বিজিএমই সভাপতি বলেন, “এই পরিস্থিতিতে নতুন মজুরি কাঠামো কী ধরনের প্রভাব ফেলে আমরা সেটাই দেখার চেষ্টা করছি।”
Published : 10 Nov 2023, 12:43 AM
যুদ্ধ ও উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে পোশাকের চাহিদা কমার কারণে পশ্চিমা বিশ্বে রপ্তানি কমার তথ্য জানিয়েছে তৈরি পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ।
তবে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী চীন ও ভিয়েতনামের তুলনায় বাংলাদেশের অবস্থান কিছুটা হলেও ভালো। এই দুটি দেশের রপ্তানি কমেছে বাংলাদেশের তুলনায় বেশি।
শ্রমিকদের বেতন বাড়ানোর সময় এই চিত্র ‘স্বস্তি দিচ্ছে না’ জানিয়ে পোশাকের মূল্য নিয়ে ‘দরকষাকষির ক্ষেত্রে’ আরও সচেতন হওয়ার তাগিদ দিয়েছেন সংগঠনটির সভাপতি ফারুক হাসান। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে পণ্যের দর নির্ধারণের অনুরোধও করেছেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের ইউনাইটেড স্টেটস অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেল বা অটেক্সার তথ্য বিশ্লেষণ করে বিজিএমইএ রপ্তানি কমে যাওয়ার এই তথ্য জানায়।
সম্প্রতি অটেক্সা চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ের বিশ্ববাজার থেকে পোশাক আমদানি তথ্য প্রকাশ করেছে।
তিন দেশের রপ্তানির তুলনা
অটেক্সা জানায়, চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক আমদানি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে ২২ দশমিক ৮১ শতাংশ।
গত বছর এই সময়ে যেখানে ৭৮ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলারের পোশাক কিনেছিল দেশটি, এবার তা কমে হয়েছে ৬০ দশমিক ৮২ বিলিয়ন ডলার।
এই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি ২৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ কমেছে। গত বছরের প্রথম ৯ মাসে রপ্তানি ছিল ৭ দশমিক ৫৩ বিলিয়ন ডলার, এবার হয়েছে ৫ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার।
এর মধ্য সবচেয়ে বাজে মাস গেছে অগাস্ট ও সেপ্টেম্বরে। এই দুই মাসে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি কমেছে যথাক্রমে ৩৩ দশমিক ৭১ শতাংশ ও ৩৪ দশমিক ৭২ শতাংশ।
অগাস্ট মাসে ইউরোপীয় ইউনিয়নভূক্ত দেশগুলোতেও পোশাক রপ্তানি ২১ দশমিক ২৯ শতাংশ কমেছে বলেও জানিয়েছে বিজিএমইএ।
তবে এই চিত্র কেবল বাংলাদেশের নয়।
চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি ২৮ দশমিক ১৩ শতাংশ কমেছে।
গত বছরের এই সময়ে রপ্তানি ছিল ১৭ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলার। সেখানে চলতি বছর তা হয়েছে ১২ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার।
এই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পোশাক রপ্তানিকারক দেশে ভিয়েতনামের রপ্তানি কমেছে ২৪ দশমিক ১৩ শতাংশ।
গত বছরের প্রথম ৯ মাসে যুক্তরাষ্ট্রে ভিয়েতনামে ১৪ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলারের পোশাক পাঠায়। চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে তা নেমে আসে ১১ দশমিক ০৬ বিলিয়েন ডলারে।
বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান জানান, “সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রপ্তানি হওয়া পোশাক পণ্যের দামও কমতে শুরু করেছে যেটা শিল্পের জন্য নতুন শঙ্কা তৈরি করছে।”
সার্বিকভাবে বিশ্ববাজার থেকে অগাস্টে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হওয়া পোশাকের দর ৮ দশমিক ০৩ শতাংশ কমেছে।
ওই মাসে চীন থেকে রপ্তানি হওয়া পণ্যের দর কমেছে ১৬ দশমিক ৪৩ শতাংশ, বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া পণ্যের দর কমেছে ৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সেপ্টেম্বর মাসেও চীনা পোশাকের দর ২১ দশমিক ৬৬ শতাংশ এবং বাংলাদেশি পোশাকের দর ৪ দশমিক ৪৫ শতাংশ কমেছিল।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, “যখন পোশাকের উৎপাদন খরচ বাড়ছে এবং আমরা শ্রমিকের মজুরি বাড়াতে চলছি এই সময়ে রপ্তানি বাজারের বিপরীত চিত্র আমাদের মোটেই স্বস্তি দিচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে নতুন মজুরি কাঠামো কী ধরনের প্রভাব ফেলে আমরা সেটাই দেখার চেষ্টা করছি।”
বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো ইপিবি থেকে অক্টোবর মাসের রপ্তানির যে পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে, ওই মাসে পোশাক রপ্তানি আগের বছরের একই মাসের তুলনায় ১৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ কমেছে।