তারা মেডিকেল কলেজে ভর্তির ফলে কোটা বাতিলের দাবি তুলেছেন।
Published : 20 Jan 2025, 01:06 AM
মুক্তিযোদ্ধাসহ অন্যান্য কোটা রেখে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করায় আবার ’কোটা না মেধা, মেধা-মেধা’ স্লোগানে মাঝরাতে বিক্ষোভ হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়।
রোববার রাত সাড়ে ১১টায় এদিন প্রকাশিত ফলাফলকে ‘বৈষম্যমূলক’ দাবি করে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিক্ষোভ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা মেডিকেল কলেজের বেশ কিছু শিক্ষার্থী। তারা ফল বাতিলের দাবিও তুলেছেন।
এসময় তারা ‘কোটা না মেধা, মেধা-মেধা' 'সারা বাংলায় খবর দে - কোটা প্রথার কবর দে'সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন।
সরকারি চাকরিতে কোটার বিরোধীতা করে ২০২৪ সালের জুন-জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময়ও এমন স্লোগান দেওয়া হত।
সেই আন্দোলন এক পর্যায়ে সরকার পতনের এক দফায় রূপ নিলে ছাত্র-জনতার গণ অভ্যুত্থানে টানা ১৫ বছরের শাসন শেষ হয় শেখ হাসিনার।
রোববার মেডিকেল কলেজে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়, যেখানে ৩৭টি সরকারি কলেজের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন পাঁচ হাজার ৩৭২ জন।
পরে রাতে মেডিকেলের ভর্তির ফলাফল তৈরিতে কোটা রাখার বিরোধিতা করে বিক্ষোভে নামেন শিক্ষার্থীরা। তারা ’মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ অন্যান্য কোটা’ রাখায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
মধ্যরাতে বিক্ষোভের পর তারা শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে সমাবেশ করেন। এতে তারা মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলকে ‘বৈষম্যমূলক’ দাবি করে সেটি বাতিল করে নতুন করে আবারও ফলাফল প্রকাশের দাবি জানান।
সমাবেশে অন্যান্য শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দপ্তর সেল সম্পাদক জাহিদ আহসানও বক্তব্য দেন।
এবার মেডিকেলে ভর্তির ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা কোটার পাশাপাশি পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠী জন্য সংরক্ষিত রাখা হয়। এছাড়া বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য আসন বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
অপরদিকে বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ৫ শতাংশ আসন মেধাবী ও অসচ্ছল প্রার্থীদের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
গত ২৬ নভেম্বর প্রকাশিত ‘মেডিকেল কলেজ ও ডেন্টাল কলেজ/ইউনিট এ এমবিবিএস/বিডিএস কোর্সে শিক্ষার্থী ভর্তি নীতিমালা-২০২৫’ এ দেখা যায়, মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনার পুত্র-কন্যাদের জন্য ৫ শতাংশ আসন সংরক্ষিত থাকবে। পাশাপাশি পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীর (উপজাতীয় ও তিন পার্বত্য জেলার অ-উপজাতীয়) কোটাভুক্তদের জন্য ১২টি এবং পার্বত্য জেলা ছাড়া অন্য জেলার জন্য আটটি আসন সংরক্ষিত থাকবে।
কোটার বিরোধিতা করে রাতে বিক্ষোভ সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দপ্তর সেল সম্পাদক জাহিদ আহসান বলেন, "বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে সরকার পতনের আন্দোলনের মূল ভিত্তি ছিল কোটা সংস্কার আন্দোলন। এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে কোটা প্রথার পতন হয়েছে কিন্তু মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় যে কোটা ব্যবস্থা আমরা দেখলাম এটা কোনো ভাবেই কাম্য নয়।
”এই কোটা ব্যবস্থাকে আমরা আবারও নিন্দা ভরে প্রত্যাখ্যান করছি।"
মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগ ও বিজয় একাত্তর হলের শিক্ষার্থী আসিফ খান বলেন, “যে কোটার জন্য দুই হাজারেরও অধিক মানুষ জীবন দিয়েছে, যে কোটার জন্য হাজার হাজার মানুষের অঙ্গহানি হয়েছে সেই কোটা এখনো বহাল আছে। এর চেয়ে নিন্দনীয় ঘটনা আর কী হতে পারে।
”অন্তবর্তীকালীন সরকার কি ভুলে গেছে যে তারা শহীদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। একজন ভর্তি পরীক্ষায় ৭২ পেয়ে চান্স পায় না আর একজন ৪৪ পেয়ে কীভাবে চান্স পায়? এ ধরনের বৈষম্য এখনও দেখতে হচ্ছে। সংবিধান সংস্কারের আগে কোটা সংস্কার করতে হবে।”
দ্রুত সময়ের মধ্যে কোটা সরিয়ে নেওয়া না হলে ছাত্র সমাজ আবারও রাজপথে নামবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী মিম বিনতে আলমগীর বলেন, "যে কোটার জন্য এত আন্দোলন এত রক্ত সেই মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ অন্যান্য কোটার ফলে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় মেধাবীরা বঞ্চিত হচ্ছে অযোগ্যরা সুযোগ পাচ্ছে। এই কোটা পদ্ধতিকে আমরা তীব্র নিন্দা জানাই।"