলছে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ঘিরে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।
মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রথম প্রহর থেকেই শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার ফুলে ভরে উঠবে স্মৃতির মিনার।
প্রতিবছর শহীদ মিনার এলাকার দেয়ালে বিভিন্ন স্লোগান, কবিতা ও গানের লাইন লেখা হলেও এবার কিছুটা ভিন্নতা দেখা গেছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে শহীদ মিনারে গিয়ে দেখা যায়, আশপাশের অনেক দেয়ালে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের গ্রাফিতিগুলোই রয়েছে। এসব দেয়ালে নতুন কোনো গ্রাফিতি কিংবা স্লোগান চোখে পড়েনি।
তবে কোনো কোনো দেয়ালের উপরে ব্যানার বসানো হয়েছে, যেগুলোয় বিভিন্ন গান ও কবিতার লাইন কিংবা নানা স্লোগানে একুশে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) সায়মা হক বিদিশা বলেন, “জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় দেয়ালে যেসব গ্রাফিতি আঁকা হয়েছে, সেগুলো আমরা সংরক্ষণ করেছি।"
প্রতিবারের মত এবারও শহীদ মিনার এলাকায় সাজ-সজ্জার দেখভাল করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীরা। পিচঢালা সড়ককে ক্যানভাস বানিয়ে রংতুলির আঁচড়ে আলপনায় সাজিয়ে তুলছেন তারা।
শহীদ মিনারে আলপনা আঁকার কাজ সাড়া হয়েছে আগেই। এখন শহীদ মিনারের মূল বেদির সিঁড়িগুলো লাল রঙে রঞ্জিত করা হচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কারুশিল্প বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তূর্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "আমরা প্রতিবছর আলপনা আঁকার কাজটি পাই; এতে আমরা গর্বিত। এ বছর রং করার কোনো কাজ হয়নি; সবই আলপনা।"
আরেক শিক্ষার্থী সুপ্তি বলেন, "রাত ৮টা পর্যন্ত আমাদের কাজ চলবে। শহীদ মিনার সংলগ্ন সড়কের পাশাপাশি টিএসসি চত্বরেও আলপনা আঁকা হবে।"
আরেক শিক্ষার্থী সৌরভ সরকার বলেন, "এই দিনটি বাঙালি জাতির সবচেয়ে বড় অর্জন। রক্তের বিনিময়ে আমরা কথা বলার স্বাধীনতা অর্জন করেছি।
“এই ভাষা আমরা রং তুলির মাধ্যমে আজীবন তুলে ধরব। যেখানেই থাকি, দিনটি এলে ছুটে আাসি এই প্রাঙ্গণে রক্তের আলপনা আঁকতে।"
উপ-উপাচার্য বিদিশা বলেন, "একুশে পালনের প্রস্তুতি মোটামুটি শেষ দিকে। আমাদের ১২টি কমিটি কাজ করছে।
"শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে আহতদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রেখেছি।“
নিরাপত্তার আয়োজন
একুশে ফেব্রুয়ারি ঘিরে শহীদ মিনার ও আশপাশের এলাকা সিসিটিভির আওতায় আনা হয়েছে। পাশেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ছাদে তৈরি করা হয়েছে ঘোষণা মঞ্চ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদ প্রাঙ্গণে পুলিশ ও র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ কক্ষ রয়েছে; আছে ফায়ার সার্ভিস ও প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্রও।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের এ অনুষ্ঠান ঘিরে নিরাপত্তা নিয়ে কোনো ঝুঁকি দেখছেন না ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী।
বৃহস্পতিবার সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকার নিরাপত্তা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "কয়েক স্তরের নিরাপত্তা থাকবে। এখন পর্যন্ত আমরা নিরাপত্তা নিয়ে কোনো আশঙ্কা দেখিনি।
“প্রতিবারের মত এবারও শহীদ মিনারে প্রথমে ভিভিআইপি, তারপর ভিআইপি এবং সবশেষে জনসাধারণ শ্রদ্ধা জানাবেন।”
তিনি বলেন, "আনুমানিক রাত ১২টা ৪০ মিনিটে পলাশীর পাশ থেকে অর্থাৎ পশ্চিম পাশ থেকে বেদিতে প্রবেশের সড়ক খুলে দেওয়া হবে।
"কোনো রকমের দাহ্য পদার্থ বা বিস্ফোরক নিয়ে যেন কেউ প্রবেশ করতে না পারেন, সেজন্য আমাদের ব্যাপক ব্যবস্থা আছে।"
জামিনে ছাড়া পাওয়া সন্ত্রাসীদের নিয়ে কোনো ঝুঁকি রয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, "যেসব সন্ত্রাসী জামিনে আছেন, তাদেরকে আমরা নজরে রেখেছি।”
পথনির্দেশ
বৃহস্পতিবার দুপুরে শহীদ মিনার এলাকা পরিদর্শন শেষে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মো. সরওয়ার বলেন, "এক কিলোমিটারের ভেতরে কোনো গাড়ি প্রবেশ করতে পারবে না।
“আমরা সাতটি স্থানে ব্যারিকেড বসিয়ে এটা নিশ্চিত করব। এগুলো শাহবাগ, নীলক্ষেত, শহিদুল্লাহ হল এলাকা, হাই কোর্ট এলাকা, পলাশী, চানখারপুল ও বখশীবাজার।”
তিনি বলেন, “শহীদ মিনারে আসতে হলে পলাশী ও স্বাধীনতাচত্বর হয়ে জগন্নাথ হল অতিক্রম করে আসতে হবে। বেরিয়ে যেতে হবে দোয়েল চত্বর হয়ে।”
তিনি বলেন, "অন্যান্যবার গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয় মূলত সন্ধ্যা ৬টায়। কিন্তু আমরা ঢাকা শহরের কথা ভেবে এবার গাড়ি চলাচল বন্ধ করব রাত ৯ টায়।"
এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, "২০ ফেব্রুয়ারি রাত ৮টার পর থেকে ক্যাম্পাসে প্রবেশে কড়াকড়ি থাকবে।"
এজন্য ক্যাম্পাসের সবাইকে রাত ৮টার মধ্যে আবাসস্থলে ফেরার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শহীদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণের পর সেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠের সামনের সড়ক দিয়ে দোয়েল চত্বর ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রাস্তা দিয়ে চাঁনখার পুল হয়ে বের হওয়া যাবে। এই পথে শহীদ মিনারের দিকে আসা যাবে না।