চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের জন্য নতুন প্রণোদনার হার ঠিক করেছে সরকার।
Published : 30 Jan 2024, 11:42 PM
স্বল্পোন্নত দেশের কাতার থেকে উত্তরণের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে তৈরি পোশাক ও চামড়াসহ ৪৩ খাতের পণ্যে নগদ প্রণোদনা কমানো হয়েছে; পণ্য ভেদে কমেছে ২০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত।
মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংক এক সার্কুলারে একটি খাতে আগের হার অপরিবর্তিত রেখে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাকি ছয় মাসে রপ্তানির বিপরীতে নগদ প্রণোদনার নতুন হার নির্ধারণ করে দিয়েছে।
রপ্তানি বাণিজ্যে উৎসাহ দিতে রপ্তানির বিপরীতে এসব খাতে দীর্ঘদিন থেকে বিভিন্ন হারে প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে।
নতুন ঠিক করা প্রণোদনার হার অনুযায়ী, শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ প্রণোদনা পাবেন রপ্তানিকারকরা, আগে যা ছিল ১ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ।
সার্কুলারে প্রণোদনা কমানোর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, ‘‘আগামী ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ ঘটতে যাচ্ছে। একইসঙ্গে রপ্তানি প্রণোদনা/নগদ সহায়তা একবারে তুলে নিলে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে রপ্তানি বাণিজ্য। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে নগদ সহায়তার হার অল্প অল্প করে হ্রাস করতে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।’’
এতে বলা হয়, ‘‘দেশের রপ্তানি বাণিজ্যকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে সরকার চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৪৩টি খাতে রপ্তানির বিপরীতে রপ্তানি প্রণোদনা/নগদ সহায়তা প্রদান করছে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশন-ডব্লিউটিও) বিধিবিধান অনুসারে বিষয়টি রপ্তানিনির্ভর সাবসিডি হিসেবে বিবেচিত হয়।’’
এলডিসি থেকে বেরিয়ে এলে এ ভুর্তকি তুলে নিতে হবে; গ্রাজুয়েশনের বাকি সময়ে যাতে একবারে চাপ না হয় সেজন্য পর্যায়ক্রমে নগদ প্রণোদনা কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা বলছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সার্কুলারে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংস্থার ‘অ্যাগ্রিমেন্ট অন সাবসিডিস অ্যান্ড কাউন্টারভেইলিং মেজার্স (এএসসিএম)’ অনুযায়ী স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উত্তরণ হলে কোনরূপ রপ্তানি প্রণোদনা/নগদ সহায়তা প্রদান করতে পারবে না ওই দেশ।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র ও পরিচালক সরোয়ার হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘‘অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ম অনুযায়ী বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে অবহিত করতে সার্কুলার দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।’’
সার্কুলারে বলা হয়েছে, রপ্তানি প্রণোদনা বা নগদ সহায়তা পেতে আগের মতো সব শর্ত মানতে হবে। বহিঃনিরীক্ষক দিয়ে নিরীক্ষা করার বিষয়েও আগের মতো বাধ্যবাধকতা থাকবে।
চলতি অর্থবছরের জন্য রপ্তানি বাণিজ্যের ৪৩ খাতে রপ্তানি প্রণোদনা, নগদ সহায়তা, বিকল্প সহায়তা, বিশেষ সহায়তা ও ভর্তুকির নামে উদ্যোক্তাদের সুবিধা দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয় ২০২৩ সালের অগাস্টে। ওই সময়ে পুরো অর্থবছরের জন্য সুবিধা দেওয়ার সিদ্ধান্ত থাকলেও ছয় মাস পর নতুন হার ঠিক করল সরকার।
কমেছে যেসব খাতে
প্রণোদনা কমানোর সার্কুলার বিশ্লেষণে দেখা যায়, কেমিকেল খাতে সাতটিতে অর্ধেক কমিয়ে ভর্তুকি তুলে নেওয়া হয়েছে রাসায়নিক খাতের কসটিক সোডা ও হাইড্রোজেন পার অক্সাইড এবং বস্ত্রখাতের পাঁচটি এইচএস কোডের আওতায় রপ্তানি হওয়া পণ্যের উপর থেকে। চামড়া খাতের ‘ক্রাস্ট লেদার’ পণ্যও আগের সহায়তা পাবে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের দেওয়া তালিকা অনুযায়ী, পুরুষদের শার্ট (এইচএস কোড ৬১০৫), পুরুষদের অর্ন্তবাস ও রাতে ব্যবহৃত শার্ট, পাজামা, গোসলের আগে ও পরে ব্যবহৃত পোশাক (এইচএস কোড ৬১০৭), টি-শার্ট, শরীরচর্চার জন্য আটসাঁটো জাতীয় পোশাক (এইচএস কোড ৬১০৯), জার্সি, কার্ডিগান, ওয়েস্ট কোটস জাতীয় পোশাক (এইচএস কোড ৬১১০), পুরুষদের জ্যাকেট, স্যুট, ব্লেজার, ট্রাউজারস, শিশুদের গলাবন্ধনী, ব্রেসওয়ারঅলস, ব্রিচেস অ্যান্ড শর্টস (সাঁতারের পোশাক বাদে) জাতীয় পোশাকও (এইচএসব কোড ৬২০৩) রপ্তানি প্রণোদনা ও নগদ সহায়তায় বাইরে থাকবে।
নির্দিষ্ট এসব পণ্যের বিপরীতে গত ১ জানুয়ারি থেকে জাহাজীকরণ করা পণ্যের বিপরীতে প্রণোদনা পাওয়া যাবে না।
এবার প্রণোদনা সর্বোচ্চ পরিমাণ অর্থাৎ অর্ধেক কমেছে ইউরো অঞ্চলের বস্ত্রখাতের রপ্তানির বিপরীতে অতিরিক্ত বিশেষ সহায়তায়। বিদ্যমান ২ শতাংশ থেকে নামিয়ে ১ শতাংশ করা হয়েছে।
তৈরি পোশাক খাতে বিশেষ নগদ সহায়তা এক শতাংশ থেকে কমিয়ে শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ করা হয়েছে।
এছাড়া পাঠকাঠি থেকে উৎপাদিত কার্বন ও জুট পার্টিকেল বোর্ড, শস্য-শাক সবজি ও তার বীজ, আগর ও আতর এবং একটিভ ফার্মাসিউটিক্যালস ইনগগ্রেডিয়েন্টস (এপিআই) খাতে বিদ্যমান ভর্তুকি ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ প্রণোদনা আকারে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক খাতের দেশি বস্ত্রখাতে শুল্ক বন্ড ও ডিউটি ড্র-ব্যাক এর পরিবর্তে বিকল্প নগদ সহায়তা পাওয়া যাবে ৩ শতাংশ, আগে যা ছিল চার শতাংশ।
নিট, ওভেন ও সোয়েটার অন্তর্ভুক্ত ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে থাকা অতিরিক্ত সুবিধা আগের মতো ৪ শতাংশই রেখেছে সরকার।
এছাড়া নতুন পণ্য/নতুন বাজার (বস্ত্রখাত) সম্প্রসারণে সহায়তা ৪ শতাংশের বদলে ৩ শতাংশ করা হয়েছে।