“আমরা প্রাথমিকভাবে সচিবের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সচিব নিজে দেখা না করে প্রতিনিধি পাঠিয়েছে আমাদের সঙ্গে কথা বলতে। আমরা এটা মানি না। এখন আমাদের দাবি শিক্ষা উপদেষ্টা এসে আমাদের দাবি শুনতে হবে।“
Published : 11 Nov 2024, 05:20 PM
নতুন ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীকে হস্তান্তর, ইউজিসি প্রস্তাবিত পাইলট প্রকল্পে অন্তর্ভুক্তিসহ ৫ দাবি নিয়ে শিক্ষা ভবনের সামনের রাস্তা থেকে সরে এসে সচিবালয় ‘ঘোরাও করেছেন’ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
দাবিদাওয়ার স্মারকলিপি নিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা শিক্ষা সচিবের সঙ্গে দেখা করতে না পেরে সচিবালয়ের বাইরে অবস্থান নিয়েছেন। শিক্ষা উপাদেষ্টার দেখা না পাওয়া পর্যন্ত এলাকা না ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনকারীদের মুখপাত্র পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী তৌসিব মাহমুদ সোহান বলেন, “আমরা প্রাথমিকভাবে সচিবের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সচিব নিজে দেখা না করে প্রতিনিধি পাঠিয়েছেন আমাদের সঙ্গে কথা বলতে। আমরা এটা মানি না। এখন আমাদের দাবি শিক্ষা উপদেষ্টা এসে আমাদের দাবি শুনতে হবে। তাই আমরা সচিবালয়ের সামনে অবস্থান নিয়েছি। আমরা শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎ চাই।“
সোমবার বেলা ১২টার দিকে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে তাঁতীবাজার, জিপিও মোড় হয়ে শিক্ষা ভবন মোড়ে যান। সেখানে তারা শিক্ষা অধিকার চত্বর অবরোধ করলে আশপাশের পাঁচটি সংযোগ সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এ সময় অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া সব ধরনের পরিবহন চলাচল বন্ধ রাখা হয়। দুপুর পৌনে ২টার দিকে শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধি দল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি দিতে যায়।
১২ প্রতিনিধির একজন নওশিন নওয়ার জয়া বলেন, “আমরা শিক্ষা সচিবের কাছে এসেছিলাম স্মারকলিপি নিয়ে। আমাদেরকে কেঁচি গেটের ভিতরে দাঁড় করিয়ে অফিসের ভেতর থেকে প্রতিনিধি পাঠিয়ে দাবি তাদের কাছে দিতে বলেন। আমাদেরকে ভেতরে যেতে দেওয়া হয়নি।
“সচিব জানিয়েছেন, তার সময় নেই আমাদের সাথে কথা বলার। উপদেষ্টা আসার আগ পর্যন্ত আমরা এখানে অবস্থান করব। আমরা যেহেতু একবার বের হয়ে এসেছি আমরা আর ভেতরে গিয়ে কথা বলবো না। শিক্ষা উপদেষ্টাকে আমাদের সামনে আসতে হবে।“
দাবি নিয়ে শিক্ষা ভবনের সামনে জগন্নাথ শিক্ষার্থীরা, যানজট
এরপর দুপুর ২টা ২০ মিনিটে সচিবালয় ঘেরাও করেন শিক্ষার্থীরা। এসময় শিক্ষা চত্বর যানজট মুক্ত হলেও সচিবালয়ের সামনের সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়।
শিক্ষার্থীদের ১২ সদস্যের প্রতিনিধি দলে ছিলেন আন্দোলনের মুখপাত্র তৌসিব মাহমুদ সোহান, আন্দোলনের সংগঠক একেএম রাকিব, আসাদুল ইসলাম, রাইসুল ইসলাম নয়ন, আবু বকর খান, নওশীন নাওয়ার, সোহান প্রামাণিক, মাসুদ রানা, নূর নবী, ওমর ফারুক, ফেরদৌস শেখ, অপু মুন্সী।
শিক্ষার্থীদের ৫ দাবি হল-
• ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে নিয়োগ পাওয়া দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের প্রকল্প পরিচালককে আইনের আওতায় আনা এবং সাত দিনের মধ্যে সেনাবাহিনীর দক্ষ অফিসারদের হাতে নির্মাণ কাজের দায়িত্ব দেওয়া।
• শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সুনির্দিষ্ট রূপরেখাসহ ঘোষণা করতে হবে যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
• অবিলম্বে বাকি ১১ একর জমি অধিগ্রহণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং পুরাতন ক্যাম্পাস নিয়ে স্বৈরাচার সরকারের আমলের সকল চুক্তি বাতিল করতে হবে।
• সম্প্রতি ইউজিসির ঘোষণা করা পাইলট প্রকল্পে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
• বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক বাজেটে সর্বনিম্ন ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস নির্মাণ কাজের দায়িত্ব সেনাবাহিনীর হাতে দেওয়াসহ বিভিন্ন দাবিতে জগন্নাথের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামেন মাসের প্রথম সপ্তাহে। দাবি আদায়ে এর মধ্যে সড়ক অবরোধসহ প্রশাসনিক ভবনে তারা তালাও দিয়েছে। এছাড়া আন্দোলনকারীদের কাছ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধেরও হুঁশিয়ারি এসেছে।
এর মধ্যে নতুন করে যোগ হয়েছে ইউজিসি প্রস্তাবিত পাইলট প্রকল্পে অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি।
প্রশাসনিক ভবনে তালা দিয়ে জগন্নাথ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
গত ৭ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে নিরবচ্ছিন্ন দ্রুতগতির ব্রডব্যান্ড সংযোগ দেওয়া ও অসস্বচ্ছল মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেওয়ার জন্য অর্থ সংস্থান নিশ্চিত করতে হায়ার এডুকেশন এক্সিলারেশন অ্যান্ড ট্রান্সফরমেশন (হিট) প্রকল্প সংশোধনের প্রস্তাব দিয়েছে ইউজিসি। ওই প্রস্তাবের অংশ হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে পাইলট প্রকল্প হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। এই প্রজেক্টে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘অবহেলা’ করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন শিক্ষার্থীরা।