নতুন পরিচালনা পর্ষদে কে কোন পদে থাকছেন, তা জানা যাবে ১৯ মার্চ।
Published : 10 Mar 2024, 09:33 AM
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকরক সমিতির (বিজিএমইএ) নির্বাচনে পূর্ণ প্যানেলে জয় পেয়েছে সম্মিলিত পরিষদ।
দ্বিবার্ষিক এই নির্বাচনে ঢাকা ও চট্টগ্রামের মোট ৩৫টি পরিচালক পদের বিপরীতে প্রার্থী ছিলেন ৭০ জন। তাদের মধ্যে ঢাকা থেকে নির্বাচিত হয়েছেন ২৬ জন এবং চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে নির্বাচিত হয়েছেন নয়জন। ৩৫টি পদের সবকটিতেই জয়ী হয়েছেন সম্মিলিত পরিষদের প্রার্থীরা।
এই প্যানেলের নেতৃত্বে থাকা বিজিএমইএর বর্তমান জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি এবং সেহা ডিজাইন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম মান্নান কচি সর্বোচ্চ ১৫১০ ভোট পেয়ে পরিচালক নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি ঢাকা মহানগর (উত্তর) আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
তার ঠিক পরের অবস্থানে আছেন একই প্যানেলের বর্তমান পর্ষদের আরেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম। তিনি ১ হাজার ৪৮৬ ভোট পেয়ে পরিচালক হয়েছেন। তিনি ক্লাসিক ফ্যাশন কনসেপ্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
আর চট্টগ্রাম অঞ্চলে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৪২২ ভোট পেয়ে পরিচালক নির্বাচিত হয়েছেন এইচকেসি অ্যাপারালস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাকিবুল আলম চৌধুরী।
নির্বাচনে ‘সম্মিলিত পরিষদ’ এর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিল ‘ফোরাম’ প্যানেল। ফোরামের নেতৃত্ব দেন সুরমা গার্মেন্টসের পরিচালক ফয়সাল সামাদ। তিনি বর্তমান কমিটির পরিচালক। একবার সহ-সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন।
শনিবার সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএ কমপ্লেক্সে ঢাকা অঞ্চলের আর চিটাগাং এর খুলশীর স্থানীয় অফিসে পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচনে বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ চলে।
পরে মধ্যরাতে ভোট গণনা শেষে ফল ঘোষণা করেন নির্বাচনী বোর্ডের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলামিন।
তিনি জানান, এ নির্বাচনে মোট ২ হাজার ৪৯৬ জন ভোটারের মধ্যে ভোট দিয়েছেন ২ হাজার ২২৬ জন। ভোটের হার ৮৯ দশমিক ১৮ শতাংশ।
ঢাকায় ২ হাজার ৩২ ভোটারের মধ্যে ভোট দিয়েছেন এক হাজার ৮৩৯ জন বা ৯০ দশমিক ৫০ শতাংশ। আর চট্টগ্রামে ৪৬৪ ভোটের মধ্যে ৩৮৭ জন ভোট দিয়েছেন। সেখানে ভোটের হার ৮৩ দশমিক ৪০ শতাংশ।
ঢাকা থেকে নির্বাচিতরা হলেন– শহীদুল্লাহ আজিম, এসএম মান্নান (কচি), আসিফ আশরাফ, আব্দুল্লাহ হিল রাকিব, মো. ইমরানুর রহমান, আরশাদ জামাল (দীপু), মিরান আলি, শোভন ইসলাম, হারুন অর রশিদ, মোহাম্মদ সোহেল সাদাত, মো. আশিকুর রহমান (তুহিন), আনোয়ার হোসাইন (মানিক), শামস মাহমুদ, মেসবাহ উদ্দিন খান, খন্দকার রাফিকুল ইসলাম, মো. নাসির উদ্দিন, রাজিব চৌধুরী, আবরার হোসাইন সায়েম, মো. শাহাদাত হোসেন, মো. জাকির হোসাইন, নুসরাত বারি আশা, মো. মহিউদ্দিন রুবেল, শেহরিন সালাম ওইশি, মো. নুরুল ইসলাম, সাইফুদ্দিন সিদ্দিক সাগর, মো. রাসেল আলম (মিরু)।
