এ দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা গত ১৫ এপ্রিলও সংঘর্ষে জড়ান।
Published : 22 Apr 2025, 05:27 PM
কয়েক দিন পরপর রাজধানীর ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যকার সংঘর্ষ ঠেকাতে ‘শিগগিরই’ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দুটির সঙ্গে আলোচনায় বসবে পুলিশ।
মঙ্গলবার বিকালে পুলিশের ধানমন্ডি জোনের সহকারী কমিশনার শাহ মোস্তফা তারিকুজ্জামান বলেন, “আমরা শিগগিরই কলেজ দুটির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলব।”
এদিন দুপুর থেকে দুই কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রায় চার ঘণ্টা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে।
বিকাল ৪টার দিকে শিক্ষার্থীরা সড়ক থেকে সরে গেলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসার কথা জানান মোস্তফা তারিকুজ্জামান।
তবে এই সংঘাতে কাউকে আটক করা হয়নি বলে জানিয়েছেন নিউ মার্কেট থানার ওসি মোহসিন উদ্দিন।
তিনি বলেন, “বর্তমানে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।”
এর আগে তিনি বলেছিলেন, “মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা সিটি কলেজের কাছে গিয়ে ইট পাটকেল ছুড়তে শুরু করলে ওই এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা শুরু হয়।
“সোমবার নাকি ঢাকা কলেজের এক ছেলেকে সিটি কলেজের ছাত্ররা মেরেছে। মঙ্গলবার ওই ঘটনার বদলায় ঢাকা কলেজের ছাত্ররা সিটি কলেজের ছাত্রকে মারধর করলে সংঘাতের সূচনা হয়।”
সময় গড়ালে দুই কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া এবং ইট পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে লাঠিসোঁটা নিয়ে অবস্থান নেন দুই কলেজের শিক্ষার্থীরা।
সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। সেখান থেকে শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দিতে পুলিশের চেষ্টার মধ্যে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা এসে সিটি কলেজের নাম ফলক খুলে নিয়ে চলে যায়। পরে আবার উত্তেজনার শুরু হয়।
পরে লাঠিপেটা করে ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে দেখা যায় পুলিশকে। পরে আবার সিটি কলেজের সামনে সেখানকার শিক্ষার্থীরা ও সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিলে উত্তেজনা গড়ায় বিকাল পর্যন্ত।
এদিকে এই সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়ে ধানমন্ডির পপুলার হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যান।
পরে সেখান থেকে ছয়জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয় বলে জানিয়েছে হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মো. ফারুক।
ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নিতে যাওয়া শিক্ষার্থীরা হচ্ছেন- আদিব, লিয়ন, ফজলে হাসান, রাজিন, নাজমুস সাকিব ও আহসান শামীম।
এদের মধ্যে ঢামেকে যাওয়া সিটি কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী আহসান শামীম বলেন, “মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১২ টার দিকে আমরা কলেজের বাস থেকে নামার পর ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা অতর্কিত হামলা চালায়।
“শুনেছি গতকাল ঢাকা কলেজের এক শিক্ষার্থীকে কে বা কারা মারধর করছে, তা আমি জানি না। কিন্তু ঢাকা কলেজের ছেলেরা আমাদের ওপর হামলা করেছে।”
ঢাকা কলেজের স্নাতক চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ফজলে হাসান বলেন, “গতকাল আমাদের কলেজের ছোটভাইদের মারধর করে অশ্লীল ছবি ধারণ করেছে। এসব নিয়ে আজ তাদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের মারামারি হয়। আমি তাদের ফেরাতে গিয়ে আহত হয়েছি।”
চলতি মাসের ১৫ তারিখেও এই দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা সংঘর্ষে জড়ান। ওইদিন দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা শুরুর পর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়।
ঢাকার সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ের কাছে এক কিলোমিটারেরও কম দূরত্বে ঢাকা কলেজ, সিটি কলেজ ও আইডিয়াল কলেজের ক্যাম্পাস। এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা প্রতি বছরই কয়েকবার করে সংঘর্ষে জড়ায় নানা কারণে।
ফের সংঘাতে ঢাকা ও সিটি কলেজের ছাত্ররা
গত ৯ ফেব্রুয়ারি ‘কথা কাটাকাটির’ জেরে সায়েন্সল্যাব এলাকাতেই সংঘর্ষে জড়ায় সিটি কলেজ ও আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীরা।
গত বছর ১০ সেপ্টেম্বর সায়েন্স ল্যাব এলাকায় ঢাকা কলেজ ও আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীরা সংঘর্ষে জড়ায়।
প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে চলা সংঘর্ষে সেদিন ১৮ জন আহত হন। ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের ওই দিন আইডিয়াল কলেজের নামফলকও খুলে নিয়ে যেতে দেখা যায়।
এর পাঁচদিন পর সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় ঢাকা কলেজের একটি বাস ভাঙচুর করেন আইডিয়ালের শিক্ষার্থীরা।
গত ২০ নভেম্বর দুপুরে ঢাকা কলেজের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিন কলেজের দুটি বাস সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা ভাঙচুর করেন। এ ঘটনার জেরে দুই কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়।
সেদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত সেই মারামারি চলে, যেখানে দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হওয়ার তথ্য দেয় ঢাকা কলেজ।
এরপর ঢাকা কলেজ, সিটি কলেজ, আইডিয়াল কলেজ, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজ ও বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজের প্রতিনিধিসহ পুলিশের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়।
ধানমন্ডি এলাকার এসব কলেজগুলোর ছোট ছোট সমস্যা যেন বড় রূপ না নেয়, তা নিশ্চিত করতে এই কমিটি কাজ করবে বলে জানানো হয়। কিন্তু এর মধ্যে আবারও ‘সামান্য বিষয়’ নিয়ে সংঘর্ষে জড়াচ্ছে শিক্ষার্থীরা।