Published : 02 May 2025, 11:46 PM
কিছুটা কমে যাওয়া মুরগির দাম সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়ে গেছে। আর, চড়ে থাকা সবজির বাজারে নড়চড় দেখা যায়নি।
শুক্রবার ছুটির দিনে রাজধানীর মহাখালী কাঁচাবাজার ও সাত তলা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত সপ্তাহের তুলনায় সব ধরনের মুরগির দাম কেজিতে ১০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
বাজার দুটিতে ব্রয়লার মুরগির দাম ১০ টাকা বেড়ে ১৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এসব বাজারে সোনালি কক মুরগি কেজিতে ৪০ টাকা বেড়ে ৩০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। গেল সপ্তাহে এই মুরগি বিক্রি হয়েছে ২৬০ টাকায়।
এছাড়া, বাজারে সোনালি হাইব্রিড ২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গেল সপ্তাহে এই মুরগি বিক্রি হয়েছে ২৪০ টাকা।
আর, লাল লেয়ার মুরগি ৪০ টাকা বেড়ে ৩১০ টাকা, সাদা লেয়ার ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়ে ২৭০ টাকা ও দেশি মুরগি ২০ টাকা বেড়ে ৬৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
সাত তলা বাজারের ‘বিসমিল্লাহ মুরগির দোকানের’ বিক্রেতা খোকন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গেল সপ্তাহের তুলনায় প্রায় সব মুরগির দাম কিছুটা বেড়ে আগের জায়গায় এসেছে। তীব্র গরমের কারণে কিছুটা দাম পড়ে গেছিল।
“গেল দুই-তিন দিন একটু বৃষ্টি হওয়ায় আবার দাম বেড়েছে। আসলে আগের জায়গায় ফেরত এসেছে। দামের এই ওঠানামা চলতেই থাকে।”
এই বাজারের ‘রাজিব-মুক্তা পোল্ট্রি’ দোকানের বিক্রেতা রাজিব হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বেশি বেড়েছে লাল লেয়ার মুরগি আর সোনালি ককের দাম। রোস্ট, রেজালার জন্য এই মুরগির চাহিদা আছে। দাম তো ওঠানামা করেই।”
এই বাজারে মুরগি কিনতে আসা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. মুকিত হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ব্রয়লার তিন-চারদিন আগে ১৮০ টাকা করে নিয়ে গিয়েছিলাম। আজ এসে শুনি ১৯০ টাকা দাম। নিতে চেয়েছিলাম সাদা লেয়ার। ওটার দামও বেড়েছে।”
চড়া সবজির বাজার স্থিতিশীল
বাজারে মুরগির দামের ওঠানামা হলেও শাক-সবজির বাজার গেল সপ্তাহের দামেই স্থির রয়েছে। দুই একটি সবজির দামের ওঠানামা হয়েছে কেবল।
বাজারে ৬০ টাকার নিচে কোনো সবজি নেই বলা চলে। অধিকাংশ সবজির কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকা। আবার কিছু সবজি শতক ছাড়িয়েছে।
বাজারে গ্রীষ্মকালীন সবজির মধ্যে করলা, পটল, ধুন্দল, চিচিঙ্গা, কাঁকরোল, ঢেঁড়স ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বেগুনও বিক্রি হচ্ছে একই দামে।
সবচেয়ে কম দামি সবজি পেঁপের দাম ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়ে ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে, পাইকারি বাজারে আগের দামেই মিলছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।
এছাড়া, কচুর লতি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, কচুরমুখী ১০০ থেকে ১২০ টাকা, বরবটি ১০০ থেকে ১১০ টাকা, সজনে ১১০ থেকে ১২০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে কাঁচামরিচের দাম স্থিতিশীল আছে প্রায় মাসখানেক ধরে। নিত্যপ্রয়োজনীয় এই মসলাজাতীয় পণ্যটি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে।
এসব বাজারে কিছু শীতকালীন সবজি এখনও মিলছে। তবে, দাম বেশ চড়া। বাজারগুলোতে শিমের দাম গেল সপ্তাহের তুলনায় ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়ে মানভেদে ৮০ থেকে ৯০ টাকা, ফুলকপি আকৃতিভেদে ৫০ থেকে ৬০ টাকা প্রতিটি, লাউ আকৃতিভেদে প্রতিটি ৫০ থেকে ৮০ টাকায় মিলছে।