চট্টগ্রাম থেকে নির্বাচিতরা হলেন– রাকিবুল আলম চৌধুরী, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, মোহাম্মদ মুসা, আমজাদ হোসাইন চৌধুরী, এম আহসানুল হক, মোস্তাফা সরওয়ার রিয়াদ, মোহাম্মদ রাকিব আল নাসের, গাজি মো. শহিদ উল্লাহ, মো. আবসার হোসাইন।
ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত পরিচালকদের মধ্য থেকে সংগঠনের সভাপতি, প্রথম সহ-সভাপতি, সিনিয়র সহ-সভাপতি এবং দুজন সহ-সভাপতির নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা নেওয়া হবে। তাদের মনোনয়ন বাছাই শেষে ১৯ মার্চ চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করবে কমিশন।
নেতা নির্বাচন নিয়ে আপত্তি থাকলে আপিলের সুযোগও আছে। সেক্ষেত্রে আপিল নিষ্পত্তির পর ২৮ মার্চ চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করা হবে, যারা ২০২৪-২৬ মেয়াদের জন্য দায়িত্ব নেবেন।
এবারের নির্বাচনে ভোটের তালিকা নিয়ে কম জলঘোলা হয়নি। বিষয়টি মাঠেও উত্তাপ ছড়িয়েছে বেশ।
গত জানুয়ারি মাসের তৃতীয় সপ্তাহে ২ হাজার ৫৬৩ জনের প্রাথমিক ভোটার তালিকা প্রকাশিত হওয়ার পর ৪২৯ জনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আপিল বোর্ডে আবেদন করেন ফোরামের প্যানেল লিডার ফয়সাল সামাদ।
তিনি অভিযোগ করেন, এই ভোটারদের আয়কর প্রদানের তথ্য নেই। পরে বিষয়টি নিয়ে আপিল বোর্ড শুনানি করে। তাতে ৬৭ জন ভোটার বাদ পড়েন।
২০১৩ সালে সাধারণ সদস্যদের সরাসরি ভোটে বিজিএমইএর পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচিত হয়েছিল। পরেরবার সম্মিলিত পরিষদ ও ফোরাম দুই মেয়াদের জন্য সমঝোতা করে। সেই সমঝোতার প্রথম দফায় অর্থাৎ ২০১৫ সালের ২২ সেপ্টেম্বরে সম্মিলিত পরিষদের সিদ্দিকুর রহমানের নেতৃত্বে কমিটি হয়।
সেই কমিটি নানা অজুহাত দেখিয়ে ৪৩ মাস দায়িত্ব পালন করে। পরের মেয়াদে সমঝোতার কমিটি করার উদ্যোগ নেয় দুই জোট। শেষ পর্যন্ত স্বাধীনতা পরিষদ নামে একটি খণ্ডিত প্যানেলে প্রার্থী দেওয়া হয়। সে কারণে ঢাকায় নিয়ম রক্ষার ভোট হয়েছিল। তখন সভাপতি হয়েছিলেন রুবানা হক।
এরপর সবশেষ বিজিএমইএ নির্বাচন হয় ২০২১ সালে। ওই ভোটে ঢাকা ও চট্টগ্রামের ৩৫ পরিচালকের ২৪টিতে জয়ী পায় সম্মিলিত পরিষদ। সভাপতি নির্বাচিত হন ফারুক হাসান। আর ওই নির্বাচনে এবিএম সামছুদ্দিনের নেতৃত্বাধীন ফোরাম পায় ১১টি পরিচালক পদ।
২০২৩ সালের এপ্রিলে এই পরিচালনা পরিষদের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও দুই দফায় তারা এক বছর সময় বাড়িয়ে নেয়। ২০২৩ সালের ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪-২৬ মেয়াদে বিজিএমইএ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়।
তার আগে ৪ ডিসেম্বর বিজিএমইএর নির্বাচনি বোর্ড গঠিত হয়। বোর্ডের চেয়ারম্যান হন বিটিএমএ’র সাবেক সভাপতি জাহাঙ্গীর আলামিন। অন্য সদস্যরা হলেন এফবিসিসিআই’র সহ-সভাপতি এবং ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইকাব) সভাপতি শমী কায়সার ও ইকাবের সাবেক সভাপতি এ এস এম নাঈম।
সেদিনের সভায় বিজিএমইএ একটি আপিল বোর্ডও গঠন করে। এ বোর্ডের চেয়ারম্যান হন এমসিসিআইর সভাপতি কামরান টি রহমান। অন্য সদস্যরা হলেন, এফবিসিসিআইর সহ-সভাপতি খায়রুল হুদা চপল ও পরিচালক নিজামুদ্দিন রাজেশ।