জবির আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক খ্রিষ্টীন রিচার্ডসনের রিটের প্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন আদালত।
Published : 30 Jan 2025, 07:48 PM
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) আইন বিভাগের অধ্যাপক মো. শহিদুল ইসলামকে ওই অনুষদের ডিন নিয়োগের অফিস আদেশ স্থগিত করে দিয়েছে হাই কোর্ট।
আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক খ্রিষ্টীন রিচার্ডসনের রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি মুবিনা আসাফের হাই কোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এ স্থগিতাদেশ দেয়।
গত বছরের ১৩ জুন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক এস এম মাসুম বিল্লাহর স্থলাভিষিক্ত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমি ব্যবস্থাপনা ও আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক খ্রীষ্টিন রিচার্ডসন।
তাকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০০৫ এর ২২(৫) ধারা অনুযায়ী সিন্ডিকেটের অনুমোদন সাপেক্ষে পরবর্তী দুই বছরের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় আইনের ২২(৫) ধারা সঠিকভাবে প্রতিপালিত হয়নি দাবি করে গত ২৬ জানুয়ারি এক অফিস আদেশে খ্রিষ্টীন রিচার্ডসনের নিয়োগ বাতিল করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৯তম সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত তুলে ধরে ওই অফিস আদেশে বলা হয়, “ভূমি ব্যবস্থাপনা ও আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক খ্রিষ্টীন রিচার্ডসনের গত বছরের ৫ জুনের অফিস আদেশের মাধ্যমে আইন অনুষদের ডিন নিয়োগ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০০৫-এর ২২(৫) ধারা মোতাবেক সঠিকভাবে প্রতিপালিত না হওয়ায় উক্ত ডিন নিয়োগ বাতিল করা হল।”
একই দিন ভিন্ন আরেকটি অফিস আদেশের মাধ্যমে আইন বিভাগের অধ্যাপক মো. শহিদুল ইসলামকে অনুষদের ডিন হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
তাতে বলা হয়, “জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০০৫-এর ২২(৫) ধারা মোতাবেক সিন্ডিকেটের অনুমোদন সাপেক্ষে আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শহিদুল ইসলামকে পরবর্তী ২ (দুই) বছরের জন্য আইন অনুষদের ডিন হিসেবে নিযুক্ত করা হল।”
পরে ওই আদেশ চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন নিয়োগ বাতিল হওয়া অধ্যাপক খ্রিষ্টীন রিচার্ডসন।
বিষয়টি নিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আইন অনুষদের এ নিয়োগের আইনের ‘সুস্পষ্ট লঙ্ঘন’ হয়েছে।
“আইনে বলা হয়েছে, ‘পালাক্রমে’ ডিন নিয়োগ দেওয়ার কথা। সেক্ষেত্রে অধ্যাপক মাসুম বিল্লাহ’র পর ‘ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট ও ল’ বিভাগ থেকে আমি ডিন হয়েছি। আমার নিয়োগ হয়েছে গত বছরের জুলাইয়ে, মেয়াদ পূর্তির আগে কীভাবে নিয়োগ বাতিল করা হয়। নতুন যাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তিনি অল্প কয়েকদিন আগে অধ্যাপক হয়েছেন। নিয়ম অনুযায়ী আমার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তিনি নিয়োগ পাওয়ার কথা।”
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০০৫ এর ২২ ধারার ৫ উপধারায় বলা হয়েছে, “ভাইস-চ্যান্সেলর, সিন্ডিকেটের অনুমোদনক্রমে, প্রত্যেক অনুষদের জন্য বিভিন্ন বিভাগের অধ্যাপকদের মধ্য হইতে, জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে, ‘পালাক্রমে’ দুই বছর মেয়াদের জন্য ডিন নিযুক্ত করবেন।
“তবে কোনো ডিন পরপর দুই মেয়াদের জন্য নিযুক্ত হতে পারবেন না। কোনো বিভাগে অধ্যাপক না থাকলে সে বিভাগের জ্যেষ্ঠতম সহযোগী অধ্যাপক ডিন পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হবেন এবং কোনো বিভাগের একজন অধ্যাপক ডিনের দায়িত্ব পালন করে থাকলে বিভাগের পরবর্তী পালাসমূহে অবশিষ্ট অধ্যাপকগণ জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে ডিন পদে নিযুক্তির সুযোগ পাবেন। একাধিক বিভাগে সমজ্যেষ্ঠ অধ্যাপক অথবা সহযোগী অধ্যাপক থাকলে, তাদের মধ্যে ডিন পদের আবর্তন ক্রম ভাইস-চ্যান্সেলর কর্তৃক নির্দিষ্ট হইবে৷”
এ বিষয়ে অধ্যাপক মো. শহিদুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার ব্যক্তিগতভাবে কোনো বক্তব্য নেই, এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলতে পারবে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিস আদেশে ‘আইনের প্রতিপালন না হওয়া’র অভিযোগ নিয়ে প্রশ্ন করলে এখনই কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. রেজাউল করিম।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “যেহেতু বিষয়টি আদালতে উঠেছে, সেক্ষেত্রে আপাতত কোনো বক্তব্য নেই। আমাদের পক্ষে আমরা আদালতে বলব। আইন বিশেষজ্ঞদের নিয়ে আমাদের বক্তব্য তৈরি করছি।”