শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বের হয়ে তাঁতীবাজার, জিপিও মোড় হয়ে শিক্ষা ভবন মোড়ে আসে।
Published : 11 Nov 2024, 04:15 PM
নতুন ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীকে হস্তান্তর, ইউজিসি প্রস্তাবিত পাইলট প্রকল্পে অন্তর্ভুক্তিসহ ৫ দাবিতে শিক্ষা ভবনের সামনের রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা।
সোমবার বেলা ১২টার দিকে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে তাঁতীবাজার, জিপিও মোড় হয়ে শিক্ষা ভবন মোড়ে আসেন। সেখানে তারা শিক্ষা অধিকার চত্বর অবরোধ করলে আশপাশের পাঁচটি সংযোগ সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এ সময় অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া সব ধরনের পরিবহন চলাচল বন্ধ রাখা হয়।
প্রায় এক ঘণ্টা পর দুপুর পৌনে ২টার দিকে শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধি দল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি দিতে যায়।
তার আগে আন্দোলনের মুখপাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তৌসিব মাহমুদ সোহান বলেন, “আমরা ১৫ সদস্যের প্রতিনিধি দল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বরতদের সাথে কথা বলতে যাব। আমাদের দাবি সেখানে উত্থাপন করে তাদের তিন দিনের একটি আল্টিমেটাম দিব। একই সাথে হিট প্রকল্পের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে অগ্রাধিকার দিয়ে আজকের মধ্যেই লিখিত বুঝে নেওয়া হবে।”
গত ৭ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে নিরবচ্ছিন্ন দ্রুতগতির ব্রডব্যান্ড সংযোগ দেওয়া ও অসস্বচ্ছল মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেওয়ার জন্য অর্থ সংস্থান নিশ্চিত করতে হায়ার এডুকেশন এক্সিলারেশন অ্যান্ড ট্রান্সফরমেশন (হিট) প্রকল্প সংশোধনের প্রস্তাব দিয়েছে ইউজিসি। এই প্রস্তাবনার অংশ হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে পাইলট প্রকল্প হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। এই প্রজেক্টে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘অবহেলা’ করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন শিক্ষার্থীরা।
জগন্নাথ সবক্ষেত্রে ‘বৈষম্যের শিকার’ অভিযোগ করে আন্দোলনের সংগঠক রাকিব বলেন, “আমরা ন্যায্য অধিকারে বঞ্চিত। যেখানে আমাদের হল নেই, অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা মেসে থাকে। সেখানে, পাইলট প্রজেক্টে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। এটা বৈষম্য নয়? আমরা আমাদের অধিকার আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাব।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রশিবিরের সভাপতি ইকবাল হোসেন শিকদার বলেন, “দেশের অন্যতম অবহেলিত শিক্ষালয় হল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে যতটুকু সুযোগ সুবিধা পাওয়া দরকার তা জবিয়ানরা পায় না৷ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটের সাথে তুলনা করলে দেখা যায় সবার শেষের আগেরটা জবি, এরপর থাকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। আমরা এই বৈষম্য মেনে নিব না। আমাদের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ ২০১৮ সালে শুরু হলেও এখন পর্যন্ত তেমন কাজই হয় নাই। আমাদের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ দ্রুত শেষ করতে হবে।”
শিক্ষার্থীদের ৫ দাবি
১. ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে নিয়োগ পাওয়া দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের প্রকল্প পরিচালককে আইনের আওতায় আনা এবং সাত দিনের মধ্যে সেনাবাহিনীর দক্ষ অফিসারদের হাতে নির্মাণ কাজের দায়িত্ব দেওয়া।
২. শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সুনির্দিষ্ট রূপরেখাসহ ঘোষণা করতে হবে যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
৩. অবিলম্বে বাকি ১১ একর জমি অধিগ্রহণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং পুরাতন ক্যাম্পাস নিয়ে স্বৈরাচার সরকারের আমলের সকল চুক্তি বাতিল করতে হবে।
৪. সম্প্রতি ইউজিসির ঘোষণা করা পাইলট প্রকল্পে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
৫. বিশ্ববিদ্যালয়ের বাৎসরিক বাজেট সর্বনিম্ন ৫০০ (পাঁচশত) কোটি টাকা বরাদ্দ দিতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস নির্মাণ কাজের দায়িত্ব সেনাবাহিনীর হাতে দেওয়াসহ বিভিন্ন দাবিতে জগন্নাথের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামেন মাসের প্রথম সপ্তাহে। দাবি আদায়ে এর মধ্যে সড়ক অবরোধসহ প্রশাসনিক ভবনে তারা তালাও দিয়েছে। এছাড়া আন্দোলনকারীদের কাছ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধেরও হুঁশিয়ারি এসেছে।