“ক্যাম্পাস যেন কেমন হইয়া গেছে। পুরানা মানুষ তেমন আর আসে না; কম্বল দিবে কে এখন”, বলেন চা-বিক্রেতা স্বপন।
Published : 05 Jan 2025, 01:33 AM
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পাশে ফুটপাতে একটি ব্যানার বিছিয়ে পরনের সব জামাকাপড় পেঁচিয়ে জড়সড় হয়ে শুয়ে ছিলেন পানি বিক্রেতা আব্দুর রহমান।
কাছে গিয়ে ডাক দিতেই কিছুটা আশা নিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, “কম্বল-টম্বল দেবেন না কি বাবা?”
শনিবার রাতে আব্দুর রহমানের মত গৃহহীন কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, তাদের বেশির ভাগই এবারের মৌসুমে কোনো শীতবস্ত্র কিংবা সহায়তা পাননি।
আব্দুর রহমানের বাড়ি নোয়াখালী জেলায়। জীবিকার তাগিদেই ঢাকায় আসা তার।
শীতে কাঁপতে কাঁপতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “তিন দিন ধরে শীতের কারণে ঘুমাতে কষ্ট হচ্ছে।
“আর শীতের মধ্যে পানির বোতল বিক্রি খুব একটা নেই। ফলে আয়-উপার্জনও একেবারে কম।"
একই ফুটপাতে কয়েক হাত দূরে একই রকমের আরও কয়েকটি বিছানা। এর মধ্যে ষাটোর্ধ্ব এক নারী প্লাস্টিকের বস্তা বিছিয়ে শুয়ে আছেন পুরনো একটি কম্বল গায়ে দিয়ে।
কাছে যেতেই তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "আমি কিডনি রোগী। এই শীতে আমারে একটা পুরানা কম্বল একজনে দিছে।
“এর বাইরে এবার কেউ কিছু দেয় নাই। দিলে ওইটা বিক্রি কইরা ওষুধ কি না খাইতাম।"
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থেকে আসা এই নারী বলেন, "এক সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে কাজ করতাম। এখন যখন যেটা পারি করি। অসুস্থ হয়ে গেলে কোনো কাজ করতে পারি না, তখন খাইতেও পাই না।"
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেট্রো রেলস্টেশনের নিচে গিয়ে দেখা গেল, মাঝবয়সী কয়েকজন বসে আছেন প্লাস্টিকের বস্তা পেতে।
তাদের মধ্যে কামাল উদ্দিন নামের একজন বললেন, "আমরা ক্যাম্পাস এলাকায় এবং উদ্যানে বোতল সংগ্রহ করি। এগুলো বেঁচেই খাই। অন্যান্য বছর কম্বল পেতাম বেশ কয়েকটা। এবার গায়ে দেওয়ার কম্বলই নাই।”
প্রায় ৪৪ বছর ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় চা বিক্রি করেন স্বপন। সবার কাছে তিনি ‘স্বপন মামা' নামেই পরিচিত।
ক্যাম্পাসে গৃহহীন শীতার্ত মানুষের বর্তমান অবস্থা জানতে চাইলে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "ক্যাম্পাস যেন কেমন হইয়া গেছে। পুরানা মানুষ তেমন আর আসে না; কম্বল দিবে কে এখন?
"তবে এখনো কয়েকজন দেয়। আমারেও ওই দিন একজন দিয়া গেছে। তবে অন্য মানুষজনরে খুব কমই দিতে দেখছি।"
এবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে কম্বল বিতরণ করে 'ব্ল্যাংকেট ফর কেয়ার' নামের একটি প্ল্যাটফর্ম।
এ প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে আছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল কাদের, আবু বকর মজুমদার, হাসিব আল ইসলাম ও মহিউদ্দিন মোহাম্মদ।
মহিউদ্দিন বলেন, "আমাদের প্ল্যাটফর্মের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রথম দফায় এক হাজার কম্বল উপহার দেওয়া হয়েছে। পরের দফায় আরো ১ হাজার দেওয়া হবে।
“তবে ছিন্নমূল কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো কর্মচারীর কম্বলের প্রয়োজন হলে সেটা আমি ব্যক্তিগতভাবে দেব।"
এদিকে রাজধানীর ছিন্নমূল ও গৃহহীনদের কিছুটা স্বস্তি দেয় শনিবারের সূর্য। বাতাসের গতিও এদিন আগের দিনের চেয়ে কম থাকায় শীতের তীব্রতা খানিকটা কম ছিল।
শনিবার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় আকাশ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা এবং সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। কিছু এলাকায় মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে।
জানুয়ারি মাসের আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়ছে, চলতি মাসে দেশে এক থেকে দুটি মাঝারি থেকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।
চলতি সপ্তাহের শেষদিকে কুয়াশা কেটে শৈত্যপ্রবাহ দাপট দেখাতে পারে বলে এর আগে জানিয়েছিলেন আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ।
তিনি বলেন, “দুই-তিনদিন পর কুয়াশা কেটে গেলে রাতের তাপমাত্রা ক্রমশ কমে শৈত্যপ্রবাহ আসতে পারে। জানুয়ারির ৬ থেকে ৭ তারিখের পর রাতের তাপমাত্রা কমে ১০ ডিগ্রির নিচে নেমে আসতে পারে।“
চলতি মাসে আরও শীত পড়ার ভয়ে আছেন রাজধানীর অনেক দিনমজুরও। কুষ্টিয়া থেকে ঢাকায় রিকশা চালাতে আসা বিশ্বজিৎ কর্মকার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এক মাঘে তো শীত যায় না।
“সামনের দিনগুলায় আরও কষ্ট আছে। রোজগার করতে চাইলে তো শীতেও রিকশা নিয়ে সড়কে নামতে হবে।”