এক বছরে সরিষার উৎপাদন ৪০%, তেল ৩০% বেড়েছে

সরকারের পরিকল্পনা হল, ধানের উৎপাদন না কমিয়েই ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মধ্যে স্থানীয়ভাবে ১০ লাখ টন তেল উৎপাদন করা, যা চাহিদার ৪০ শতাংশ পূরণ করবে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 May 2023, 05:22 PM
Updated : 1 May 2023, 05:22 PM

দেশীয় উৎস থেকে ভোজ্যতেলের চাহিদার ৪০ শতাংশ জোগান দেওয়ার তিন বছর মেয়াদী যে পরিকল্পনা কৃষি মন্ত্রণালয় নিয়েছে, প্রথম বছরেই তাতে সাফল্যের মুখ দেখার কথা বলছে সরকার। 

কৃষি মন্ত্রণালয় সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, এক বছরেই দেশে সরিষার উৎপাদন বেড়েছে ৪০ শতাংশ, আর সরিষার তেলের উৎপাদন বেড়েছে ৩০ শতাংশ। 

মন্ত্রণালয় বলছে, পরিকল্পনার অংশ হিসাবে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে দেশে সরিষার আবাদ বেড়েছে ২ লাখ হেক্টর জমিতে এবং উৎপাদন বেড়েছে ৩ লাখ ৩৫ হাজার টন। 

“তেল হিসাবে বিবেচনা করলে আগের বছরের তুলনায় ১ লাখ ২১ হাজার টন তেল বেশি উৎপাদিত হয়েছে। আর প্রতি লিটার তেলের মূল্য ২৫০ টাকা করে হিসাব করলে এক বছরেই উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার।” 

ভোজ্যতেলের চাহিদার ৪০ শতাংশ স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করতে ২০২২ সালের জুনে ৩ বছর মেয়াদী কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করে কৃষি মন্ত্রণালয়। 

কেবল সরিষার তেলের উৎপাদন বৃদ্ধি বিবেচনায় নিলে এ বছর দেশীয় উৎস থেকে ৪ লাখ ২১ হাজার টন তেল পাওয়া যাচ্ছে, যা গত বছর ছিল ৩ লাখ টন। 

সরকারের পরিকল্পনায় সূর্যমুখী, বাদাম, সয়াবিন ও তিলের উৎপাদন বাড়ানোর কথা বলা হলেও সরিষা ছাড়া অন্য তেলবীজগুলোর হিসাব দেওয়া হয়নি। 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবে, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ৮ লাখ ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে তেলবীজ আবাদ হয়; যার মধ্যে সরিষা করা হয় ৬ লাখ ১০ হাজার হেক্টর জমিতে। 

সরকারের পরিকল্পনা হল, ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ৯ লাখ ২০ হাজার হেক্টর, পরের বছর ১৬ লাখ হেক্টর এবং তার পরের ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে ২৩ লাখ হেক্টর জমিতে তেলবীজ আবাদ করা হবে। 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানাচ্ছে, সদ্যসমাপ্ত ২০২২-২০২৩ মৌসুমে ৮ লাখ ১২ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে, যেখান থেকে ১১ লাখ ৫২ হাজার টন সরিষা পাওয়া গেছে। এর আগের বছর ৬ লাখ ১০ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ করে উৎপাদন হয়েছিল ৮ লাখ ২৪ হাজার টন। 

দেশে বছরে ভোজ্যতেলের চাহিদা প্রায় ২৪ লাখ টন। এর মধ্যে সরিষা, তিল ও সূর্যমুখী থেকে স্থানীয়ভাবে উৎপাদন হয় ৩ লাখ টন, যা চাহিদার সাড়ে ১২ শতাংশ। বাকি ভোজ্যতেল আমদানি করতে হয়। 

পরিকল্পনা অনুযায়ী ধানের উৎপাদন না কমিয়েই আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মধ্যে স্থানীয়ভাবে ১০ লাখ টন তেল উৎপাদন করা হবে, যা চাহিদার ৪০ শতাংশ পূরণ করবে। এর ফলে তেল আমদানিতে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় করা সম্ভব হবে। 

কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের মধ্যে সরিষা, তিল, বাদাম, সয়াবিন, সূর্যমুখীসহ তেলজাতীয় ফসলের আবাদ তিনগুণ বৃদ্ধি করে বর্তমানের ৮ লাখ ৬০ হেক্টর জমি থেকে ২৩ লাখ ৬০ হাজার হেক্টরে উন্নীত করা হবে। 

আর তেলজাতীয় ফসলের উৎপাদন এখনকার ১২ লাখ টন থেকে ২৯ লাখ টনে এবং তেলের উৎপাদন বর্তমানের ৩ লাখ টন থেকে ১০ লাখ টনে উন্নীত করা হবে। 

এ লক্ষ্য অর্জনে তিনটি বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। প্রথমটি হচ্ছে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি। বর্তমানে আবাদ করা টরি-৭, মাঘী, ডুপিসহ স্থানীয় জাতের পরিবর্তে উচ্চফলনশীল সরিষার জাত বিনা-৪, বিনা-৯, বারি-১৪, বারি-১৭ প্রভৃতি জাত ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। 

দ্বিতীয়ত, অনাবাদি চরাঞ্চল, উপকূলের লবণাক্ত অঞ্চল, হাওর ও পাহাড়ি অঞ্চলকে তেলজাতীয় ফসল চাষের আওতায় আনা হচ্ছে। 

তৃতীয়ত, নতুন শস্যবিন্যাসে স্বল্প জীবনকালের ধানের চাষ করে রোপা আমন ও বোরোর মধ্যবর্তী সময়ে অতিরিক্ত ফসল হিসাবে সরিষার চাষ করা হচ্ছে। 

এছাড়া, লক্ষ্য অর্জনে তেলজাতীয় ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষকদের দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন প্রণোদনা। এর ফলে প্রথম এক বছরেই প্রায় ২ লাখ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ বাড়ানো সম্ভব  হয়েছে। 

বাংলাদেশ ব্যাংক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) হিসাবে, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে দেশে ১৩ লাখ ৫৫ হাজার টন পাম তেল এবং ৭ লাখ ৮০ হাজার টন সয়াবিন আমদানি হয়েছে। 

মোট ২১ লাখ ৩৫ হাজার টন ভোজ্য তেল আমদানি বাবদ ব্যয় হয়েছে ১৮৪ কোটি ৭৯ লাখ ডলার; বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা। 

দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ২০২১-২০২২ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার পাম ও সয়াবিন তেল আমদানি করতে হয়েছে বলে গতবছর জুনে এক অনুষ্ঠানে জানিয়েছিল কৃষি মন্ত্রণালয়।

Also Read: দেশে ভোজ্য তেল উৎপাদন ৪ গুণ বাড়ানোর পরিকল্পনা