“সে আমাকে হুট করে রাস্তায় দাঁড় করায় দিয়ে বলতেছে আমার ড্রেস ঠিক নাই, আমি পর্দা করি নাই, ইত্যাদি ইত্যাদি এবং তার আচরণ খুবই অ্যাগ্রেসিভ ছিল।”
Published : 06 Mar 2025, 01:20 AM
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এক ছাত্রীকে হেনস্তার অভিযোগে এক কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করেছে শাহবাগ থানার পুলিশ।
ওই ছাত্রী বুধবার শাহবাগ থেকে ক্যাম্পাসে যাওয়ার পথে হেনস্তার শিকার হন বলে এক ফেইসবুক পোস্টে অভিযোগ করেন।
গ্রেপ্তার মোস্তফা আসিফ অর্ণব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সহকারী বাইন্ডার বলে জানান শাহবাগ থানার ওসি মো. খালিদ মনসুর।
এদিকে ছাত্রীকে হেনস্তার অভিযোগে গ্রেপ্তার বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী অর্ণবের মুক্তির দাবিতে বুধবার মাঝরাতের পর শাহবাগ থানায় জড়ো হয়েছেন একদল ব্যক্তি, যারা নিজেদের 'তৌহিদী জনতা' দাবি করেছে।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিকে মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত তারা সেখানেই অবস্থানের ঘোষণা দিয়েছেন। রাতে সাড়ে ৩টার পরও তারা সেখানে অবস্থান করছিলেন।
অর্ণবকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে এর আগে ওসি বলেন, “এই ছেলেটি এক ছাত্রীকে হেনস্তা করেছিল। পরে ওই ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসে অভিযোগ করে এবং থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করে। তারপর বুধবার তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমেদ বলছেন, "ছেলেটি পোশাক নিয়ে হেনস্তা করলে মেয়েটি প্রথমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি পোস্ট দেন এবং পরে প্রক্টর অফিসে অভিযোগ করেন। পরে তাকে (অর্ণব) প্রক্টর অফিসে নিয়ে আসা হলে হেনস্তা করার বিষয়টি সেও স্বীকার করে। পরে তাকে শাহবাগ থানায় পাঠানো হয় এবং গ্রন্থাগারকে এ বিষয়ে অবহিত করা হয়।"
হেনস্তার শিকার ওই ছাত্রীর ফেইসবুক পোস্টটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি ওঠে। পোস্টের সঙ্গে হেনস্তাকারীর ছবিও জুড়ে দিয়েছিলেন ওই ছাত্রী। তাতেই তাকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়।
ফেইসবুক পোস্টে ওই ছাত্রী লেখেন, “এই লোকটা আজকে আমাকে শাহবাগ থেকে আসার পথে হ্যারাস করেছে। সে আমাকে হুট করে রাস্তায় দাঁড় করায় দিয়ে বলতেছে আমার ড্রেস ঠিক নাই, আমি পর্দা করি নাই, ইত্যাদি ইত্যাদি এবং তার আচরণ খুবই অ্যাগ্রেসিভ ছিল। পরবর্তীতে তাকে আমি জিজ্ঞাসা করি আপনি কোন হলে থাকেন কোন ডিপার্টমেন্টে পড়েন। সে বলে সে এই ক্যাম্পাসের কেউ না।
"আমি সালওয়ার কামিজ পরে ঠিক মত ওড়না পরে ছিলাম। সে আমাকে বলে আমার নাকি ওড়না সরে গেছে। পরে আমি তাকে বললাম এইটা তো আপনার দেখার বিষয় না, আর আপনার তাকানোও জাস্টিফাইড না। এরপর আমি প্রক্টরকে কল দিতে চাইলে সে দৌঁড় দিয়ে চলে যায়।"
গ্রেপ্তার কর্মচারীর মুক্তির দাবিতে থানায় 'তৌহিদী জনতা'
মধ্যরাতের পর কিছু ব্যক্তি দলবেধে শাহবাগ থানার সামনে জড়ো হতে থাকেন। তাদের একজন শের মোহাম্মদ সাঈদ সেন্ট্রাল ফর শরিয়া স্টাডিজ এর পরিচালক পরিচয় দিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তারাবির নামাজের পর তারা এই ব্যক্তির গ্রেপ্তারের খবর জানতে পারেন। এরপর মধ্যরাতে তারা শাহবাগ থানায় এসে উপস্থিত হন।
তার ভাষ্য, সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের এই কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাকে না ছাড়া পর্যন্ত তারা এখানেই অবস্থান করবেন।
এর আগে থানা হাজতে বন্দি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী অর্ণবের সঙ্গে কথা বলেন ও তাকে আশ্বস্ত করেন তারা।
এ বিষয়ে পুলিশের বক্তব্য জানতে রাতে শাহবাগ থানায় কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে নাম প্রকাশ না করে একজন কর্মকর্তা বলেন, "ওই কর্মচারীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। সেই মামলায় তাকে বৃহস্পতিবার আদালতে পাঠাবে পুলিশ। তিনি জামিন পাবেন কি না সেটি আদালতের উপর নির্ভর করছে।"