কাতারের আরও এলএনজি পেতে নতুন চুক্তির প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর

মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি থেকে আরও জ্বালানি পেতে নতুন চুক্তির প্রস্তাবে সহযোগিতা আশ্বাস দিয়েছেন কাতারের আমিরের।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 May 2023, 06:18 AM
Updated : 24 May 2023, 06:18 AM

কাতারের তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) কিনতে বিদ্যমান চুক্তির মধ্যেই আরও বেশি পরিমাণে জ্বালানি পেতে নতুন চুক্তি করার ওপর জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা; কাতারের পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে সহযোগিতার আশ্বাস মিলেছে।

বাসস জানিয়েছে, মঙ্গলবার কাতারের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আব্দুল রহমান বিন জসিম আল থানির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন শেখ হাসিনা। সেসময় তিনি বাংলাদেশের জন্য আরও এলএনজি সরবরাহে অবিলম্বে নতুন চুক্তি সইয়ের কথা বলেন।

বাংলাদেশের সরকার প্রধান বলেন, “বাংলাদেশ কাতার থেকে বিপুল পরিমাণ জ্বালানি ক্রয় করে। আমরা চাই আপনি জ্বালানি দিয়ে আমাদের সহায়তা করুন।”

জবাবে মোহাম্মদ বিন আব্দুল রহমান প্রতিশ্রুতি দেন, কাতার বাংলাদেশের জন্য ‘যতটা সম্ভব’ করবে।

দোহার র‌্যাফেলস টাওয়ারে দুই দেশের সরকার প্রধানের এ বৈঠক হয়। পরে বৈঠকের বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন।

তিনি জানান, কাতার থেকে এলএনজি আমদানির জন্য ২০১৭ সালে স্বাক্ষরিত ১৫ বছরের চুক্তিটি ২০৩২ সাল পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। তবে ২০২৫ সালের পরে বেশি পরিমাণে জ্বালানি পেতে একটি নতুন চুক্তি সইয়ের কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মোমেন বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাতার থেকে আরও বেশি পরিমাণে জ্বালানি সংগ্রহের জন্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নতুন চুক্তি স্বাক্ষর করতে বলেছেন। দরদাম সংক্রান্ত সমস্যা ঠিকঠাক করে অবিলম্বে চুক্তিতে সই করতে বলেছেন তিনি।

“তারা (কাতার) প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে, চুক্তি স্বাক্ষরের সময় কাতারের পক্ষে যতদূর সম্ভব সব ধরনের ছাড় দেওয়ার কথা বিবেচনা করবে।”

দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে কাতারের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও জোরদারে আগ্রহ ‍প্রকাশ করেছেন বলে ব্রিফিংয়ে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন।

তিনি বলেন, “বৈঠকে কাতারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা (কাতার) বাংলাদেশের প্রকৃত বন্ধু এবং বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরও এগিয়ে নিতে চান। বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা আনার জন্য শেখ হাসিনার প্রশংসা করেন কাতারের প্রধানমন্ত্রী।”

“২০২৩ সালের ফিফা বিশ্বকাপের পর কাতারে বাংলাদেশি শ্রমিকদের চাকরি হারানোর আশঙ্কা সম্পর্কে কাতারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশি কর্মীরা তাদের সম্পদ ও বন্ধু। কাতার তাদের যতটা সম্ভব তাদের দেশে রাখবে।“

কাতারের জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী সাদ বিন শেরিদা আল কাবিও পরে আলাদাভাবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করেন।

তৃতীয় কাতার অর্থনৈতিক ফোরামের সাইডলাইনে প্রধানমন্ত্রীর অবস্থানস্থল র‌্যাফেলস টাওয়ারে তার সঙ্গে রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট পল কাগামেও সাক্ষাত করেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট শেখ হাসিনাকে বলেন, তিনি সবসময় বাংলাদেশের উন্নয়নের গল্প শোনেন। বাংলাদেশকে নিয়ে তিনি গর্ববোধ করেন।

কাগামে বলেন, “বাংলাদেশ একটি অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ দেশ এবং আপনি (শেখ হাসিনা) খুব ভালোভাবে দেশ পরিচালনা করছেন। আমি এটা দেখতে চাই।”

কাগামে বাংলাদেশ সফরের আগ্রহ প্রকাশ করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তাকে আমন্ত্রণ জানান।

বাংলাদেশ ও রুয়ান্ডার মধ্যে সম্পর্কের সেতু তৈরিতে বিমান যোগাযোগ স্থাপনের আগ্রহ প্রকাশ করেন পল কাগামে। সম্প্রতি রুয়ান্ডায় একটি বাংলাদেশি কোম্পানির ফার্মাসিউটিক্যাল কারখানা খোলার কথা উল্লেখ করে আরও বেশি বাংলাদেশিদের বিনিয়োগকারীদের আমন্ত্রণ জানান তিনি।

শেখ হাসিনাও পল কাগামের প্রশংসা করে বলেন, “তার ভালো নেতৃত্বের কারণে আফ্রিকায় রুয়ান্ডা খুবই ভালো অবস্থানে রয়েছে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ সমস্যা তৈরি করেছে, যা বাংলাদেশ ও রুয়ান্ডার মতো দেশগুলোকে সতর্কবার্তা দিয়েছে।

“আমরা যদি একে অপরকে সহযোগিতা করি, তবে আমরা এই ধরনের পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে পারব”, বলেন তিনি।

শেখ হাসিনার বক্তব্যের প্রশংসা করে কাগামে বলেন, “সহযোগিতা জোরদার করার এখনই সময়।”