২০১৯ সালের অক্টোবরে আবরার ফাহাদ হত্যার পর শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করে কর্তৃপক্ষ।
Published : 08 Aug 2023, 06:19 PM
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে আবারও শপথ পাঠ করেছেন শিক্ষার্থীরা; সম্মিলিতভাবে তারা সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তির উত্থানকে রুখে দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন।
মঙ্গলবার দুপুরে বুয়েটের ক্যাফেটেরিয়ার সামনে শত শত শিক্ষার্থী জড়ো হয়ে সম্মিলিত কণ্ঠে এ শপথ পাঠ করেন।
শপথ পাঠ শেষে শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলনে আসেন। তিনজন শিক্ষার্থী ধাপে ধাপে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। তবে কেউই তাদের নাম প্রকাশ করেননি।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা সম্প্রতি সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর থেকে গ্রেপ্তারের পর জামিনে ছাড়া পাওয়া বুয়েট শিক্ষার্থীদের কেউ ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকলে বা তাদের কেউ ‘নাশকতার পরিকল্পনাকারী’ প্রমাণিত হলে তাদের শাস্তি দাবি করেন।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, গত ৩০ জুলাই ২৪ জন বর্তমান শিক্ষার্থীসহ ৩৪ জন টাঙ্গুয়ার হাওড়ে ‘নাশকতার পরিকল্পনাকারী’ সন্দেহে আটক হয়। পরে তারা জামিন পান।
“এ বিষয়ে আমরা রাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থার উপর আস্থা রেখে একটি সুষ্ঠু ও দ্রুত বিচার আশা করছি। যদি তারা প্রত্যেকেই দোষী প্রমাণিত হয়, সাধারণ শিক্ষার্থীরা অবশ্যই তাদের বিপক্ষে থাকবে। একইভাবে যদি তাদের মধ্যে কেউ নির্দোষ প্রমাণিত হয়; তবে নির্দোষরা যেন আর কোনভাবে কোনো হয়রানির শিকার না হয়, সে ব্যাপারে আমরা সচেষ্ট থাকব এবং বুয়েট প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করব।”
২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর বুয়েটের শেরে বাংলা হলে তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করে বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী। ওই ঘটনার পর শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের কারণে প্রায় তিন মাস অচল ছিল বুয়েট।
বুয়েটে ছাত্রলীগের ব্যানারে কর্মসূচি সাবেকদের, শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
ছাত্ররাজনীতি সচল করে বুয়েটকে জঙ্গিমুক্ত করুন: ছাত্রলীগ সভাপতি
পরে শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে ক্যাম্পাসে সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করতে বাধ্য হয় বুয়েট কর্তৃপক্ষ। সেই থেকে ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রয়েছে।
প্রায় তিন বছর পর ২০২২ সালের অগাস্টে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে সন্ধ্যায় বুয়েটের সেমিনার মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, বুয়েট এর সাবেক নেতৃবৃন্দ’ ব্যানারে আলোচনা ও দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সংগঠনটির সাবেক নেতারা। সেদিন এ নিয়ে বুয়েটের কয়েকশ শিক্ষার্থী মিলনায়তনের সামনে জড়ো হয়ে এ কর্মসূচির প্রতিবাদ জানান। তারা সেখানে অবস্থান নেন। পরে তড়িঘড়ি করে ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা কর্মসূচি শেষ করে বের হন।
মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা আবরার ফাহাদের হত্যাকাণ্ডের পর বুয়েট কর্তৃপক্ষের বহিষ্কার করা ২৬ শিক্ষার্থীর একজন আশিকুল ইসলাম বিটুর সম্প্রতি ক্লাসে যোগ দেওয়া নিয়ে প্রতিবাদ করেন।
তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “এরকম কুখ্যাত একজন ব্যক্তির সাথে ক্লাস এবং ক্যাম্পাস শেয়ার করতে আমরা কোনভাবেই রাজি নই এবং কর্তৃপক্ষকে আজকে এ বিষয়ে অবগত করা হয়েছে। দ্রুত পদক্ষেপ না আসলে আমরা একাডেমিক কার্যক্রম এ অংশগ্রহণ না করার মত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে দ্বিধা করব না।“
২০১৯ সালে আন্দোলনের মুখে ফুটেজ দেখে ১ ডিসেম্বর তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বুয়েটের বোর্ড অব রেসিডেন্স অ্যান্ড ডিসিপ্লিন ২৬ শিক্ষার্থীকে আজীবন বহিষ্কার করে। তালিকার ১৭ নম্বরে ছিলেন কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৬ ব্যাচের আশিকুল ইসলাম বিটু।
হাইকোর্টের আদেশের কপি নিয়ে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ক্লাসে অংশগ্রহণ করার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন বিটু। পরে ৪ এপ্রিল এটি গৃহীত হয় এবং ২২ মে অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণ করেন তিনি। সম্প্রতি তিনি কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৭তম ব্যাচের সঙ্গে আরেকটি ক্লাসে যোগ দেন।
এদিকে গত ১৩ জুলাই ৩০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করে ছাত্রলীগ; সেখানে বুয়েটের দুই শিক্ষার্থীকে পদ দেওয়া হয়। তাদের মধ্যে হাসিন আজফার পান্থ তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক এবং ইমতিয়াজ হোসেন রাহিম রাব্বি সদস্য পদ পেয়েছেন।
এরপর আবারও বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকার বিষয়টি মনে করিয়ে দিয়ে বিজ্ঞপ্তি দেয় কর্তৃপক্ষ।
এবিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ইতোপূর্বে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদপ্রাপ্ত দুই শিক্ষার্থীর ব্যাপারেও ক্যাম্পাসে সাংগঠনিক ছাত্ররাজনৈতিক কার্যক্রমে যুক্ত কি না বা অন্য কাউকে প্রভাবিত করছে কি না এই মর্মে প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে এবং প্রশাসন থেকে তদুপরি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।