কিছুটা কম দামে কাঁচা কলার হালি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। আর চাল কুমড়া আকৃতিভেদে ৫০ থেকে ৬০ টাকা প্রতিটি ও মিষ্টি কুমড়া ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে পাওয়া যাচ্ছে।
এছাড়া, গেল সপ্তাহের মতই পাকা টমেটো ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, গাজর ৫০ টাকা, মুলা ৬০ টাকা ও শসা প্রকারভেদে ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে মিলছে।
বাজারে লেবুর হালি ১০ থেকে ২০ টাকা, ধনেপাতা ১৮০ টাকা কেজি, কাঁচা আম ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
সাত তলা বাজারের সবজি বিক্রেতা শাহ আলম বিডিনিউজ বলেন, “শীতের সবজি কমে আসছে। এক-দুই সপ্তাহ পর ফুলকপি আর পাওয়া যাবে না। এজন্য শেষ মুহূর্তে কিছুটা বাজার চড়া। গরমের (গ্রীষ্মকালীন) সবজি ঢুকছে। দাম কমে যাবে অচিরেই।”
বাজারে লাল শাক গেল সপ্তাহের তুলনায় কিছুটা বেড়ে ২০ থেকে ২৫ টাকা আঁটি, লাউ শাক ৪০ থেকে ৫০ টাকা, পালং শাক ১৫ টাকা, কলমি শাক ১৫ টাকা, পুঁই শাক ৩০ থেকে ৪০ টাকা ও ডাটা শাক ১০ টাকা আঁটি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া, বতুয়ার শাক ২০ টাকা আঁটি, ঢেঁকি শাক ৩০ থেকে ৪০ টাকা, কিছু দোকানে নাপা শাক মিলছে, বিক্রি হচ্ছে আঁটি ২৫ থেকে ৩০ টাকায়।
সয়াবিন নিয়ে ‘নাটকের’ শেষই হচ্ছে না
বাজারে দাম বাড়ার পরও বোতলের সয়াবিনে বেশি দাম রাখার অভিযোগ রয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সাত তলা বাজারের একটি দোকানে তেল কিনতে এসে ঝগড়ায় জড়ান রিশাদ হোসেন নামের এক ক্রেতা।
তার অভিযোগ, পুরনো বোতলের গায়ে লেখা দাম ঘষে তুলে ফেলা হয়েছে। এরপরও নতুন দামের বোতলের চাইতে বেশি দাম রাখা হচ্ছে। ১ লিটারের বোতলের দাম বিক্রেতা চাইছেন ২০০ টাকা, যা সরকার নির্ধারিত দামের চাইতে ১১ টাকা বেশি।
তবে বিক্রেতার ভাষ্য, “তেল আমার কাছে ছিলই না। এগুলো ডিলারের মাল। তারা ঘষে দাম উঠিয়ে ফেলেছে কিনা জানা নেই।”
নির্ধারিত দামের চাইতে বেশি দামে বিক্রির বিষয়েও কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি। দায় চাপালেন পরিবেশকের ঘাড়েই।
বোতল হাতে নিয়ে ক্রেতার অভিযোগের সত্যতাও পাওয়া গেছে। শেষমেশ বিক্রেতা রাখলেন নির্ধারিত দাম। তবে তার ভাষ্য, এই বোতলে তার কোনো ‘লাভ থাকল না’।
গেল ১৫ এপ্রিল সরকার বোতলের সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটার ১৮৯ টাকা এবং খোলা সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটার ১৬৯ টাকা নির্ধারণ করে। এরপরই বাজারে কয়েক মাস ধরে সংকটে থাকা সয়াবিনের বোতলের সরবরাহ ‘জাদুমন্ত্রবলে’ বেড়ে যায়।
পেঁয়াজ-রসুন মিলছে আগের দামেই
বাজারে আলু-পেঁয়াজসহ মসলাজাত পণ্যের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। বাজারে মাসখানেক ধরেই আলু ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া, গত সপ্তাহের মতই দেশি পেঁয়াজ ৬০ টাকা ও ভারতীয় পেঁয়াজ (বড় আকারের) ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
আগের মতই আদা মানভেদে ১২০ থেকে ২৮০ টাকা, রসুন দেশি ১০০ থেকে ১২০ টাকা, ভারতীয় রসুন ২২০ থেকে ২৩০ টাকা, দেশি মসুর ডাল ১৪০ টাকা, ভারতীয় মসুর ডাল (মোটা দানা) ১২০ টাকা, মুগ ডাল ১৮০ টাকা, ছোলা ১০০ থেকে ১১০ টাকা ও খেসারির ডাল ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
সাত তলা বাজারের রিপা জেনারেল স্টোরের বিক্রেতা ফারুক হোসেন বলেন, “সব ধরনের মশলাজাত পণ্যের দাম স্থিতিশীল আছে। সরবরাহেও কোনো টান নেই।”